গ্রাহকদের ক্ষতিপূরণের আশ্বাস দিল ব্যাঙ্ক
এফডি গ্রাহকের নামে প্রতারণা, ধৃত ৫ ব্যাঙ্ককর্মী
ফিক্সড ডিপোজিট (এফডি) বা স্থায়ী আমানত করার জন্য গ্রাহকদের থেকে টাকা নিয়ে রসিদ, সার্টিফিকেট দেওয়া হয়েছে। কিন্তু, ব্যাঙ্কে টাকা জমা পড়েনি। মেয়াদান্তে টাকা তুলতে না পেরে গ্রাহকেরা বিক্ষোভে ফেটে পড়তেই বেরিয়ে এল আসল তথ্য। জানা গেল, তিন বছর ধরে এফডি করানোর নামে প্রতারিত হয়েছেন অনেক গ্রাহক। ব্যাঙ্কের শাখার চার অফিসার-সহ ৫ জনের বিরুদ্ধে প্রতারণার অভিযোগ দায়ের করেছেন ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ। ৫ জনকেই পুলিশ গ্রেফতার করেছে।
শিলিগুড়ি থানার জলপাইমোড় লাগোয়া রাষ্ট্রায়ত্ত ইউকো ব্যাঙ্কের বর্ধমান রোড শাখার এই ঘটনায় প্রাথমিক ভাবে পুলিশের সন্দেহ, ব্যাঙ্কের অফিসার-কর্মীদের একাংশের যোগসাজশে অন্তত ১ কোটি টাকা আত্মসাত হয়েছে। ইতিমধ্যেই ৫৫ জন গ্রাহক এফডি করিয়ে সার্টিফিকেট পেলেও মেয়াদপূর্তির টাকা পাচ্ছেন না বলে পুলিশে অভিযোগ করেছেন। দার্জিলিঙের পুলিশ সুপার কুণাল অগ্রবাল বলেন, “২০০৯ সাল থেকে ওই টাকা তছরুপের ধারাবাহিক ঘটনা ঘটেছে। ওই শাখার বহু নথিপত্র বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। অন্য অফিসার-কর্মীদের ভূমিকাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।”
ব্যাঙ্ক সূত্রের খবর, ওই সময়ে মধ্যে অন্তত ৮ হাজার এফডি হয়েছে। তার ভিত্তিতে পুলিশের আশঙ্কা, প্রতারণার পরিমাণ কয়েক কোটি টাকা ছাড়িয়ে যেতে পারে। ব্যাঙ্কের এগজিকিউটিভ ডিরেক্টর এস চন্দ্রশেখরণ এ দিন বলেন, “ইতিমধ্যেই ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। দোষীদের শাস্তি হবে। আমরা ওই গ্রাহকদের ডাকব। প্রকৃত গ্রাহকেরা উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ পাবেন।”
জাল সার্টিফিকেট দেখাচ্ছেন এক গ্রাহক।
পুলিশ জানায়, ধৃতদের নাম সঞ্জয় বসু, আনন্দমোহন রায়, আদিত্য পাঠক, কল্যাণ সরকার এবং চন্দন মণ্ডল। সঞ্জয়বাবু ও আদিত্যবাবু বর্ধমান রোড শাখার সহকারী ম্যানেজার। আনন্দমোহনবাবু ওই শাখার হেড ক্যাশিয়ার। আগে এই শাখায় থাকলেও কল্যাণবাবু বর্তমানে কোচবিহার শাখায় কর্মরত। সেখান থেকে তাঁকে ধরা হয়। আর চন্দন মণ্ডল বর্ধমান রোড শাখার চতুর্থ শ্রেণির অস্থায়ী কর্মী। কলকাতার কেষ্টপুরের বাসিন্দা আদিত্য পাঠক। বাকি ধৃতদের বাড়ি শিলিগুড়িতে।
ধৃতদের বিরুদ্ধে প্রতারণা, সরকারি টাকা আত্মসাৎ, জালিয়াতি, চুক্তিভঙ্গ-সহ ৮টি ধারায় মামলা হয়েছে। ইউকো ব্যাঙ্কের ডেপুটি জোনাল ম্যানেজার ললাটেন্দু পতি পুলিশের কাছে অভিযোগ দায়ের করেছেন। ব্যাঙ্ক সূত্রের খবর, ইতিমধ্যেই ওই শাখার সিনিয়র ম্যানেজার মদনগোপাল সাহার কিছু ক্ষমতা ‘কাটাছাঁট’ করা হয়েছে। তার পরিবর্তে অন্য আধিকারিকেরা ওই শাখার কাজকর্ম দেখভাল করবেন।
