রোদের ছোঁয়া এড়িয়ে বিপর্যয়
শহুরে সমাজে সুখের অসুখেও শরীর-মন ভঙ্গুর
বাড়ির বাতানুকূল ঘর থেকে বেরিয়ে সোজা গাড়িতে। উঠেই এসি চালিয়ে দিলেন। আর অফিসের পোর্টিকো পেরিয়ে গাড়ি থামল এক্কেবারে দরজার সামনে। ঢুকেই ফের শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত আরামদায়ক পরিবেশ। দিনভর সেখানে কাটিয়ে বেরোলেন যখন, সন্ধে নেমে গিয়েছে!
অর্থাৎ সারা দিনে জ্বালা ধরানো রোদের আঁচটুকুও টের পেতে হল না! কি শান্তি!
কিন্তু এমন ‘সুখের’ জীবন কাটাচ্ছেন যাঁরা, তাঁদের জন্য এ বার দুঃসংবাদ। ডাক্তারেরা বলছেন, গায়ে রোদ না-লাগলে ভিটামিন ডি’র অভাব অবধারিত। যার জেরে রিকেট, হরেক ধরনের বাত, মানসিক অবসাদ, হার্টের অসুখ, নানান সংক্রমণের পাশাপাশি ক্যানসারের মতো মারণ রোগের আশঙ্কা। দেশি-বিদেশি সায়েন্স জার্নালে এ নিয়ে আলোচনার ঝড় বয়ে যাচ্ছে। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের পরামর্শ: অত্যধিক রোদে ঘোরার দরকার নেই। তবে দিনের অন্তত কিছুটা সময়ে শরীরে সরাসরি সূর্যালোক লাগানো প্রয়োজন। নচেৎ আগাগোড়া একটা নড়বড়ে শরীর-মন বয়ে বেড়াতে হবে।
বস্তুত ভিটামিন ডি’র অভাবে শারীরিক-মানসিক ক্লান্তি এক ধাক্কায় অনেকটা বেড়ে যায়। দীর্ঘ দিন পরে হার্টের সমস্যা, কিডনির অসুখ, এমনকী স্ট্রোকও হতে পারে বলে বিশেষজ্ঞেরা হুঁশিয়ারি দিচ্ছেন। দেশি-বিদেশি বিভিন্ন গবেষণাপত্র অনুযায়ী, স্তন, কোলন, ফুসফুস, জরায়ু, প্রস্টেট ক্যানসারের পিছনেও ভিটামিন ডি’র ঘাটতি অন্যতম কারণ। ক্যানসার-চিকিৎসক গৌতম মুখোপাধ্যায়ের কথায়, “সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, ক্যানসার রোগীদের বড় অংশের মধ্যে ভিটামিন ডি’র ঘাটতি রয়েছে। অথচ এ ব্যাপারে সাধারণ মানুষের মধ্যে ন্যূনতম সচেতনতাও গড়ে ওঠেনি। অনেকেই বুঝছেন না যে, অতিরিক্ত সুখী হতে গিয়ে তাঁরা অসুখকে ডেকে আনছেন।”
এবং শুধু বড় অফিসের একজিকিউটিভ নন, শহরের সমস্ত স্তরের মানুষই রয়েছেন এই ঝুঁকির আওতায়। সমাজতাত্ত্বিকদের মতে, এই ‘সুখের অসুখের’ একটা সামাজিক প্রেক্ষাপট রয়েছে। সামর্থ্য থাকলে মা-বাবা এখন সন্তানকে এমন স্কুলে পড়াতে চাইছেন, যেখানে স্কুল-বাসও বাতানুকূল! ঘোর গরমে বাড়িতে প্রায় সর্বক্ষণ এসি চলছে। মাঠে-রাস্তায় বেরিয়ে খেলাধুলোর পাট তো নেই-ই, খুব নাচার না-হলে সন্ধে ইস্তক চার দেওয়ালের মধ্যেই গুজরান। বাড়ির মেয়ে-বৌদের দুপুর-বিকেলে ছাদে বসে গল্প করার রেওয়াজও প্রায় ইতিহাস। তাই স্কুল-পড়ুয়াদের পাশাপাশি গৃহবধূরাও রয়েছেন ঝুঁকির তালিকায় গোড়ার দিকে। সাবেক বাজার-হাট ছেড়ে আধুনিক ‘শপিং মলে’ ঢুকে কেনাকাটার অভ্যেসটিও গায়ে রোদ লাগার সুযোগ ছেঁটে দিয়েছে।
এবং এ সবেরই পরিণতি হচ্ছে ভয়ঙ্কর। কী রকম?
