কথা উঠেছিল বাম জমানাতেই। তখন করা যায়নি। অবশেষে সরকারি হাসপাতালে প্রতি রবিবার দুপুর দু’টো পর্যন্ত আউটডোর ও সপ্তাহের অন্যান্য দিন দু’টি শিফটে (একটি সকাল, একটি সান্ধ্য) আউটডোর চালুর ব্যবস্থা এক রকম পাকা। কলকাতার পাঁচটি মেডিক্যাল কলেজ দিয়েই এই কাজ শুরু হবে বলে স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর। আউটডোরে ভিড় কমাতে এবং দিনের কাজকর্ম সেরে যাতে মানুষ আউটডোরে চিকিৎসা করাতে আসতে পারেন, তার জন্যই এই ব্যবস্থা। নতুন ব্যবস্থায় আউটডোরে চিকিৎসকদের উপস্থিতি নিশ্চিত করতে কড়া হবে স্বাস্থ্য দফতর। শুরু হচ্ছে চিকিৎসকদের ‘সেল্ফ অ্যাসেসমেন্ট’ও। এর পাশাপাশিই আমূল বদলাচ্ছে মেডিক্যাল কলেজগুলির ইমার্জেন্সি পরিষেবা।
সরকারি হাসপাতালে পরিকাঠামো ও মানবসম্পদের যথাযথ ব্যবহার হচ্ছে কি না, রোগীরা পরিষেবায় কতটা সন্তুষ্ট, তা খতিয়ে দেখতে বিশিষ্ট চিকিৎসক, শিক্ষাবিদ, অর্থনীতিবিদদের নিয়ে বিশেষজ্ঞ কমিটি তৈরি হয়েছিল। ঠিক হয়েছিল, তাঁরা হাসপাতাল পরিদর্শন করে স্বাস্থ্য দফতরকে যা পরামর্শ দেবেন, দফতর তা কার্যকর করবে। গত কয়েক সপ্তাহে বিভিন্ন দলে ভাগ হয়ে শহরের বিভিন্ন সরকারি মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল পরিদর্শন করেন বিশেষজ্ঞ কমিটির সদস্যেরা। তার ভিত্তিতে স্বাস্থ্য দফতরের করণীয় কাজের যে তালিকা তৈরি হয়েছে, তার প্রথমেই রয়েছে রবিবার আউটডোর ও সান্ধ্য আউটডোরের কথা। আগামী শনিবার, ২৬ মে আনুষ্ঠানিক ভাবে এই তালিকা স্বাস্থ্যসচিবকে জমা দেওয়ার কথা।
বিশেষজ্ঞ কমিটির চিকিৎসক ত্রিদিব বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, রবিবার আউটডোরের ক্ষেত্রে তাঁরা এনআরএসের রেডিওথেরাপি বিভাগকে মডেল ধরেছিলেন। রাজ্যে একমাত্র সেখানেই চিকিৎসক সুবীর গঙ্গোপাধ্যায়ের উদ্যোগে রবিবার আউটডোর চালু হয়েছিল। ত্রিদিববাবুর কথায়, “এক দিনের রুজি নষ্ট করে হাসপাতালে ধর্না দেওয়া গরিব মানুষের পক্ষে অসুবিধাজনক। তাই রবিবার আউটডোর করতে হবে। স্বাভাবিক ভাবে এক্স-রে, সিটি স্ক্যান, রক্ত পরীক্ষার মতো পরিষেবাও রবিবার থাকতে হবে।” আউটডোরে ভিড় কমাতে ও অফিসের পরে মানুষ যাতে আউটডোরে আসতে পারেন, তার জন্য কাজের দিনে সান্ধ্য আউটডোরের পরিকল্পনা হয়েছে।
কিন্তু নয়া পরিকল্পনায় প্রশ্ন উঠছে মানবসম্পদের অভাব নিয়ে। এমনিতেই যেখানে হাসপাতালে চিকিৎসক, নার্স, চতুর্থ শ্রেণির কর্মীর অভাব, সেখানে অতিরিক্ত এক দিন আউটডোর এবং দুই শিফ্টে আউটডোর চালানো যাবে তো? ত্রিদিববাবুর উত্তর, “অবশ্যই যাবে। কারণ, বহু জায়গায় চিকিৎসকেরা নিজেদের মধ্যে কথা বলে এক দিন বা দু’দিন আউটডোর করেন। দু’টোয় আউটডোর শেষ হওয়ার পরে অনেক চিকিৎসককে হাসপাতালে পাওয়া যায় না। রবিবার তো হাসপাতালে ডাক্তার পাওয়াই দুষ্কর। এ সব আর চলবে না।” তা ছাড়া, প্রতি মাসে কোন চিকিৎসক কত কাজ করছেন, এ বার থেকে তার ‘সেল্ফ অ্যাসেসমেন্ট’ স্বাস্থ্যভবনে জমা দিতে হবে।
মেডিক্যাল কলেজের ইমার্জেন্সি পরিষেবা যে বদলাতে চলেছে, সে কথা জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞ কমিটির আর এক সদস্য, চিকিৎসক সুব্রত মৈত্র। তাঁর কথায়, “যে ভাবে হোক ইমার্জেন্সিতে জায়গা বাড়াতে হবে। ইমার্জেন্সি হল হাসপাতালের মুখ। এখানে শয্যা আর ডাক্তার না বাড়ালে রোগী রেফার কমবে না।” কী ভাবে জায়গা বাড়বে? সুব্রতবাবু বলেন, “আমরা ঘুরে দেখেছি শম্ভুনাথ পণ্ডিত, বাঘা যতীন, বিজয়গড়, বিদ্যাসাগর, বিধাননগর, নর্থ সাবার্বান, বরাহনগর স্টেট জেনারেলের মতো হাসপাতাল পরিকাঠামো থাকলেও সঠিক পরিষেবা দিচ্ছে না। মেডিক্যাল কলেজগুলির কিছু আউটডোর সেখানে পাঠালে জায়গা বাড়বে।”
বিশেষজ্ঞ কমিটি আরও জানিয়েছে, প্রত্যেক ইমার্জেন্সিতে একাধিক বিভাগের চিকিৎসক থাকবেন। যাতে ইমার্জেন্সি থেকে রোগী নিয়ে বিভিন্ন বিভাগে দৌড়তে না হয়। প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়ার পরে যদি রোগী ভর্তির জায়গা না হয়, তা হলে ইমার্জেন্সির চিকিৎসকেরাই এলাকার হাসপাতালে ফোনে যোগাযোগ করে শয্যার ব্যবস্থা করবেন। তার পরে রোগীর নাম-ঠিকানা রেজিস্টারে নথিভুক্ত করে তবেই তাঁকে রেফার করবেন। যাতে রোগীকে দিশাহারা হয়ে এক হাসপাতাল থেকে অন্য হাসপাতালে ঘুরে বেড়াতে না হয়। |