১৯৫৩ সাল বা তার পর থেকে কাশ্মীরে জারি হওয়া আইন ও সংবিধানের ধারাগুলি খতিয়ে দেখার সুপারিশ করলেন কেন্দ্রের নিযুক্ত তিন মধ্যস্থতাকারী। এই কাজের জন্য একটি সাংবিধানিক কমিটি গঠন করা উচিত বলে রিপোর্টে জানিয়েছেন তাঁরা। তাঁদের মতে, কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা থাকা উচিত। ২০১০ সালে কাশ্মীরে প্রবল বিক্ষোভের জেরে দিলীপ পদগাঁওকর, রাধা কুমার ও এম এম আনসারিকে মধ্যস্থতাকারী হিসেবে নিয়োগ করেছিল কেন্দ্র। কেন্দ্র-রাজ্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে বেশ কিছু ক্ষমতা জম্মু-কাশ্মীর সরকারের হাতে দেওয়ার পক্ষে সওয়াল করেছেন মধ্যস্থরা। এখন রাষ্ট্রপতির নির্দেশে কেন্দ্রীয় সরকারের তৈরি আইন জারি করা হয় জম্মু-কাশ্মীরে। এই পদ্ধতি বন্ধ করার প্রস্তাব দিয়েছেন মধ্যস্থরা। তাঁদের সুপারিশ অনুযায়ী, প্রতিরক্ষা, অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা, বিদেশ নীতি, বিদ্যুৎ, জল সম্পদের মতো কয়েকটি বিষয় ছাড়া কেন্দ্রীয় আইন এই রাজ্যে প্রযোজ্য হবে না। এখনই বিচ্ছিন্নতাবাদী হুরিয়ত কনফারেন্সের সঙ্গে কেন্দ্রের আলোচনা শুরু হওয়া উচিত বলেও মনে করেন পদগাঁওকর ও তাঁর সহযোগীরা। আর্থিক বিষয়ে জম্মু-কাশ্মীরকে আরও স্বায়ত্তশাসন দেওয়া উচিত বলেও জানিয়েছেন তাঁরা। মধ্যস্থদের মতে, পাক-অধিকৃত কাশ্মীরের সঙ্গে বাণিজ্যিক যোগ আরও বাড়ানো উচিত।
১৯৫৩ সালের আগে পর্যন্ত জম্মু-কাশ্মীরের ক্ষেত্রে মূলত প্রতিরক্ষা, বিদেশ নীতি, যোগাযোগ ও অর্থ সংক্রান্ত আইনেই সীমাবদ্ধ ছিল কেন্দ্রের এক্তিয়ার। তার পর থেকে পরিস্থিতি বদলায়। ১৯৫২ সালে কেন্দ্র ও শেখ আবদুল্লার মধ্যে দিল্লি চুক্তির ফলে ধাপে ধাপে সংবিধানের সব ধারা ও কেন্দ্রীয় আইনের আওতায় চলে আসে ওই রাজ্য। তবে সংবিধানের ৩৭০ নং ধারায় জম্মু-কাশ্মীরের কিছু বিশেষ মর্যাদার কথা স্বীকারও করা হয়। ১৯৫৩ সালের আগের অবস্থা ফিরিয়ে আনা সম্ভব নয় বলে মেনে নিয়েছেন পদগাঁওকররা। কাশ্মীরে সশস্ত্র বাহিনী ক্ষমতা আইন (আফস্পা) ও উপদ্রুত এলাকা আইন জারির বিষয়টি খতিয়ে দেখা উচিত বলে মন্তব্য করেছেন তাঁরা মধ্যস্থদের রিপোর্টকে সরাসরি খারিজ করেছে হুরিয়ত কনফারেন্স।
নরমপন্থী হিসেবে পরিচিত হুরিয়ত নেতা মিরওয়াইজ ওমর ফারুক বলেছেন, কাশ্মীর সমস্যার রাজনৈতিক সমাধান প্রয়োজন। মধ্যস্থদের রিপোর্টে কাশ্মীরের মানুষের আস্থা বাড়ানোর জন্য কিছু পদক্ষেপের কথা বলা হয়েছে। তাতে কোনও লাভ হবে না। কট্টরপন্থী হুরিয়ত নেতা সৈয়দ আলি শাহ গিলানির মুখপাত্র জানিয়েছেন, তাঁরা মধ্যস্থ কমিটির অস্তিত্বই মেনে নেননি। ফলে, এই রিপোর্ট নিয়ে মাথা ঘামানোর কোনও প্রয়োজন নেই। বিজেপি মুখপাত্র রবিশঙ্কর প্রসাদ জানিয়েছেন, জম্মু-কাশ্মীর পুরোপুরি ভারতের অংশ। সেই পরিস্থিতির কোনও পরিবর্তন করা সম্ভব নয়। |