পেট্রোলের ‘আগুন’ নেভার আগে ডিজেল-রান্নার গ্যাসে হাত দিয়ে হাত পোড়াতে চাইছে না মনমোহন সিংহের সরকার।
পেট্রোলের দাম লিটারে সাড়ে সাত টাকা বাড়ানোর পরে বিরোধীদের সঙ্গে তৃণমূল, ডিএমকে-র মতো শরিকরাও যখন প্রতিবাদে রাস্তায় নেমেছে, তখন কেন্দ্রীয় সরকার আর কোনও নতুন কোনও ঝুঁকি নিতে চাইছে না। তাই পেট্রোলিয়াম মন্ত্রকের তরফে বারবার ডিজেল ও রান্নার গ্যাসের দাম বাড়ানোর জন্য সওয়াল করা হলেও এখনই সেই পথে হাঁটতে নারাজ কেন্দ্র। আজ মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে মন্ত্রিগোষ্ঠীর গোষ্ঠীর বৈঠকের পরে পেট্রোলিয়াম মন্ত্রী এস জয়পাল রেড্ডি নিজেই বলেন, “এখনই ডিজেল, রান্নার গ্যাস ও কেরোসিনের দামে হাত দেওয়া হচ্ছে না।”
রাজনৈতিক ঝুঁকি নিতে সরকারের অনীহার প্রভাব যে রাষ্ট্রায়ত্ত তেল বিপণন সংস্থাগুলির উপরেই পড়ছে, আজ তার প্রমাণও মেলে। সদ্য শেষ হওয়া অর্থবর্ষে ইন্ডিয়ান অয়েলের লাভের পরিমাণ নেমে এসেছে ৩ হাজার ৯৫৫ কোটি টাকায়। যেখানে আগের বছর লাভ হয়েছিল প্রায় সাড়ে সাত হাজার কোটি টাকা। লাভের অঙ্ক কমার জন্য কার্যত কেন্দ্রীয় সরকারকেই দায়ী করেছে ইন্ডিয়ান অয়েল। সংস্থার কর্তাদের বক্তব্য, কেন্দ্র এক দিকে পেট্রোলের দাম বাড়ানোর সবুজ-সঙ্কেত দেয়নি। আবার দেরি করে ক্ষতিপূরণ মেটানোয় সুদ বাবদ প্রায় ৩ হাজার কোটি খরচ হয়েছে। যার ফলে এই রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার ‘মহারত্ন’ তকমা নিয়ে প্রশ্ন উঠে গিয়েছে। ইন্ডিয়ান অয়েলের চেয়ারম্যান আর এস বুটোলা বলেন, “শুধু মহারত্ন তকমা নয়, লাভ কম হলে নতুন পরিকাঠামোয় বিনিয়োগের উৎসও কমে।”
কেন্দ্র চাইছে, শরিকদের ক্ষোভ সামলাতে আগে পেট্রোলের দাম কিছুটা কমুক। তার পর ডিজেল-রান্নার গ্যাস নিয়ে ভাবা যাবে। পেট্রোলের দাম খাতায়-কলমে সরকারি নিয়ন্ত্রণমুক্ত হওয়ায় তার দাম বাড়ানোর দায় তেল সংস্থাগুলির উপর চাপিয়ে দেয় সরকার। কিন্তু ডিজেল-রান্নার গ্যাসের দাম ঠিক করার দায় সরকারের উপরেই। অর্থমন্ত্রীর নেতৃত্বাধীন মন্ত্রিগোষ্ঠীই এ নিয়ে সিদ্ধান্ত নেয়। আজ রেড্ডি জানান, কবে মন্ত্রিগোষ্ঠীর বৈঠক হবে, তা ঠিক হয়নি। তার আগে পেট্রোলের দাম কিছুটা কমানোর সম্ভাবনা খতিয়ে দেখতে চাইছে পেট্রোলিয়াম মন্ত্রক। আজ ইন্ডিয়ান অয়েলের তরফে ফের ইঙ্গিত মিলেছে, শীঘ্রই পেট্রোলের দাম লিটার প্রতি দেড় টাকা পর্যন্ত কমানো হতে পারে। বুটোলা বলেন, “আশা করছি, আন্তর্জাতিক বাজারে অশোধিত তেলের দাম কমবে। তা কমলে এবং ডলারের তুলনায় টাকার আর অবমূল্যায়ন না হলে আমজনতাকে সুরাহা দিতে চেষ্টা করব।” তাঁর ব্যাখ্যা, অশোধিত তেলের দাম ডলারের হিসেবে কমলে পেট্রোপণ্যের দাম যতটা কমে, ডলারের তুলনায় টাকার দাম কমলে পেট্রোপণ্যের দাম তার থেকে অনেক বেশি হারে বাড়ে। কাজেই টাকার অবমূল্যায়ন বেশি গুরুত্বপূর্ণ।
তেল সংস্থাগুলির দিতে তাকিয়ে থাকার পাশাপাশি রাজ্যগুলিকেও করের হার কমাতে চিঠি লিখে আবেদন জানাতে চলেছেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী প্রণব মুখোপাধ্যায়। এআইসিসি-র তরফে ইতিমধ্যেই কংগ্রেস শাসিত রাজ্যগুলির কাছে এ বিষয়ে নির্দেশ গিয়েছে। কেরল ও উত্তরাখণ্ডের পর আজ দিল্লিও পেট্রোলের উপর যুক্তমূল্য করের হার কমিয়েছে। যার ফলে পেট্রোলের দাম দিল্লিতে লিটার প্রতি ১ টাকা ২৬ পয়সা কমবে। অন্যান্য রাজ্যকেও কেন্দ্রের তরফে আবেদন জানানো হবে, যাতে তারা করের হার কমায়। রাজ্যগুলি সাধারণত তেলের দামের উপর শতকরা হিসেবে কর বসায়। ফলে দাম বাড়লে করের পরিমাণও বাড়ে। কেন্দ্র চাইছে, রাজ্যগুলি লিটার প্রতি কর নির্ধারণ করুক। তাতে তেলের দাম বাড়লেও কর একই থাকবে।
ডিজেলের দাম এখনই না বাড়লেও ডিজেল চালিত গাড়ির উপরে উৎপাদন শুল্ক বাড়ানোর কথা ভাবছে কেন্দ্র। কারণ পেট্রেলের দাম বাড়ানোয় অনেকেই ডিজেল চালিত গাড়ির দিকে ঝুঁকছেন। ইন্ডিয়ান অয়েলের হিসেবও বলছে, গত অর্থবর্ষে পেট্রোলের ব্যবহার যে পরিমাণে বেড়েছে, তার থেকে অনেক বেশি বেড়েছে ডিজেলের ব্যবহার। কৃষি ক্ষেত্র এবং ডিজেল চালিত দামি এসইউভি গাড়ির জন্য দু’রকম ডিজেলের দামের প্রস্তাব থাকলেও তার বিরোধী পেট্রোলিয়াম মন্ত্রী। তাঁর যুক্তি, এতে কালোবাজারি বাড়বে। বরং ডিজেল চালিত গাড়ির উপরে কর বসানোর পক্ষপাতী তিনি। যদিও শিল্পমহল এর বিপক্ষে। ডিজেল চালিত গাড়ি থেকে দূষণের পরিমাণ কম বলে পরিবেশ সংগঠনগুলিও এ ব্যাপারে কেন্দ্রের উপর চাপ তৈরি করতে চাইছে। |