বিহারে নীতীশের সেই ‘জনমোহিনী’ ভাবমূর্তিতে কি চিড় ধরছে? তাঁর বহুপরিকল্পিত ‘(জন)সেবাযাত্রা’-য় বেরিয়ে পর পর দু’দিন বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমার জনতা-জনার্দনেরই বিক্ষোভের মুখে পড়ায় রাজ্য-রাজনীতিতে এই প্রশ্নটি ক্রমশ বড় হয়ে দেখা দিয়েছে।
আজ বক্সারের কিলা ময়দানে, মুখ্যমন্ত্রীর জনতা দরবারে দফায় দফায় মানুষ বিক্ষোভ দেখায়। সেখানে পানি-বিজলি-সড়কের দাবি যেমন ছিল, তেমনই ছিল স্কুল ভবন তৈরির দাবি। স্থানীয় একটি বালিকা বিদ্যালয়ের ছাত্রীরা তাদের স্কুল ভবন তৈরি এবং স্কুলে বিদ্যুতের ব্যবস্থার দাবিতে বিক্ষোভ দেখায়। এ ছাড়াও বিজেপি-র ছাত্র সংগঠন অখিল ভারতীয় বিদ্যার্থী পরিষদের (এবিভিপি) সদস্যরাও কলেজে ইউনিয়ন নির্বাচনের দাবিতে বিক্ষোভ দেখায়। উল্লেখ্য, জোট সরকারের শরিক বিজেপি-র ছাত্র সংগঠন এবিভিপি। তবে পুলিশ আজ প্রথম থেকেই সতর্ক ছিল। জনতা দরবারে বিক্ষোভকারীদের আসতেই দেয়নি তারা। নীতীশেরও বিক্ষোভকারীদের দাবির কথা শোনা হয়নি।
স্থানীয় জেডিইউ নেতা জ্ঞানেন্দ্র সিংহ বলেন, “স্বাধীনতার পরে কোনও মুখ্যমন্ত্রী এ ভাবে জনতার সঙ্গে দেখা করেননি। মাঠে-ময়দানে এসে মানুষের সমস্যার কথা শোনেননি। নীতীশ কুমার যখন মানুষের স্বার্থে এই কাজ করছে তখন এখানকার বিরোধী দলের লোকজন রাজনৈতিক উদ্দেশ্য নিয়ে ঝামেলা পাকানোর চেষ্ট করছে।” পাশাপাশি, স্থানীয় আরজেডি নেতা সম্রাট চৌধুরীর বক্তব্য, “মানুষের বিক্ষোভকে সরকার পক্ষের লোকেরা রাজনৈতিক রঙ লাগিয়ে দিয়ে আসল সমস্যাকে চাপা দেওয়ার চেষ্টা করছেন। নীতীশ কুমার যে সব প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন তা পূরণ না হওয়াতেই মানুষ স্বতঃস্ফুর্ত ভাবে তাঁদের ক্ষোভ জানাচ্ছেন। এখানে বিরোধী দলের কোনও ভূমিকাই নেই।”
গত কাল বক্সার জেলারই চৌসায় গ্রামবাসীরা নীতীশের যাত্রাপথে বিক্ষোভ দেখান। ভিড় থেকে অতি-উৎসাহী কয়েকজন নীতীশের কনভয়ের কয়েকটি গাড়িকে লক্ষ্য করে ইট-পাটকেলও ছোড়ে। আজ, সেবাযাত্রার দ্বিতীয় দিনে ইট-পাটকেল না পড়লেও, বক্সার সদরের কিলা ময়দানে মুখ্যমন্ত্রীর জন-দরবারকে ঘিরে যে ভাবে সাধারণ মানুষ বিক্ষোভ দেখিয়েছে তাতে ভ্রূ কুঁচকে গিয়েছে তাঁর দল জেডিইউয়ের। বিষয়টিকে তাঁরা ‘বিরোধী আরজেডি-র সাজানো বিক্ষোভ’ বলে পাশ কাটাতে চাইলেও বিষয়টি যে অত সহজ নয়, দলীয় নেতৃত্ব একান্তে তা স্বীকারও করছেন। কারণ এই বিক্ষোভে কোনও রাজনৈতিক স্লোগান ছিল না। ছিল, পানি-বিজলি-সড়কের দাবি।
জেডিইউ নেতৃত্বের একাংশের বক্তব্য, “তর্কের খাতিরে যদি আমরা ধরেও নিই যে এর পিছনে আরজেডি রয়েছে, তবে স্বীকার করতেই হবে যে রাজ্যে অপ্রাসঙ্গিক হয়ে যাওয়া লালুপ্রসাদের দলকে আম-জনতা ফের গুরুত্ব দিচ্ছে। সেটাও আমাদের পক্ষে চিন্তার বিষয়।” তাঁদের কথায়, মানুষ মৌলিক চাহিদার কথা জানাচ্ছে। অর্থাৎ ছ’বছরে কোথাও ফাঁক থেকে গিয়েছে। দলের এক শীর্ষ নেতার বক্তব্য, “ফাঁকটা কেন তৈরি হচ্ছে তা দেখতে হবে। নীতীশজি পটনায় এলে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করব।” |