বর্ষা দেরি করলে যা হয়!
তাপমাত্রার দাপট বেড়েই চলেছে পশ্চিমবঙ্গে। বুধবার ৪৫ ডিগ্রির কোঠায় ছিল শুধু বীরভূম। বৃহস্পতিবার সেই তালিকায় ঢুকে পড়েছে দক্ষিণবঙ্গের আরও তিন জেলা। বাঁকুড়া, পুরুলিয়া এবং বর্ধমান। ওই সব এলাকায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা চলতি সময়ের স্বাভাবিকের থেকে ছয় ডিগ্রিরও বেশি বেড়ে গিয়েছে। সেখানে ‘তীব্র’ তাপপ্রবাহ চলছে বলে জানিয়েছে আলিপুর আবহাওয়া দফতর। ‘তীব্র’ তাপপ্রবাহ বইছে উত্তরবঙ্গের জেলা মালদহেও।
এখানেই শেষ নয়। আজ, শুক্রবার ‘তীব্র’ তাপপ্রবাহের তালিকায় পশ্চিম মেদিনীপুর আর হুগলির নামও উঠে যেতে পারে বলে পূর্বাভাস দিয়েছেন আবহবিদেরা। ‘তীব্র’ না-হলেও এ দিন তাপপ্রবাহ বয়েছে ওই দু’টি জেলায়। তাপপ্রবাহের পরিস্থিতি ছিল হাওড়া, মুর্শিদাবাদ, নদিয়া এবং উত্তরবঙ্গের দুই দিনাজপুরেও। আবহবিজ্ঞানের পরিভাষায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা স্বাভাবিকের থেকে পাঁচ ডিগ্রি বেশি হলেই সেটা তাপপ্রবাহ। আর তাপপ্রবাহকে ‘তীব্র’ বলা হয় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে ছয় ডিগ্রির বেশি হয়ে গেলেই। সেই হিসেবে আজ পশ্চিম মেদিনীপুর ও হুগলিতে ‘তীব্র’ হতে পারে তাপপ্রবাহ।
বঙ্গোপসাগর থেকে ঢোকা জলীয় বাষ্পের পরিমাণ কমে যাওয়ায় এ দিন কলকাতা এবং সংলগ্ন এলাকায় আর্দ্রতা কিছুটা কমেছে। কিন্তু সর্বোচ্চ তাপমাত্রা বুধবারের থেকে বেড়েছে দুই ডিগ্রির মতো। তবে মহানগরীতে এখনই আর তাপপ্রবাহের আশঙ্কা নেই বলেই আবহবিদদের ধারণা। |
বুধবার রাজ্যে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল বীরভূমের শ্রীনিকেতনে, ৪৫ ডিগ্রি। বৃহস্পতিবার শ্রীনিকেতনকে টপকে যায় বর্ধমানের পানাগড় এবং বাঁকুড়া। এ দিন তাপমাত্রার দাপটের দিক থেকে সব থেকে উপরে ছিল পানাগড়। সেখানে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা পৌঁছে যায় ৪৬ ডিগ্রিতে। বাঁকুড়ায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৪৫.৬ ডিগ্রি। বুধবারের থেকে সামান্য বেড়ে শ্রীনিকেতনের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা হয়েছে ৪৫.৩ ডিগ্রি। লু বয়েছে বাঁকুড়া, পুরুলিয়ায়।
তাপমাত্রার বাড়বৃদ্ধির মূলে আছে মৌসুমি বায়ুর ঢিমেতেতালা গতি। আন্দামানে পৌঁছতে দেরি করেছে বর্ষা। পথে আরও যদি দেরি না-ও করে, তা হলেও দক্ষিণবঙ্গে বর্ষা পৌঁছতে এখনও বাকি অন্তত ১৪ দিন। ফলে এই দু’সপ্তাহে দহন কোথায় গিয়ে থামবে, সেটা এখনই বলা
সম্ভব নয়।
তবে সাধারণত এই সময় থেকেই বঙ্গোপসাগরের উপরের বায়ুপ্রবাহে কিছুটা পরিবর্তন ঘটে। স্বাভাবিক নিয়মে আন্দামানে বর্ষা পৌঁছয় ২০ মে। তার পরেই সে বঙ্গোপসাগরের পথ ধরে এগোতে থাকে মায়ানমারের দিকে। এ বার তিন দিন দেরি করে বর্ষা ঢুকেছে ওই দ্বীপপুঞ্জে। বঙ্গোপসাগরীয় অঞ্চলে এমনিতে বায়ুপ্রবাহ প্রায় সব সময়েই অস্থির থাকে। আবহাওয়ার সামান্য হেরফেরও প্রভাব ফেলে তার উপরে। কখনও ঘনঘন নিম্নচাপ অক্ষরেখা কিংবা নিম্নচাপের সৃষ্টি হয়। আবার কখনও বৃষ্টির অনুকূল পরিস্থিতির জন্য হাপিত্যেশ করে বসে থাকতে হয়। এ বারেও হচ্ছে এবং আন্দামানে দেরিতে বর্ষা পৌঁছনোটাই তার কারণ।
তা হলে দক্ষিণবঙ্গের আবহাওয়া বৃষ্টির অনুকূল হবে কবে?
আবহবিদেরা বলছেন, শুক্রবারের মধ্যে পুরো আন্দামানেই মৌসুমি বায়ু ছড়িয়ে পড়ার কথা। তার পরে বঙ্গোপসাগরের পথ ধরে বর্ষা পৌঁছবে মায়ানমারে। পুরো মায়ানমার ঘুরে ১০-১১ দিন পরে সে ঢুকবে মিজোরাম-ত্রিপুরায়। বর্ষার সেই পথটাই নেমে আসবে উত্তরবঙ্গে। কিন্তু এতে দক্ষিণবঙ্গের আখেরে বিশেষ লাভ হবে না বলে জানাচ্ছেন আবহবিদেরা। তাঁরা বলছেন, কেরলে ১ জুন বর্ষা ঢোকে কি না, সেটাই এখন দেখার। কারণ, ৮ জুন নাগাদ বর্ষা কলকাতায় পৌঁছবে কি না, সেটা নির্ভর করছে তার উপরেই। কিন্তু ১ জুন বর্ষা কেরলে ঢুকবে কি না, সেটাই যে এখনও নিশ্চিত নয়!
অগত্যা তাপমাত্রার দাপট সয়ে যাওয়া ছাড়া উপায় নেই।
এ বারের গ্রীষ্ম নিয়ে চিন্তাই কাটছে না মৌসম ভবনের।
|