দু’টি ফ্ল্যাট। বিরাট গ্যারাজ। ৭টি ছোট গাড়ি। কিন্তু ব্যাঙ্ক থেকে দৈনিক আয় ১৭০ টাকা!
শিলিগুড়িতে ইউকো ব্যাঙ্কের বর্ধমান রোড শাখার চতুর্থ শ্রেণির কর্মী চন্দন মণ্ডলের প্রতিবেশীরা তাই কিছুটা অবাকই হয়েছিলেন। তবে শহরের শক্তিগড়ের বাসিন্দা চন্দনবাবু ছিলেন ‘পরোপকারী’। পাড়ায় মিশুকে হিসেবেই পরিচিত। এলাকায় তো বটেই, ব্যাঙ্কের যে কোনও কাজে, কারও ব্যক্তিগত প্রয়োজনে সবার আগে হাজির হন। চাকরি স্থায়ী করতে ব্যাঙ্কের আধিকারিকদের কাছে দরবার করতেন। ব্যাঙ্কে শাখার আমানত বাড়তে প্রতিবেশী, গ্রাহকদের টাকা জমানোর পরামর্শও দিতেন। দীর্ঘ দিন কাজের সুবাদে ব্যাঙ্কের ওই শাখায় কোথাও কী রয়েছে, এক মিনিটে বার করে দিতেন। ভল্ট থেকে ক্যাশ কাউন্টার, সর্বত্রই অবাধ যাতায়াত ছিল। তাই সে ভাবে কেউই কোনওদিন তাঁর অবস্থার উত্তরোত্তর উন্নতি নিয়ে মাথা ঘামাননি।
বরং পরোপকারী বলে পরিচিত সেই চন্দনবাবুর বিরুদ্ধেই এখন অনেকের স্থায়ী আমানতের টাকা আত্মসাতের অভিযোগ ওঠায় চমকে উঠেছেন তাঁর পরিচিতরা।
|
চন্দন মণ্ডল |
চন্দনবাবুর বাড়ি শক্তিগড়ের ৭ নম্বর রোডে। সদ্য ত্রিশের কোঠায় পা দিয়েছেন। দোহারা গড়ন। দৈনিক মজুরি কম হলেও সকাল থেকে রাত পর্যন্ত ব্যাঙ্কে নানা কাজের সুবাদে তাঁর ভালই ‘আয়’ বলে বাসিন্দাদের বলতেন তিনি। পুলিশের একাংশের সন্দেহ, বিভিন্ন ব্যক্তির স্থায়ী আমানতের টাকা আত্মসাৎ করে ব্যবসায় খাটাতেন তিনি। চন্দনবাবু অবশ্য বলেছেন, “আমার চাকরি স্থায়ী করে দেওয়া হবে বলে অফিসাররো যা বলতেন সেটাই করেছি। সে জন্য কিছু বাড়তি টাকা পেতাম। এর বেশি কিছু জানি না।” চন্দনবাবুর বাবা চিত্ত মণ্ডল এক সময় লটারির টিকিট বিক্রির ব্যবসা করতেন। শিলিগুড়ি পুরসভার ৩১ নম্বর ওয়ার্ডে টিনের বাড়ি ছিল তাঁদের। দিদির বিয়ে হয়ে গিয়েছে। চন্দনবাবুর ভগ্নিপতিও গাড়ির ব্যবসা করেন। শক্তিগড় হাইস্কুল থেকে মাধ্যমিক পাশ করার পরেই কাজের সন্ধানে নামেন চন্দন। এলাকায় ইউকো ব্যাঙ্কের শাখা খুলতে সেখানে কাজ পান। ক্রমশ সেই চন্দনবাবু এলাকার ‘কেউকেটা’ গোছের একজন হয়ে ওঠেন। বিষয়টি নজরে পড়ে অনেকেরই। যেমন, এলাকার তৃণমূল নেতা কৌশিক দত্ত বলেন, “চন্দন রাতারাতি অনেক টাকার মালিক হয়েছেন বলে শুনেছি। দামি মোবাইল, গাড়ি ছিল। সম্প্রতি এলাকার কয়েকজন চন্দনের মাধ্যমে ‘এফডি’ করার পরে টাকা পাচ্ছেন না বলে আমাদের কাছে অভিযোগ করেন। ব্যাঙ্কে গিয়ে খোঁজখবর করার পাশাপাশি পুলিশকে সব জানাই। ভবিষ্যতে কেউ যেন এমন কাজ না করে সেই জন্য ওঁর কড়া শাস্তির দাবি জানিয়েছি।” দার্জিলিঙের পুলিশ সুপার কুণাল অগ্রবাল বলেন, “চন্দনকে সামনে রেখেই প্রতারণার কারবার চলছিল বলে সন্দেহ হচ্ছে। দেখা যাক কী হয়!”
তবে ব্যাঙ্কের ওই শাখার নিচেই মিষ্টির দোকান উত্তম ঘোষের। অন্য গ্রাহকদের পাশাপাশি চন্দন তাঁরও প্রায় ১ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে বলে অভিযোগ। উত্তমবাবু বলেন, “ভাল কথা বলত। দোকানেও আসত। কোনও দিন সন্দেহ হয়নি। ব্যাঙ্কের কাজকর্ম করে দিত। কোনও দিন ভাবিনি এত বড় সর্বনাশ করছে।” এলাকার আর এক বাসিন্দা বিশ্বজিৎ দত্ত বলেন, “মোবাইলের ব্যবসা করি। অনেক কষ্ট করে ২ লক্ষ টাকা ‘ফিক্সড ডিপোজিট’ করি। পরিচিতির সুবাদ চন্দনই সব করে দেয়। ভাবিনি ও আমার টাকা মেরেই নিজের বাড়ি, গাড়ি করছে।’’ |