আপনি আচরি ধর্ম পরেরে শিখাও! ঠিক এর বিপরীত ‘ধর্ম’ই আচরণ করছে তৃণমূল!
কার্টুন-কাণ্ডের জন্য অম্বিকেশ মহাপাত্রের জায়গা হতে পারে গারদের ও’পারে। কিন্তু কোচবিহারের ধূপগুড়ি পুরভোটে তৃণমূলের প্রচারের অন্যতম হাতিয়ার সেই কার্টুনই!
ধূপগুড়ির দেওয়ালে আঁকা কার্টুন দেখাচ্ছে, এক পক্ককেশ প্রৌঢ় কাঁধে লাল পতাকা নিয়ে গাইছেন ‘এক বার বিদায় দে মা, ঘুরে আসি’। কার্টুনের ওই ব্যক্তির অবয়ব একেবারে সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক বিমান বসুর মতো! গানের লাইনের ব্যবহারেই স্বাধীনতা সংগ্রামী ক্ষুদিরামের সঙ্গে বিমানবাবুর তুলনা অবধারিত ভাবে লোকের মনে চলে আসছে! ধূপগুড়ির মোড়ে মোড়ে, চায়ের দোকানে ভোটের বাজারে রসাল গল্প এই কার্টুনই। শেষে কি না তৃণমূলই কার্টুনকে অস্ত্র করল!
কার্টুন-বিদ্ধ হয়ে মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কড়া প্রতিক্রিয়া জানিয়েছিলেন। ধূপগুড়ির সিপিএম নেতারা অবশ্য ‘বেরসিক’ নন! সিপিএমের পোড়-খাওয়া কিছু স্থানীয় প্রবীণ নেতার মন্তব্য, “কমরেড বিমানদা’কে শহিদ ক্ষুদিরামের সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে। ক্ষমতায় এসেই তৃণমূল প্রশাসনের সাহায্য নিয়ে সিপিএমকে যে ভাবে মারতে শুরু করেছে, তাতে সিপিএম কর্মীরা শহিদ হয়েই চলেছেন। সেই প্রেক্ষাপটে ওই ব্যঙ্গচিত্র তো প্রতীকী!” |
তৃণমূলের নেতারা প্রথমত ওই ছবিকে বিমানবাবুর কার্টুন বলে মানতেই রাজি নন। দ্বিতীয়ত, তাঁদের বক্তব্য, ভোটের প্রচারে এমন রঙ্গ-চিত্রের ব্যবহার হয়েই থাকে। তৃণমূলের জেলা মহাসচিব তথা ধূপগুড়ির পুরভোটে দলের তরফে অন্যতম দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা চন্দন ভৌমিকের কথায়, “প্রার্থীরা নিজেদের মতো প্রচার করেছেন। আর যে ছবিটির কথা বলা হচ্ছে, তাতে বিমান বসুর নাম কোথাও লেখা নেই। অনেকে বলছেন, ছবির মানুষটিকে বিমানবাবুর মতো দেখতে। ভোটের প্রচারে ছড়া, চিত্র এ সব তো হয়েই থাকে!”
