সেনাবাহিনীর কয়েকজন নীচুতলার অফিসার ও জওয়ানের বেআইনি কাজের জেরে ৩ কোরের জিওসি, লেফটেন্যান্ট জেনারেল দলবীর সিংহ সুহাগকে শো-কজ করলেন সেনাপ্রধান জেনারেল বিজয়কুমার সিংহ।
গত বছর ২১ ডিসেম্বর রাতে যোরহাটের বাসিন্দা এক ঠিকাদার, পুনা গগৈয়ের বাড়িতে হানা দেয় সেনাবাহিনীর একটি দল। দলে এক মহিলাও ছিলেন। কোনও কারণ না দেখিয়ে, তল্লাশির কোনও পরোয়ানা ছাড়াই পুনাবাবুর রৌরিয়ার বাড়ি তছনছ করেন জওয়ানরা। পুনাবাবু বাড়িতে ছিলেন না। তাঁর পরিবারের অভিযোগ, বাড়ির লোককে বেঁধে রেখে সোনা, নগদ টাকা, মোবাইল, ল্যাপটপ ও পুনাবাবুর লাইসেন্স থাকা পিস্তল নিয়ে সেনারা চলে যায়। পুনাবাবুর ঘর থেকে লুঠ হওয়া মোবাইল থেকে এক সেনা হাবিলদার নিয়মিত বাড়িতে ফোন করছিলেন। সেই সূত্র ধরেই মোবাইলটির খোঁজ পায় পুলিশ।
ঘটনা জানাজানি হতে পুলিশ ও সেনার কাজিয়া শুরু হয়। যোরহাটের পুলিশ সুপার সংযুক্তা পরাশরের নির্দেশে পুলিশবাহিনী ডিমাপুরে সেনাবাহিনীর রাঙাপাহাড় ঘাঁটিতে হানা দেয়। সেনা দাবি করে, পুনাবাবু আলফার সঙ্গে যুক্ত, এই খবরের ভিত্তিতেই তারা তাঁর বাড়িতে হানা দেয়। সেনাঘাঁটি থেকে পুনাবাবুর বাড়ির মালপত্রও উদ্ধার হয়। সংযুক্তাদেবী অবশ্য সেনার সাফাই মানেননি। তিনি সাফ জানান, স্থানীয় থানায় না জানিয়ে অতর্কিতে কোনও পরিবারে লুঠতরাজ চালানো, কোনও তদন্ত বা অভিযানের সঠিক পন্থা হতে পারে না। পুলিশের চাপে দোষ স্বীকার করে সেনাবাহিনী। আটক হন এক হাবিলদার।
ইস্টার্ন কম্যান্ড ঘটনাটি নিয়ে ‘কোর্ট অফ এনকোয়ারি’র নির্দেশ দেয়। সেই বিচারের ভার ছিল হবু সেনাপ্রধান তথা ইস্টার্ন কম্যান্ডের বর্তমান জিওসি-ইন-সি লেফটেন্যান্ট জেনারেল বিক্রম সিংহের উপরে। সেনা তদন্তে ওই অফিসার-জওয়ানরা দোষী সাব্যস্ত হন। সেনা সূত্রের খবর, সেই ঘটনাকে সামনে রেখেই ৩ নং কোরের জিওসি লেফটেন্যান্ট জেনারেল সুহাগকে শো-কজ করলেন বর্তমান সেনাপ্রধান। উল্লেখ্য, আগামী ৩১ মে জেনারেলের কাছ থেকে সেনাপ্রধানের কাজ বুঝে নেবেন ইস্টার্ন কমান্ডের বর্তমান জিওসি-ইন-সি লেফটেন্যান্ট জেনারেল বিক্রম সিংহ। সেনাবাহিনীর বর্তমান ‘সিনিয়রিটি’ অনুযায়ী ২০১৪ সালে বিক্রম সিংহের পরে লেফটেন্যান্ট জেনারেল দলবীর সিংহ সুহাগেরই সেনাপ্রধান হওয়ার কথা। এই ‘শো কজ’ তাঁর সেনাপ্রধান হওয়ার পথে অন্যতম অন্তরায় হয়ে উঠল।
সেনা সূত্রের বক্তব্য, সেনাবাহিনীতে জেনারেল বিজয়কুমার সিংহের সঙ্গে বিক্রম-সুহাগ গোষ্ঠীর দ্বন্দ্ব এই ঘটনায় একেবারে সামনে এসে পড়ল। উল্লেখ্য, নতুন সেনাপ্রধানের নিয়োগের সঙ্গে সঙ্গে সেনাবাহিনীর ছ’টি আঞ্চলিক কম্যান্ডার ও ট্রেনিং কম্যান্ডার পদে নিয়োগ হবে। কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার নিয়োগ বিষয়ক কমিটির আজই এই ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথা ছিল। তাতে সুহাগের জিওসি-ইন-সি পদে উত্তরণের বিষয়টিও ছিল। কিন্তু এই শো কজের পর নিয়োগ কমিটি আপাতত পুরো বিষয়টি স্থগিত রেখেছে। |