গত দশবছর ধরে পাশের হার ৯৫ শতাংশেরও বেশি। শেষ দু’বছর ধরে পাশের হার প্রায় ১০০ শতাংশ। এবারও ১৯৪ জনের মধ্যে পাশ করেছে ১৯৩ জন। মুর্শিদাবাদের লালগোলা-নসিপুর পঞ্চায়েতের আইসিআর হাইমাদ্রাসার রেকর্ড এমনই। এই হাইমাদ্রাসা থেকে এ বার ৭১২ পেয়ে মেধাতালিয়ায় জায়গা করে নিয়েছে আবু তালহা। ইলিমপুর, চমকপুর ও রামচন্দ্রপুর নিয়ে ১৯৬৭ সালে গড়ে ওঠে ওই হাই মাদ্রাসা। প্রধান শিক্ষক আব্দুর রউফ সিদ্দিকি জানান, এলাকায় সচেতনতা ফিরেছে মাদ্রাসাকে ঘিরে। গত দশ বছরে বরাবরই এখানে পাশের হার ৯৫ শতাংশের উপরে। এলাকার বহু পরিবার থেকেই প্রথম প্রজন্মের পড়ুয়ারা ভর্তি হচ্ছেন এখানে। আরেক শিক্ষকে সৌমিত্র চক্রবর্তী বলেন, “যখন চাকরিতে ঢুকি তখন সংশয় ছিল এই প্রত্যন্ত এলাকায় কতখানি কাজ করতে পারব তা নিয়ে। কিন্তু এখন জানি দারিদ্রসীমার নিচে থাকা পরিবার থেকেও আবু তালহার মতো ছাত্রেরা উঠে আসতে পারে।”
তবে ২৩০০ ছাত্রছাত্রীর ওই মাদ্রাসায় সমস্যাও রয়েছে বেশ কিছু। প্রধান শিক্ষক বলেন, “গত বছর থেকে বিজ্ঞান বিভাগ চালু হওয়ায় প্রয়োজন বেড়েছে। দরকার কম্পিউটার রুম, ল্যাবরেটরি, গ্রন্থাগার। বিজ্ঞানের দামি বই গ্রন্থাগারে রাখা দরকার।” হাই মাদ্রাসার পাশেই চাটাইয়ের ঘরে থাকেন পেশায় হকার মোস্তাফা হোসেন। তারই ছেলে আবু তালহা। ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার ইচ্ছে নিয়ে ইতিমধ্যেই একাদশ শ্রেণিতে ভর্তিও হয়ে গিয়েছে আল আমিন মিশনের ধূলিয়ান ক্যাম্পাসে। কিন্তু সেখানে বিজ্ঞান নিয়ে পড়ার যে বিপুল খরচ তাতে শেষ পর্যন্ত পড়া চালাতে পারবে কী না তা জানে না সে। মা মাজেদা বিবি বলেন, “আমি অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পড়েছি। ওর বাবাও উচ্চ মাধ্যমিকের গন্ডি পেরোয়নি। ওকে নিয়ে আমার গর্ব হয়। যত কষ্টই হোক তবু ওকে পড়াব।” দাদা আবু তালেব বলেন, “ফল বেরোনোর আগে থেকেই ভাই ধুলিয়ান ক্যাম্পাসে। মার্কশিট দেখাতে নিয়ে গিয়েছিলাম। কেঁদে ফেলেছিল ভাই।” আবু তালহার লেখাপড়ার অদম্য ইচ্ছের খোঁজ পেয়ে গিয়েছেন নতুন স্কুলের শিক্ষকেরাও। আল আমিন মিশনের শিক্ষক বাবুল আখতার বলেন, “দু’মাস আগেই এখানে ভর্তি হয়েছে ছেলেটি। পড়াশোনায় তার আগ্রহ ও একাগ্রতা অন্য ছাত্রদের উৎসাহ দেয়।” |