জমি-জট নেই। টানাপোড়েন নেই বিশেষ আর্থিক অঞ্চলের তকমা দেওয়া নিয়েও। কিন্তু তা সত্ত্বেও গত দু’বছরে এক চুলও এগোয়নি নোনাডাঙার তথ্যপ্রযুক্তি পার্ক প্রকল্প। কর্মসংস্থানের লক্ষ্যে ছোট ছোট জমির উপর তথ্যপ্রযুক্তি হাব গড়ে তুলতে লগ্নিকারীদের আহ্বান জানান মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। অথচ তাঁর জমানার এক বছর পেরোনোর পরেও কলকাতার বুকে প্রস্তাবিত এই প্রকল্প এখনও বিশ বাঁও জলে। তিন সংস্থা জমি নেওয়ার পরেও সেখানে আটকে ৫০০ কোটি টাকার লগ্নি। থমকে রয়েছে প্রায় ১২ হাজার নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগও।
নোনাডাঙায় জমি নেওয়া সংস্থাগুলির অভিযোগ, গোড়ায় লগ্নি টানতে প্রয়োজনীয় পরিকাঠামো গড়ে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেয় রাজ্য। কিন্তু তথ্যপ্রযুক্তি এবং পুর ও নগরোন্নয়ন দফতরের মধ্যে টানাপোড়েনের জেরে নিকাশি, জল, রাস্তা ও বিদ্যুৎ সংযোগের মতো ন্যূনতম পরিকাঠামো তৈরি হয়নি। আর সেই কারণেই প্রকল্পের কাজে হাত দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না তাদের পক্ষে।
পূর্ব প্রতিশ্রুতি মতো এই পরিকাঠামো নির্মাণের দায়িত্ব পুর ও নগরোন্নয়ন দফতরের অধীন কেএমডিএ-র। প্রতিশ্রুতির কথা অস্বীকার না-করেও সংস্থার প্রধান বিবেক ভরদ্বাজের দাবি, অনেক সমস্যা রয়েছে। তা না-মিটিয়ে কাজ করা যাবে না।
কী সেই জটিলতা? ২০১০ সালে নোনাডাঙা তথ্যপ্রযুক্তি পার্কে রাজ্য-নির্ধারিত দামে (একর প্রতি ১.২০ কোটি টাকা) জমি নেয় তিন সংস্থা এইচএসবিসি, রোল্টা এবং এইচসিএল। এর পরই তৈরি হয় প্রশাসনিক টানাপোড়েন। প্রথমে কে এম ডি এ-র কাছ থেকে জমি নিয়েছিল তথ্যপ্রযুক্তি দফতর। হস্তান্তরের পরে ৩ সংস্থাকে জমি লিজ দেয় তারাই। আর সেখানেই সমস্যার সূত্রপাত। সংশ্লিষ্ট সূত্রে খবর, দুই দফতরের মধ্যে চুক্তি অনুযায়ী, বেসরকারি সংস্থাগুলিকে জমি দেওয়ার সময় ‘ট্রান্সফার ফি’ বাবদ কিছু টাকা কেএমডিএ-কে দেওয়ার কথা তথ্যপ্রযুক্তি দফতরের। কিন্তু তা মেটায়নি তারা। তখন মাথা ঘামায়নি পুর দফতরও। কিন্তু পরে সংস্থাগুলি পরিকাঠামো তৈরির দাবি জানাতেই চাপানউতোর শুরু হয় দুই দফতরের মধ্যে।
তথ্যপ্রযুক্তি দফতর সূত্রে খবর, কেএমডিএ-র কাছে যে টাকা বকেয়া রয়েছে, তা এখনই দেওয়া মুশকিল। তাদের আর্জি, কাজ আটকে না-রেখে লগ্নি ধরে রাখতে আপাতত পরিকাঠামো গড়ে দিক কেএমডিএ। কিন্তু এই যুক্তি মানতে রাজি নয় কেএমডিএ। আর দুই দফতরের মধ্যে জটিলতার খেসারত হিসেবেই আটকে রয়েছে লগ্নি। তা-ও আবার এমন সময়ে, যখন বিশেষ আর্থিক অঞ্চলের তকমা নিয়ে বিতর্কে রাজ্যে অনিশ্চিত ইনফোসিস প্রকল্প। জমির অভাবে বাস্তবায়িত হয়নি আরও দুই তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থা আইটিসি ইনফোটেক এবং এজিস-এর পরিকল্পনাও।
প্রসঙ্গত, নোনাডাঙায় দেড় একর জমির উপর নিজস্ব কেন্দ্র তৈরি করতে চায় এইচসিএল। সাড়ে ৩ একরে ক্যাম্পাস তৈরির পরিকল্পনা রয়েছে এইচএসবিসি-র। প্রকল্প চালু হলে সেখানে কাজ পাবেন প্রায় ৪ হাজার জন। ২৫০ কোটি লগ্নিতে সাড়ে ৫ একরে ক্যাম্পাস তৈরির পরিকল্পনা রয়েছে রোল্টা ইন্ডিয়ারও। সেখানেও ৫ হাজারের বেশি কর্মসংস্থান হওয়ার সম্ভাবনা।
কিন্তু রাজ্য সরকারেরই দুই দফতরের ‘কাজিয়ায়’ এই সমস্ত প্রকল্প রূপায়ণই আপাতত দূর অস্ত। |