পরিবর্তনের পরে আশা
সুবিচার চাইছেন মাওবাদী সন্দেহে নিগৃহীত যুবক
মাওবাদী সন্দেহে নিরীহ মানুষকে হেনস্থার অভিযোগ উঠেছে অনেকবারই। প্রতিবাদে বিস্তর আন্দোলনও হয়েছে। ২০১০ সালের এ রকমই একটি অভিযোগের ‘বিহিত’ করতে পশ্চিম মেদিনীপুরের গোয়ালতোড়ের কুলডাঙা গ্রামে অভিযোগকারী সঞ্জয় মান্না নামে এক ছোট ব্যবসায়ীর বাড়িতে তদন্তে গেলেন ডিএসপি পদমর্যাদার পুলিশ-কর্তা। সঞ্জয়বাবু আশায় বুক বেঁধেছেনএ বার সুবিচার মিলবে।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, কুলডাঙার পাশের গ্রাম ভাণ্ডারপুরের বাসিন্দা সঞ্জয় সার নামে এক যুবক ‘মাওবাদী স্কোয়াড সদস্য’। তিনি অনেকদিন থেকেই ‘ঘরছাড়া’। ২০১০ সালের ১ এপ্রিল সকালে সেই সঞ্জয় সারের খোঁজেই তল্লাশিতে গিয়েছিল যৌথ বাহিনী। ভালুকবাসা, রূপাখাগড়া, কেশিয়ার জঙ্গলঘেরা এই এলাকা তখন মাওবাদীদের ঘাঁটি। তবে তাঁকে তারা পায়নি। কিন্তু পাশের গ্রামের সঞ্জয় মান্নাকে মারধর করা হয় বলে অভিযোগ। সঞ্জয়বাবুর অভিযোগ, নাম বিভ্রাটে তাঁকেই মাওবাদী স্কোয়াড সদস্য বলে ভেবে নিয়েছিলেন যৌথ বাহিনীর জওয়ানেরা। অথচ দু’জনের পদবি আলাদা, তাঁরা দু’টি আলাদা গ্রামেরও বাসিন্দা। শুধু তাই নয়, তিনি নিজের পরিচয় দেওয়ার পরেও জওয়ানেরা তা বিশ্বাস করতে চায়নি। সঞ্জয়বাবু জানান, তাঁর মেয়ে চম্পার উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা ছিল সে দিন। মেয়েকে গাড়িতে তুলতে বাইরে বেরিয়েছিলেন। সঞ্জয়বাবুর কথায়, “হঠাৎ কয়েকজন জওয়ান আমাকে ঘিরে ফেলে। জিজ্ঞেস করে, ‘তুই কি সঞ্জয় সার?’ আমি ‘না’ বলি। কিন্তু তারপরেই মারধর শুরু হয়। পরে কোনওক্রমে পালিয়ে একটা মাঠে গিয়ে লুকিয়ে ছিলাম।” এ দিকে, যৌথ বাহিনী সঞ্জয়বাবুর বাড়িতে ঢুকে তাঁর বৃদ্ধ বাবা বঙ্কিম মান্না, স্ত্রী বিষ্ণুপ্রিয়াদেবী ও স্কুলপড়ুয়া কিশোর ছেলে সত্যমকে মারধর করে বলে অভিযোগ। সেই সঙ্গে অভিযোগ, তল্লাশির নামে জওয়ানেরা বেশ কিছু টাকা, একটি সোনার হার ও ক্যামেরা লুঠ করে।
পুলিশকে ঘটনার কথা বলছেন সঞ্জয় মান্না। ছবি: রামপ্রসাদ সাউ
সেই অভিযোগের তদন্তেই বৃহস্পতিবার সঞ্জয়বাবুর বাড়িতে এসেছিলেন ডিএসপি (অপারেশন)-এর দায়িত্বপ্রাপ্ত কুন্তল বন্দ্যোপাধ্যায়। সঞ্জয়বাবু ও তাঁর পরিবারের সব সদস্যের সঙ্গে কথা বলেন তিনি। পরে ডিএসপি বলেন, “পুলিশ সুপারের নির্দেশে তদন্তে এসেছিলাম। ওঁদের কথা শুনলাম। সিআরপি-র সঙ্গেও কথা বলব। তার পর রিপোর্ট দেব।” তবে সঞ্জয়বাবুদের বাড়িতে পুলিশ এর আগেও গিয়েছিল। কিন্তু ‘সুবিচার’ মেলেনি বলে অভিযোগ। সঞ্জয়বাবু বলেন, “ঘটনার চার-পাঁচ দিন পরেই গোয়ালতোড় থানায় যাই। আইসি অভিযোগ নেননি। তৎকালীন এসপি মনোজ বর্মাকে একাধিকবার জানিয়েছি। গিয়েছি মানবাধিকার কমিশনে। তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যকেও চিঠি দিয়েছিলাম। কিন্তু কোনও বিহিত হয়নি। তার পরে দু’-দু’বার পুলিশ বাড়িতে এসেছে, কিন্তু সে দিন কিছুই হয়নি বলে রিপোর্ট দিয়েছে।” রাজ্যে পালাবদলের পর আইনমন্ত্রী মলয় ঘটক এবং মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে চিঠি দিয়ে আবার সব জানান তিনি। পুলিশ সূত্রের খবর, গত বছর নভেম্বরে এই অভিযোগের তদন্তের জন্য জেলার পুলিশ সুপারের কাছে মুখ্যমন্ত্রীর দফতর থেকে নির্দেশ আসে। পুলিশ সুপার সুনীল চৌধুরী বলেন, “নির্দেশ মতোই এ দিন তদন্তে গিয়েছিলেন ডিএসপি।” এ বার তদন্তে ভরসা রাখছেন সঞ্জয়বাবু। তাঁর কথায়, “আমার আস্থা রয়েছে। এ বার সুবিচার পাবই।”


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.