ঘটনা! হয়েই থাকে! বঙ্গ রাজনীতির অতীতে তার ভূরি ভূরি উদাহরণ আছে। কিন্তু ধূপগুড়ির এই কার্টুন লোক-চর্চার বস্তু হয়ে উঠেছে একটাই কারণে। অম্বিকেশ-কাণ্ড। রঙ্গ-চিত্র ‘ফরওয়ার্ড’ করার দায়ে যাদবপুরের শিক্ষককে গ্রেফতার করা হয়েছিল রাজ্য প্রশাসনের তরফে। সরকারের ওই সিদ্ধান্তের সমর্থনে পথে নেমেছিল প্রধান শাসক দল তৃণমূল। কিন্তু ধূপগুড়িতে তারাই কার্টুনে প্রচার করছে।
মুখ্যমন্ত্রী অবশ্য ব্যাখ্যা দিয়েছিলেন, কার্টুনে তাঁদের কোনও আপত্তি নেই। কিন্তু অম্বিকেশবাবু কার্টুন আঁকেননি। তিনি মুখ্যমন্ত্রী এবং আরও দুই কেন্দ্রীয় মন্ত্রী, তৃণমূলের মুকুল রায় ও দীনেশ ত্রিবেদীর ‘ডি-কম্পোজড’ ছবি ব্যবহার করে ‘অপরাধ’ করেছিলেন বলে মমতার মত। সেই দিক থেকে দেখলে বিমানবাবুর ছায়ায় নির্মিত কার্টুনে তৃণমূল নেতৃত্বের ‘অনুমোদন’ থাকার কথা। প্রসঙ্গত, অম্বিকেশবাবু অবশ্য তাঁর ছবিতে কারও কার্টুন করেননি। মমতা, মুকুলবাবু ও দীনেশের সরাসরি ছবিই ব্যবহার করে সত্যজিৎ রায়ের একটি ছবির সংলাপ কাজে লাগানো হয়েছিল।
ধূপগুড়ির ৬ নম্বর ওয়ার্ডে তৃণমূল প্রার্থী ঈশিতা ঘোষের সমর্থনে দেওয়াল-প্রচারে ব্যবহৃত হয়েছে বিমানবাবুর ওই কার্টুন। বাম শরিক ফরওয়ার্ড ব্লকের প্রতীক সিংহকে নিয়েও রয়েছে রঙ্গ-চিত্র। কোথাও লেজ তুলে পলায়নরত ‘লাজুক’ সিংহ বলছে, আর ফিরে আসব না! বিধানসভা নির্বাচনে রাজ্যে ক্ষমতা হারানোর পরে এ বার বামফ্রন্ট ধূপগুড়ি পুরসভা থেকেও ‘বিদায়’ নিতে চলেছে এটাই প্রচারে তুলে ধরার চেষ্টা হয়েছে বলে স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্বের বক্তব্য।
পুরসভার ৩ নম্বর ওয়ার্ডের বেশ কয়েকটি দেওয়ালেই রয়েছে পলায়নরত সিংহের কার্টুন। ওই ওয়ার্ডে বাম প্রার্থী ফ ব-র দীনবন্ধু রায়। তৃণমূলের প্রচারে রয়েছে, দু-তিন জন লাঠিধারীর তাড়া খেয়ে সিংহ পালিয়ে যাচ্ছে। আবার পাশের কোনও দেওয়ালে ‘লাজুক সিংহ’-এর কার্টুন। তৃণমুলের যুব নেতা ইভান দাস বলেন, “দলের প্রার্থীরা নিজেদের মতো প্রচার করেছেন। রাজ্যের মানুষ মুখ ঘুরিয়ে নিলেও সিপিএম ক্ষমতায় থাকতে মরিয়া! নিজেরা জিতবে না জেনে তিন নম্বর ওয়ার্ডে খুঁজে খুঁজে এক জনকে ফ ব-র প্রার্থী করেছে। এতে সিপিএমের সমর্থকরাই হতবাক! তাই ফ ব-র প্রতীক সিংহও লজ্জা পেয়েছে!”
জলপাইগুড়ির সিপিএম জেলা সম্পাদক কৃষ্ণ বন্দ্যোপাধ্যায় বলছেন, “ওরা ওদের মতো প্রচার করছে। ওরা যা ইচ্ছে বলতে বা লিখতে পারে, তাতে আমরা গুরুত্ব দিচ্ছি না। আমরা আমাদের রাজনৈতিক বক্তব্য তুলে ধরছি। সেটা সাধারণ মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্য হচ্ছে।”
সাধারণ মানুষ অবশ্য বঙ্গ রাজনীতির রঙ্গ দেখে মজাই পাচ্ছেন! |