নিজেরা আগে থেকে কেউ কাউকে চিনতেন না। বিপদই হাতে হাত মিলিয়ে দিয়েছে দুই নারীকে। ঠিক হয়েছে, নন্দরানির স্বামী মনোজকে বাঁচাতে কিডনি দেবেন রীনা গুপ্ত। বদলে নন্দরানির কিডনি দিয়ে নতুন জীবন পাবেন রীনাদেবীর স্বামী উমেশ। এ ভাবেই নিজেদের স্বামীকে বাঁচাতে চাইছেন মরিয়া দুই স্ত্রী।
ঝাড়খণ্ডের পলামুর বাসিন্দা নন্দরানির স্বামী মনোজ কুমার। ৩৮ বছরের ব্যবসায়ী মনোজ মাস ছয়েক আগে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন। চিকিৎসকেরা জানান, মনোজবাবুর দু’টি কিডনি খারাপ হয়ে গিয়েছে। বিহারের রোহতাস জেলার সাসারামের রীনাদেবীর পরিবারেও ঘটেছে একই বিপর্যয়। তাঁর স্বামী ৪৪ বছরের উমেশ প্রসাদের কিডনিও ‘বিকল’। স্বামীকে নিয়ে দুই মহিলাই এসেছেন কলকাতায়। মুকুন্দপুরে বাইপাস-সংলগ্ন একটি বেসরকারি হাসপাতালে স্বামীদের চিকিৎসা করাচ্ছেন তাঁরা। চিকিৎসকেরা তাঁদের পরিবারকে জানিয়েছিলেন, কিডনি প্রতিস্থাপন না করলে বাঁচানো যাবে না মনোজ-উমেশকে।
স্বামীকে কিডনি দিতে প্রথমে এগিয়ে এসেছিলেন নন্দরানি ও রীনাদেবীই। কিন্তু, কিডনি প্রতিস্থাপনের ক্ষেত্রে দাতা ও গ্রহীতার রক্তের গ্রুপ-সহ অন্য কয়েকটি শারীরবৃত্তীয় বিষয়ে মিল থাকা অত্যন্ত জরুরি। ওই হাসপাতালের নেফ্রোলজি বিভাগের প্রধান দীপকশঙ্কর রায় জানান, পরীক্ষায় দেখা যায়, দু’টি ক্ষেত্রেই স্বামীর সঙ্গে স্ত্রীর ওই সব মিলগুলি নেই। তাই স্ত্রীর কিডনি স্বামীর দেহে প্রতিস্থাপন অসম্ভব। |
এর মধ্যে ডায়ালিসিস চলছিল দুই রোগীরই। কিডনি কাজ না-করায় রক্তচাপ, ব্লাড-সুগার বাড়তে থাকে দু’জনের। ফলে স্বামীদের জন্য হন্যে হয়ে ‘কিডনি-দাতা’ খুঁজছিলেন দুই স্ত্রী। কিন্তু মিলছিল না কেউ-ই। শেষে চিকিৎসকের কাছেই সমস্যার সুরাহার আর্জি জানান দুই দম্পতি। দীপকবাবু বলেন, “সব রোগীর খুঁটিনাটি তথ্য আমার ডায়েরিতে থাকে। কয়েক মাস ধরে কিডনি-দাতার অপেক্ষায় ছিলেন উমেশ প্রসাদ। মনোজ কুমাররা আমার কাছে আসেন মাস দুয়েক আগে। তখনই দেখি, নিজেদের স্বামীর সঙ্গে মিল না থাকলেও অন্য জনের স্বামীর সঙ্গে তাঁদের রক্তের গ্রুপ ও কিডনি বদলের অন্য সব আবশ্যিক শর্ত মিলে গিয়েছে। এ সব দেখে আলাপ করিয়ে দিই দু’পক্ষের মধ্যে। তার পরেই এই বদলা-বদলির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।”
অচেনা কারও কাছ থেকে কিডনি ‘নেওয়া’র ক্ষেত্রে আইনি জটিলতা রয়েছে। ওই হাসপাতালের আইন বিভাগের তরফে সুমন্ত ঘোষ জানান, ভারতীয় অঙ্গ প্রতিস্থাপন আইন এবং পশ্চিমবঙ্গ সরকারের স্বাস্থ্য বিভাগের নির্দেশিকা অনুযায়ী, কিডনি দিতে ইচ্ছুুক ব্যক্তিকে বিচারবিভাগীয় ম্যাজিস্ট্রেটের কাছ থেকে অনুমতি নিতে হয়। সেই প্রক্রিয়ার জন্য আইনজীবীর কাছে যান ওই দম্পতিরা। তাঁদের আইনজীবী শুভময় সমাদ্দার জানান, আলিপুরের দ্বিতীয় বিচারবিভাগীয় ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে হলফনামা দাখিল করেন নন্দরানি, রীনাদেবীরা। প্রশাসনিক নিয়মমাফিক ‘নো-অবজেকশন’ সার্টিফিকেট দেন তাঁদের স্বামীরাও। আদালতের অনুমতি মেলে এর পর। বিচারকের সেই আদেশের প্রতিলিপি নিয়ে ঝাড়খণ্ড, বিহারের স্বাস্থ্য দফতরে আবেদন দাখিল করেছেন সংশ্লিষ্ট পরিবারগুলি। সেখানকার ‘সবুজ সঙ্কেত’ মিললেই হবে অস্ত্রোপচার।
পরস্পরের স্বামীকে কিডনি দিয়ে, তাঁদের সুস্থ করে বাড়ি ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়ার অপেক্ষায় এখন দিন গুনছেন রীনা-নন্দরানিরা। |