ময়নাগুড়ি থানার পুলিশের একাংশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুললেন জলপাইগুড়ি জেলা তৃণমূল সভাপতি কৃষ্ণকুমার কল্যাণী। বৃহস্পতিবার দলের সাধারণ সম্পাদক মুকুল রায়ের নির্দেশে এক দলীয় কর্মীর নাবালিকা মেয়ে অপহরণের অভিযোগের তদন্তের অগ্রগতির খোঁজ নিতে তিনি থানায় যান। সেখানেই তিনি আইসির সঙ্গে দেখা করে পুলিশের একাংশের ভূমিকা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তৃণমূল সভাপতি বলেন, “২ মার্চ থানায় অভিযোগ জানানোর পরেও পুলিশ নিখোঁজ নাবালিকা উদ্ধারে কোনও ব্যবস্থা নেয়নি। উল্টে বলা হয়েছে, দলের তরফে ঘটনার মীমাংসা করতে বলা হয়েছে। দলের তরফে এটা কেউ বলতে পারে না। পুলিশ আইনে যা বলা হয়েছে সেভাবেই ব্যবস্থা নিতে হবে।” তিনি অভিযোগ করেন, ময়নাগুড়ি থানার পুলিশের একাংশ টাকা তোলার জন্য কোনও ঘটনার অভিযোগের পাল্টা অভিযোগ জমা নিচ্ছে। বিষয়টি নিয়ে দলের সাধারণ সম্পাদক মুকুলবাবুর কাছে তিনি রিপোর্ট পাঠাবেন বলে জানিয়েছেন। জলপাইগুড়ির অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জেমস কুজুর বলেন, “কেউ অভিযোগ জানালে নিতে হবে। এক্ষেত্রে পুলিশের কি করার আছে।” নিখোঁজ নাবালিকা উদ্ধারের ঘটনায় উদাসীনতার অভিযোগও অতিরিক্ত পুলিশ সুপার অস্বীকার করেছেন। তিনিবলেন, “পুলিশকে অনেক খোঁজ করেই তবেই ব্যবস্থা নিতে হয়। গোপন সূত্রে খবর সংগ্রহ করে ময়নাগুড়ির মেয়েটিকে উদ্ধার করা হয়েছে। এখানে গাফিলতির প্রশ্ন উঠছে কেন?” তৃণমূল নেতৃত্বের অভিযোগ, গত ২ মার্চ থেকে ময়নাগুড়ির শহিদগড় পাড়ার বাসিন্দা দিলীপ রায়ের ১৬ বছরের মেয়ে নিখোঁজ হয়। পুলিশকে অনেক বলার পরেও কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। এর পরে গত ২৪ এপ্রিল দিলীপবাবু ও তাঁর স্ত্রী দীপাদেবী মুখ্যমন্ত্রীর দ্বারস্থ হন। দিলীপবাবুর অভিযোগ, মেয়ের খোঁজ পাওয়া গেল কি না জানতে গেলে থানার ভারপ্রাপ্ত অফিসার তাঁকে জানান, তৃণমূলের ময়নাগুড়ি ব্লক সভাপতি সুভাষ বসু তাঁকে ওই বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে নিষেধ করেছেন। ওই অভিযোগ তিনি মুখ্যমন্ত্রীকেও লিখিত ভাবে জানান। জেলা তৃণমূল সভাপতি এদিন থানার আইসির কাছে জানতে চান কেন তিনি ওই মন্তব্য করেছেন? আইসি বিশ্বনাথ হালদার দিলীপবাবুর অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তিনি বলেন, “অভিযোগের ভিত্তিতে মামলা রুজু করা হয়েছে। সেখানে কেউ নিষেধ করেছে ওই প্রশ্ন কেন উঠছে বুঝতে পারছি না। তা ছাড়া কেন আমি ওই ধরণের কথা বলতে যাব।” পুলিশ কর্তারা জানান, ২ মার্চ অভিযোগ দায়ের করার পরই নাবালিকার খোঁজ শুরু করা হয়। সে জয় চন্দ নামে এক যুবকের সঙ্গে পালিয়ে যায় বলে জানা যায়। বুধবার রাতে ভক্তিনগর থানার জ্যোতিনগর থেকে দু’জনকে ধরা হয়। আইসি বলেন, “নাবালিকা বাবার সঙ্গে যেতে রাজি হয়নি। তাই তাকে জলপাইগুড়িতে হোমে পাঠানো হয়েছে। ধৃত যুবককে আদালতে পাঠানো হয়েছে। এদিকে দলের ব্লক সভাপতি সুভাষ বসুও তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তিনি বলেন, “আমি কেন পুলিশকে বলতে যাব। তা ছাড়া ঘটনাটি আমি জানি না। এটা গভীর চক্রান্ত। যারা গোষ্ঠী তৈরি করে দলকে শেষ করতে চেষ্টা করছে তাঁরাই ওই চক্রান্ত করছেন। দলের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বকে সমস্ত ঘটনা জানানো হবে।” এদিন তৃণমূল সভাপতি আরও অভিযোগ করেন, সম্প্রতি দলের এক পঞ্চায়েত সদস্য লাঞ্চিত হন। তিনি অভিযোগ জাাননোর পর উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবে পাল্টা অভিযোগ জমা নেওয়া হয়। থানার আইসি বলেন, “আমরা কোনও অভিযোগ ফিরিয়ে দিতে পারি না। তদন্তে কোনও অভিযোগ মিথ্যা প্রমাণিত হলে ২১১ ধারায় মামলা করা হবে।” |