ঘটনার সূত্রপাত সোমবার। কিছু গ্রাহক তাঁদের এফডি-র মেয়াদ ফুরানোয় সার্টিফিকেট নিয়ে ব্যাঙ্কে টাকা তুলতে যান। কিন্তু কম্পিউটারে সেগুলির তথ্য না মেলায় তাঁরা ক্ষোভে ফেটে পড়েন। এর জেরে শাখার মূল গেটে সকলের টাকা ফেরত দেওয়া হবে বলে বাংলা ও ইংরেজিতে নোটিসও ঝোলানো হয়। দু’দিন ধরে ব্যাঙ্কে গিয়ে তদন্তের পরে শিলিগুড়ি থানার আইসি পিনাকী মজুমদার ব্যাঙ্কের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে বিশদে খতিয়ে দেখার অনুরোধ করেন। তাতে গ্রাহক বিক্ষোভ আয়ত্তে আসে। এর পরে বুধবার ব্যাঙ্কের নিজস্ব তদন্তে প্রতারণা ধরা পড়ে।
ব্যাঙ্ক ও পুলিশ সূত্রের খবর, হইচই হতেই ধৃত চন্দন মণ্ডল মঙ্গলবার ওই শাখায় ‘চন্দন নার্সারি’ নাম দিয়ে অ্যাকাউন্ট খোলেন। সে দিনই তাঁর অ্যাকাউন্টে ব্যাঙ্কের তরফে ৩০ লক্ষ টাকার ‘ওভারড্রাফট’ দেওয়া হয়। সে দিন একাধিক ‘প্রতারিত’ গ্রাহককে ওই অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা ফেরত দেওয়া হয়েছে বলে পুলিশ তদন্তে জেনেছে। শিলিগুড়ি থানা চত্বরে দাঁড়িয়ে এ দিন চন্দনবাবু দাবি করেন, “আমাকে স্থায়ী করার কথা বলে ওই কাজ করানো হয়েছে। টাকা অফিসারদের হাতে দিয়ে দিতাম। আমি কিছু ভাগ পেতাম।” বাকি ধৃতেরা অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
কী ভাবে হয়েছে এই জালিয়াতি?
ধৃত ব্যাঙ্ক কর্মীরা।
পুলিশ জেনেছে, কেউ এফডি করতে গেলে চন্দনবাবু তাঁকে ‘সাহায্য’ করার প্রস্তাব দিতেন। নগদ টাকা নিতেন ক্যাশ কাউন্টারে জমা দেওয়ার নাম করে। ব্যাঙ্কের রসিদও গ্রাহককে দেওয়া হতো। কিন্তু, ওই টাকা আদৌ ব্যাঙ্কে জমা পড়ত না। ধৃত ৫ জন তা ভাগাভাগি করে নিতেন বলে পুলিশের সন্দেহ। টাকা জমা না হলেও এফডি সার্টিফিকেট দেওয়া হত কী ভাবে? ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ ও পুলিশ তদন্তের পরে জানিয়েছে, ওই সার্টিফিকেট যে অফিসারের হেফাজতে থাকত, তাঁর ‘অনুপস্থিতি’র সুযোগে (সেই সময় সহকারী ম্যানেজারের হাতেই দায়িত্ব থাকত), কিংবা ‘ভুল বুঝিয়ে’ বা ‘প্রভাবিত’ করে সার্টিফিকেট হাতিয়ে নেওয়া হতে পারে। সার্টিফিকেটে হাতে এফডি-এর অঙ্ক লিখে গ্রাহককে দেওয়া হতো। এই ভাবে তিন বছর ধরে প্রায় ৬৩ লক্ষ টাকার ওই জালিয়াতি প্রাথমিক পর্যায়ে স্পষ্ট হয়েছে বলে পুলিশের দাবি।
ঘটনা হল, ফি বছর ব্যাঙ্কে অডিট হয়ে থাকে। এফডি সার্টিফিকেট কতগুলি পাঠানো হয়েছে ও তা কী পরিমাণ গ্রাহকদের দেওয়া হয়েছে তার হিসেবও অডিটে হয়। এ ক্ষেত্রে কী ভাবে অডিটের নজর এড়িয়ে গেল তা নিয়েও খোঁজখবর চলছে।

বৃহস্পতিবার বিশ্বরূপ বসাকের তোলা ছবি।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.