রিউম্যাটোলজিস্ট অলোকেন্দু ঘোষ জানাচ্ছেন, দেহে ভিটামিন ডি’র ঘাটতি হলে শরীরের হাড় ভঙ্গুর হয়ে যাওয়া থেকে শুরু করে স্ট্রোক, যক্ষ্মা, ক্যানসার সবই হচ্ছে। তবু সচেতনতা গড়ে উঠছে না। অলোকেন্দুবাবুর কথায়, “এ দেশের ৮০% মানুষের শরীরেই ভিটামিন ডি’র ঘাটতি। আমরা হামেশা এমন সব রোগী পাচ্ছি, যাঁদের বয়স খুবই কম, অথচ হাঁটচলায় সমস্যা। এমনকী, বিছানা থেকেও ধরে তুলতে হয়! উপরন্তু পড়ে গেলেই হাড় ভেঙে যাচ্ছে! এঁরা সকলেই ভিটামিন ডি’র অভাবে ভুগছেন।”
প্রতিকারের উপায় কী?
অলোকেন্দুবাবুর পরামর্শ, ‘‘ঠিকঠাক খাওয়া-দাওয়ার পাশাপাশি সকাল ন’টা থেকে বিকেল চারটের মধ্যে অন্তত কুড়ি মিনিট রোদে থাকতে হবে। সম্ভব হলে রোজ। আর খাদ্য-তালিকায় দুধ, ফল, ডিম রাখতে হবে। পারলে সামুদ্রিক মাছও।”
তবে কিছুটা ভিন্ন মতও রয়েছে। যেমন, ভিটামিন ডি’র ঘাটতি মেটাতে গিয়ে বেশি রোদে থাকলে তা হিতে বিপরীত হতে পারে বলে মনে করছেন চর্মরোগের চিকিৎসক সঞ্জয় ঘোষ। তাঁর দাবি, “মুখে চড়া রোদ লাগানোর কোনও দরকার নেই। বরং সপ্তাহে দু’-তিন দিন সকালের হালকা আলো অন্তত পনেরো মিনিট হাতে-পায়ে লাগান। সেটাই অনেক ফল দেবে।” রোদ বাঁচাতে যে সানস্ক্রিন ক্রিম বা লোশন ব্যবহারের পরামর্শ দেওয়া হয়, তা কতটা জরুরি?
সঞ্জয়বাবুর বক্তব্য, “ভিটামিন ডি শরীরের পক্ষে অত্যন্ত প্রয়োজনীয়, তা ঠিক। কিন্তু অতিরিক্ত রোদ লাগলে ক্ষতিও হতে পারে। তাই ভারসাম্য বজায় রাখাটাই আসল কথা। সানস্ক্রিন লাগালে ভিটামিন ডি কমে যায় না। বরং না-লাগালেই ত্বকের অনেক জটিল রোগ হতে পারে।”

ডাক্তারদের বদলি নিয়ে কমিটি
সরকারি চিকিৎসকদের বদলি প্রক্রিয়ায় আরও স্বচ্ছতা আনতে একটি কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত নিল স্বাস্থ্য দফতর। সরকারি হাসপাতালের কাজকর্ম খতিয়ে দেখতে গঠিত বিশেষজ্ঞ কমিটির সঙ্গে শনিবার স্বাস্থ্যভবনে বৈঠকে বসেছিলেন স্বাস্থ্য দফতরের কর্তারা। স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর, ‘ভাল’, ‘খারাপ’ জায়গায় বদলি নিয়ে সরকারি চিকিৎসকদের মধ্যে মন কষাকষি এবং ক্ষোভ অনেক দিনের। তাই প্রত্যেক সরকারি চিকিৎসকের কর্মকালে বদলির জায়গার মধ্যে যেন একটা সামঞ্জস্য থাকে, তা নজরদারি করতেই এই কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। গত কয়েক সপ্তাহ কলকাতার মেডিক্যাল কলেজগুলি ঘুরে বিশেষজ্ঞ কমিটি একটি রিপোর্ট তৈরি করেছে। হাসপাতালের পরিষেবা বাড়াতে সরকারের কী কী পদক্ষেপ করা উচিত, তার সুপারিশও ওই রিপোর্টে রয়েছে। এ দিন ওই রিপোর্টটিও স্বাস্থ্য-সচিব সঞ্জয় মিত্রের হাতে তুলে দেওয়া হয়।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.