আইপিএল ফাইভের ফাইনালে আজ অন্তত একটা জিনিস যে ঘটবে না, সে ব্যাপারে আমি পুরোপুরি আত্মবিশ্বাসী।
যে, গৌতম গম্ভীর টস জিতে চেন্নাইকে প্রথমে ব্যাট করতে পাঠাচ্ছে!
আমি অবশ্যই অবাক হয়েছি শেষ দু’টো প্লে-অফে মুম্বই আর দিল্লির টস জিতে সিএসকে-কে আগে ব্যাট করতে পাঠানোর ঘটনায়। বড় ম্যাচে, যেখানে খেলার গোড়ার দিকে কোনও দল একবার ছন্দ হারিয়ে ফেললে তার পক্ষে আর ঘুরে দাঁড়ানোর সুযোগ খুব কম, সে রকম ক্ষেত্রে সাধারণ নিয়ম হল, টস জিতে আগে ব্যাট করো। কিন্তু ভাজ্জি আর বীরুর মাথায় নির্ঘাত অন্য রকম কোনও গেমপ্ল্যান ছিল। যেটা অবশ্য বিপক্ষের কাছে সুবিধেরই হয়ে দাঁড়িয়েছিল। আমি নিশ্চিত, আজ মেগা ফাইনালে ধোনি টস জিতলেও আগে ব্যাটই করবে। কারণ, অনন্ত চাপের ম্যাচে কেউই রান তাড়া করার ঝুঁকি নিতে চাইবে না।
কেকেআর এবং সিএসকে দুটো টিমেরই আজকের ফাইনালের সঙ্গে প্রচুর সম্মান জড়িয়ে আছে। সিএসকে জিতলে আইপিএল চ্যাম্পিয়ন হওয়ার হ্যাটট্রিক করে ফেলবে। ভবিষ্যতে যে রেকর্ড ভাঙা অন্য ফ্র্যাঞ্চাইজিদের কাছে কঠিন। অন্য দিকে কেকেআরের সামনে প্রথম বার আইপিএল চ্যাম্পিয়ন হওয়ার সুযোগ। আর যে কোনও জিনিস প্রথম বার প্রাপ্তির চেষ্টা করাটা সব সময় বিরাট চাপ। সে জন্য আমি মনে করি না, ফাইনালে দু’টো দলের কেউই রান তাড়া করার চেষ্টায় যাবে বলে।
টিমের ভারসাম্যের দিক দিয়ে কলকাতা আর চেন্নাই দু’পক্ষই প্রায় সমান-সমান। যদিও আমার অনুভূতি বলছে কেকেআরে সুনীল নারিন থাকায় সামান্য হলেও কলকাতা নাইট রাইডার্স টিম বেশি ব্যালান্সড। এই জন্য নয় যে, নারিনের স্পিন খেলা অসম্ভব। যেটা হচ্ছে কী, মাত্র চার ওভারের ব্যাপার বলে ব্যাটসম্যানরা ওর বিরুদ্ধে পূর্ব-পরিকল্পিত শট খেলছে। আমরা দেখেছি রোহিত শর্মা হার্সেল গিবস ইডেনে নারিনের বিরুদ্ধে এই কাজটা করতে সফল হয়েছে। কিন্তু সেটা একটা ব্যতিক্রমী দিন। সাধারণ ভাবে নারিনের বোলিংয়ে প্রচুর বৈচিত্র। আর ওর লেংথ-লাইনও ভাল। যা এই ফর্ম্যাটের ক্রিকেটে ওকে প্রচুর সুযোগ দিচ্ছে।
|
নারিনের পাশাপাশি সাকিব, আবদুল্লা, ইউসুফ পাঠান এতগুলো স্পিনার কেকেআর শিবিরে থাকায় ফাইনালে আজ একটা ব্যাপার হবে। চিপকের উইকেট আমরা যতটা স্পিন বোলিং সহায়ক দেখতে অভ্যস্ত, তার চেয়ে অনেক বেশি সহজ, পাটা উইকেট হবে। যার ফলে দু’দলের স্পিনারদেরই ফাইনালের উইকেট পরীক্ষা নেবে।
দু’দলের ব্যাটিংয়ের বিচারে, বিশেষ করে শেষ দু’টো ম্যাচের নিরিখে চেন্নাইকে মনে হচ্ছে অনেকটা এগিয়ে। সিএসকে ব্যাটসম্যানদের মুম্বই আর দিল্লিই ছন্দে এনে দিয়েছিল। মুরলী বিজয়, হাসি আর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যেটা হল ধোনির ব্যাট দরকারের সময় জেগে উঠেছে। কেকেআর ব্যাটিং সেখানে যেন খানিকটা গম্ভীর-নির্ভর। তবে ইউসুফ, লক্ষ্মীরতন, দেবব্রত দাস এবং অবশ্যই কালিস আর ম্যাকালামও যথেষ্ট দক্ষ। এবং বিশেষ দিনে ম্যাচে বড় ভূমিকা নেওয়ার ক্ষমতা রাখে। এমন মহা গুরুত্বপূর্ণ দিনে কালিসের অভিজ্ঞতা আর ম্যাকালামের বড় শট নেওয়ার ক্ষমতা এই দু’টো ব্যাপারকে বড় হয়ে উঠতেই হবে।
বালাজির ফিট না থাকাটা কেকেআরের কাছে একটা চিন্তার বিষয়। টুর্নামেন্টে ও ভাল বল করেছে। তবে আমার সন্দেহ আছে, হ্যামস্ট্রিংয়ে চোট নিয়ে বালাজি ফাইনালে মাঠে নামতে পারবে বলে। সে ক্ষেত্রে প্রথম এগারোয় চার জন বিদেশি প্লেয়ারের কোটায় ব্রেট লি-কে কী ভাবে রাখা যায় সেটা কেকেআরকে ভেবে বের করতে হবে। কেকেআর ম্যানেজমেন্ট সমস্যাটা কী ভাবে সামলায় সেটা দেখাটা বেশ কৌতূহলের।
ফাইনালটা দুই অধিনায়কের মধ্যেও একটা বিরাট লড়াই। এবং খুব আন্তরিক ভাবেই বলছি, গৌতম গম্ভীর এই টুর্নামেন্টে ওর টিমকে যে ভাবে বিভিন্ন পরিস্থিতিতে সামলেছে সেটা আমার ভাল লেগেছে। ওকে এ বার বড় মঞ্চে ধোনির সামনে পড়তে হচ্ছে, যে কিনা জানে এ রকম বড় মঞ্চে কী ভাবে পরিস্থিতির সঙ্গে নিজেকে টেনে তুলতে হয়।
গম্ভীর আর ধোনি— দু’জনেই অনুভূতির উপর নির্ভর করে তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্ত নেয়। আজ ফাইনালে খুব আগ্রহের সঙ্গে একটা ব্যাপারের দিকে লক্ষ্য রাখব। দু’জনের মধ্যে কে নিজের মনের উপর বড় ম্যাচের চাপের প্রভাব ফেলতে দেয়নি। স্বাভাবিক, তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্তই নিচ্ছে ক্যাপ্টেন্সি করার সময়। |