একই দিনে কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানে দু’জায়গায় সিপিএম নিয়ে দু’রকম কথা বললেন রাজ্যের খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক। ইদানীং জ্যোতিপ্রিয় সিপিএম সম্পর্কে মুখ খুললেই তা নিয়ে রাজ্য-রাজনীতিতে আলোড়ন পড়ে। এদিন তিনি প্রথমে নিজের নির্বাচনী কেন্দ্রের অন্তর্গত হাবরা এবং তারপর দলীয় সতীর্থ অভিনেতা-বিধায়ক চিরঞ্জিতের কেন্দ্র বারাসতে যা বলেছেন, তাতে তাঁকে নিয়ে তৃণমূল কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে আলোড়ন পড়ার সম্ভাবনা।
শনিবার নিজের নির্বাচনী কেন্দ্র হাবরায় ‘উন্নয়নের’ প্রশ্নে সিপিএম-সহ রাজনৈতিক দলগুলির মধ্যে ‘বাছবিচার’ না-করারই পরামর্শ দিয়েছেন জ্যোতিপ্রিয়। কিন্তু বারাসতে বলেছেন, সিপিএম ‘কেউটে সাপের’ মতো। ওদের ‘মুখ দেখলে দিন খারাপ যাবে’। বারাসতের বিধায়ক চিরঞ্জিৎ জানিয়েছেন, জ্যোতিপ্রিয়র বক্তব্য তাঁর ‘ব্যক্তিগত’ মতামত। কিন্তু দলের একাধিক নেতা-কর্মীর মতে, নিজের কেন্দ্রে ‘উন্নয়নে’র প্রশ্নে ‘উদার’ ভাবমূর্তি তৈরি করে খাদ্যমন্ত্রী অন্য কেন্দ্রে ‘সঙ্কীর্ণতা’র রাজনীতি ছড়িয়ে দিতে চাইছেন।
হাবরা-১ পঞ্চায়েত সমিতির অনুষ্ঠানে এসে এ দিন জ্যোতিপ্রিয় যা বলেছেন, সরকারে আসীন মন্ত্রীর পক্ষে সেটা বলাই সমীচীন। সকালে তিনি বলেছিলেন, “সকলে মিলে কাজ করুন। উন্নয়নের প্রশ্নে কোনও বাছবিচার নেই। কে সিপিএম, কে তৃণমূল, কে কংগ্রেস, কে আরএসপি, কে ফরওয়ার্ড ব্লক এটা বড় কথা নয়। সবচেয়ে বড় পরিচয় সকলেই মানুষ। উন্নয়ন হচ্ছে সবচেয়ে বড় স্লোগান।” আবার তার কয়েকঘন্টা পরেই বারাসতের চাঁপাডালিতে দলের উত্তর ২৪ পরগনা সংখ্যালঘু সেলের জেলা সম্মেলনে গিয়ে জ্যোতিপ্রিয় বলেছেন, “সিপিএম কেউটে সাপের মতো। ওরা সুযোগ পেলেই ছোবল মারে। ওদের মুখ দেখবেন না। দিন খারাপ যাবে। পঞ্চায়েত নির্বাচনে ওদের পুঁতে দিন। রাজনৈতিক ভাবে মোকাবিলা করুন।”
মন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ মহল থেকে অবশ্য ব্যাখ্যা দেওয়া হয়েছে যে, প্রথমটি ছিল ‘প্রশাসনিক’ কর্মসূচি। দ্বিতীয়টি ‘রাজনৈতিক’। প্রশাসক হিসেবে উন্নয়নের প্রশ্নে মন্ত্রী যেমন সকলকে নিয়ে চলতে চেয়েছেন এবং ‘রাজধর্ম’ পালন করেছেন, তেমনই ‘রাজনীতিক’ হিসেবে তিনি সিপিএমকে সবচেয়ে বড় শত্রু বলে চিহ্নিত করেছেন। মন্ত্রী-ঘনিষ্ঠ এক নেতার কথায়, “রাজনৈতিক সম্মেলনে তো রাজনীতির কথাই বলতে হবে। বিশেষত, রঞ্চায়েত ভোটের আগে। তার সঙ্গে তো পঞ্চায়েতের উন্নয়নের কোনও সম্পর্ক নেই। রাজনীতির লড়াইয়ে জেতার পর যারাই জিতুক, তারা তো মিলেমিশেই কাজ করবে! মন্ত্রী তো সেটাই বলেছেন।”
তবে এর আগে বারদুয়েক হাবরাতেই জ্যোতিপ্রিয় দলীয় কর্মী-সমর্থকদের সিপিএমের সঙ্গে ‘সামাজিক সংস্রব’ না-রাখার পরামর্শ দিয়েছিলেন। সেই প্রেক্ষিতে এদিন তাঁর বক্তব্যে দলের একাংশ আবার খানিকটা বিস্মিত। যেখানে দলীয় জনপ্রতিনিধিদের উদ্দেশে মন্ত্রী বলেছেন, “জনপ্রতিনিধিদের উদ্ধত হলে হবে না। আমিই শেষ কথা, এই মনোভাব দেখালে চলবে না! শংসাপত্র দিতে গড়িমসি করা বা কাউকে দাঁড় করিয়ে রাখা চলবে না। মানুষ না থাকলে রাজনীতি করবেন কী করে?”
জ্যোতিপ্রিয় উত্তর ২৪ পরগনায় তৃণমূলের পর্যবেক্ষক হওয়ায় ঘণ্টা কয়েকের ব্যবধানে একই জেলার দু’জায়গায় দু’রকম মন্তব্য নিয়ে দলের কর্মী-সমর্থকদের একাংশ ‘বিভ্রান্ত’। চাঁপাডালির সম্মেলনের শেষে অবশ্য জ্যোতিপ্রিয় আবার দাবি করেন, “আমি হাবরায় সিপিএমের সঙ্গে একসঙ্গে কাজ করার কথা বলিনি। সিপিএম সম্পর্কে আগে যা বলেছি, এখনও একই কথা বলছি। সিপিএমের সঙ্গে আমি কখনও ঘর করতে পারব না।” হাবরা-১ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি তৃণমূলের জাকির হোসেন অবশ্য বলেছেন, “উন্নয়নের প্রশ্নে খাদ্যমন্ত্রী ভেদাভেদ না-রাখার কথাই বলেছেন।”
চাঁপাডালির সম্মেলনের শেষদিকে গিয়ে পৌঁছন স্থানীয় বিধায়ক চিরঞ্জিৎ। তত ক্ষণে জ্যোতিপ্রিয় বেরিয়ে গিয়েছেন। মন্ত্রীর বক্তব্য নিয়ে চিরঞ্জিৎ বিশদ মন্তব্য এড়িয়ে শুধু বলেন, “উনি যা বলেছেন, সেটা ওঁর মত।” জ্যোতিপ্রিয়র বক্তব্য নিয়ে মন্তব্য এড়িয়ে গিয়েছেন সম্মেলনে উপস্থিত তৃণমূলের জেলা সভাপতি নির্মল ঘোষও। |