এক ওষুধ সংস্থার নামে বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ‘জাল’ সই করা চিঠি জমা পড়ার ঘটনায় ভাতারের এক যুবকের বিরুদ্ধে প্রতারণার অভিযোগ দায়ের হল।
জেলা পুলিশ সুপার সৈয়দ মহম্মদ হোসেন মির্জা জানান, ওষুধ সংস্থাটির অভিযোগের ভিত্তিতে বৃহস্পতিবার রামকৃষ্ণ মণ্ডল নামে এক যুবকের বিরুদ্ধে বর্ধমান থানায় মামলা (কেস নম্বর ৩৯৬/১২) রুজু হয়। তাঁর বাড়ি ভাতারের আমারুন গ্রামে, বাবার নাম তপনকুমার মণ্ডল। তবে রাত পর্যন্ত তিনি গ্রেফতার হননি। মোবাইলে যোগাযোগ করা হলে কথাও বলতে চাননি। বর্ধমান থানার আইসি দিলীপ গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, “তদন্ত চলছে। এ নিয়ে এখনই কিছু বলা যাবে না।”
ওষুধ বিক্রির বৈধ অনুমতি না থাকা সত্ত্বেও একটি সংস্থা কয়েক জন হাউসস্টাফ ও পোস্ট গ্র্যাজুয়েট ট্রেনি ডাক্তারকে ‘মাসোহারা’ দিয়ে ওষুধ লেখাচ্ছে বলে হাসপাতাল সুপারের কাছে অভিযোগ আসায় ঘটনার সূত্রপাত। ‘দেবাশিস মিত্র’ নাম দিয়ে ওই অভিযোগ করা হয়েছিল। এর পরে গত ১৮ মে এক ব্যক্তি সুপারকে টেলিফোন করে দাবি করেন, তিনি বেঙ্গল কেমিস্ট অ্যান্ড ড্রাগিস্ট অ্যাসোসিয়েশনের কর্তা ‘তরুণ দাস’। ওই সংস্থাটিকে তাঁরা ওষুধ বিক্রির অনুমোদন দেননি (যদিও এ ক্ষেত্রে ড্রাগ কন্ট্রোল ছাড়া কারও অনুমোদন লাগে না)।
এর পরেই সুপার অসিতবরণ সামন্ত বিজ্ঞপ্তি দিয়ে জানান, হাসপাতালের কোনও চিকিৎসক ওই সংস্থার ওষুধ লিখতে পারবেন না। মঙ্গলবার সংস্থার কর্ণধার সঞ্জয় মজুমদার ড্রাগ লাইসেন্স ও বাকি নথিপত্র নিয়ে তাঁর সঙ্গে দেখা করার পরে, তিনি সেই নিষেধাজ্ঞা তুলেও নিয়েছেন। সঞ্জয়বাবুর দাবি, “সাধারণ গ্যাস-অম্বলের ওষুধ বা টনিক নয়, আমরা জীবনদায়ী ওষুধ বিক্রি করি। তাতে ঠিকঠাক কাজ না হলে টাকা নিয়ে কোনও চিকিৎসক তা লিখবেন? মেডিক্যাল কলেজ স্তরের হাসপাতালে কোনও চিকিৎসক ‘মাসোহারা’ নেন বলেও আমার জানা নেই। উদ্দেশ্য প্রণোদিত ভাবে চিকিৎসকদের বিরুদ্ধে কুৎসা করা হচ্ছে।”
সঞ্জয়বাবুরা সুপারের সঙ্গে দেখা করার পরেই অভিযোগকারীর পরিচয় নিয়ে প্রশ্ন উঠে গিয়েছিল। সুপারকে তাঁরা জানান, ‘দেবাশিস মিত্র’ নামে তাঁদের সংস্থায় এক কর্মী আছেন। তাঁর নাম ব্যবহার করে অন্য কেউ এই কাজ করেছে বলে তাঁদের সন্দেহ। সুপারের কাছে বেঙ্গল কেমিস্ট অ্যান্ড ড্রাগিস্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি রণেন্দ্রনারায়ণ রায়ও জানিয়ে দেন, ‘তরুণ দাস’ নামে তাঁদের কোনও সদস্য নেই। এর পরেই সঞ্জয়বাবুরা পুলিশের দ্বারস্থ হন। বর্ধমান থানায় তাঁরা জানান, জাল নথিপত্র দিয়ে চাকরি করার দায়ে কয়েক দিন আগে রামকৃষ্ণ মণ্ডল মামে এক কর্মীকে তাঁরা বরখাস্ত করেছেন। সংস্থার ভাবমূর্তি নষ্ট করার লক্ষ্যে তিনিই নাম ভাঁড়িয়ে অভিযোগ এবং ‘ভুয়ো’ ফোন করে বা করিয়ে থাকতে পারেন বলে তাঁদের আশঙ্কা।
পুলিশ সুপার জানান, রামকৃষ্ণ মণ্ডলের বিরুদ্ধে ভারতীয় দণ্ডবিধির ৪২০, ৪৬৫, ৪৬৭ ও ৪৭১ ধারায় সই জাল করা ও প্রতারণার অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। এর মধ্যে অন্তত দু’টি ধারা জামিনঅযোগ্য। রামকৃষ্ণ অবশ্য এ নিয়ে মুখ খুলতে চাননি। প্রসঙ্গ উঠতেই ‘পরে কথা বলব’ বলে তিনি ফোন কেটে দেন। এর পরে আর তাঁর মোবাইল খোলা পাওয়া যায়নি। |