মাওবাদী অস্ত্রভাণ্ডারের ‘মণিপুরী’ উৎস ফাঁস
শ্চিমবঙ্গের জঙ্গলমহল হোক বা ছত্তীসগঢ়ের দণ্ডকারণ্য, মাওবাদীদের অস্ত্র প্রশিক্ষণে ও হামলার ছক তৈরিতে সাহায্য করছে উত্তর-পূর্বের বিভিন্ন জঙ্গি সংগঠন। এমনকী, মণিপুর-মিজোরাম থেকে মাওবাদীরা কাছে নিয়মিত অস্ত্রের জোগানও পেয়ে এসেছে। সম্প্রতি কলকাতায় এক ‘মাওবাদী নেতা’ এবং শিলিগুড়িতে এক ‘মণিপুরী জঙ্গি’কে গ্রেফতারের পরে এমনটাই দাবি করছেন গোয়েন্দারা।
গোয়েন্দারা দীর্ঘ দিন ধরেই বলে আসছেন যে, মণিপুরী জঙ্গি সংগঠন পিপলস লিবারেশন আর্মি (পিএলএ) চিন ও মায়ানমার থেকে অবৈধ অস্ত্র আমদানি করে মাওবাদীদের হাতে দিচ্ছে।
সম্প্রতি পিএলএ-র অন্যতম এক শীর্ষ নেতা ধরা পরার পরে এই ‘তত্ত্ব’ আরও মজবুত হয়। দিন কয়েক আগে আর্নল্ড সিংহ নামে ওই পিএলএ--নেতাকে শিলিগুড়িতে গ্রেফতার করে এনআইএ। গোয়েন্দাদের দাবি: আর্নল্ড জেরায় স্বীকার করেছেন যে, ২০১০-এ তিনি সারান্ডার জঙ্গলে গিয়ে মাওবাদীদের গেরিলা যুদ্ধ ও বিভিন্ন আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারের তালিম দিয়েছিলেন।
এবং গত ২১ এপ্রিল কলকাতার ধর্মতলায় অজয় চন্দ নামে কালনার এক যুবকের গ্রেফতারির পরে উত্তর-পূর্বের যোগসূত্র ‘সন্দেহাতীত’ ভাবে প্রমাণিত হয়েছে বলে গোয়েন্দাদের দাবি। সে দিন অজয়কে ১৬ রাউন্ড কার্তুজ সমেত পাকড়াও করে কলকাতা পুলিশের স্পেশ্যাল টাস্ক ফোর্স (এসটিএফ)। গোয়েন্দা সূত্রের বক্তব্য: অজয়কে জেরা করতে গিয়ে জানা যায়, তিনি মাওবাদী সংগঠনের নেতা। ইন্দ্রনীল চন্দ ওরফে ঝুলন ওরফে রাজ নামেও তিনি পরিচিত। অজয়ের একাধিক ডেরায় হানা দিয়ে বেশ কিছু মাওবাদী নথিপত্র মিলেছে। শুধু তা-ই নয়, উত্তর-পূর্বের জঙ্গিদের থেকে তাঁরা কী ভাবে হাতিয়ারের সরবরাহ পেতেন, অজয় সে সম্পর্কেও ‘বিস্তারিত তথ্য’ জুগিয়েছেন বলে গোয়েন্দা-সূত্রের দাবি।
পুলিশ সূত্রের খবর: বুধবার অজয়কে আদালতে তুলে সাত দিনের জন্য নিজেদের হেফাজতে নিয়েছে এনআইএ। অন্য দিকে মঙ্গলবার গুয়াহাটিতে আর্নল্ড-সহ তিন পিএলএ নেতার নামে চার্জশিট পেশ হয়েছে। মাও-পিএলএ যোগসূত্র গড়ে উঠল কী ভাবে?
পুলিশ-সূত্রের ব্যাখ্যা: বছর সাতেক আগে অসমের কার্বি আংলং জেলায় প্রথম ঘাঁটি গেড়েছিল মাওবাদীদের প্রথম অসম ইউনিট। কিন্তু আলফা নেতা পরেশ বরুয়ার সঙ্গে বনিবনা না-হওয়ায় তারা অসম থেকে পাততাড়ি গোটায়। পরে মূলত চিনের চাপে পিএলএ-ই দু’পক্ষকে আলোচনায় বসায়। বছর তিনেক বাদে, ২০০৮-এ বিহারে মাওবাদী এবং পিএলএ যৌথ বিবৃতি দিয়ে জানায়, বাম আদর্শের ভিত্তিতে তারা ‘সংগ্রামে’ নামবে। গোয়েন্দাদের একাংশের অভিমত, পরবর্তী কালে উত্তর-পূর্বে হিন্দিভাষী-হত্যার প্রেক্ষিতে মণিপুর-অসমের জঙ্গিগোষ্ঠীর সঙ্গে মাওবাদীরা প্রকাশ্য সম্পর্ক না-রাখলেও ‘সামরিক সহযোগিতা’র সম্পর্কটি রয়ে যায়। গোয়েন্দাদের দাবি, কিষেণজি জঙ্গলমহলে সংঘর্ষে নিহত হওয়ার আগে কেএলও নেতা জীবন সিংহের সঙ্গে অসমেই গা ঢাকা দিয়ে ছিলেন। পিএলএ’র পরিকল্পনা ছিল তাঁকে মায়ানমারে পাচার করার। তার আগেই
পশ্চিমবঙ্গ থেকে ‘জরুরি তলব’ পেয়ে ফিরে এসেছিলেন তিনি।
এক গোয়েন্দা-কর্তা জানাচ্ছেন, গত ক’বছর ইস্তক অস্ত্র জোগানের সুবাদেই পিএলএ-মাওবাদী ঘনিষ্ঠতা বেড়েছে। এমনকী, মাওবাদীদের হাতিয়ার সরবরাহের কাজ সুষ্ঠু ভাবে সম্পন্ন করতে খাস কলকাতায় ‘অফিস’ খুলেছিল পিএলএ। রাজ্যের বিভিন্ন জেলায় খোলা হয়েছিল শাখা দফতর। পুলিশের দাবি, শিলিগুড়ির এক কলসেন্টারের কর্মী আর্নল্ড এবং এন ওয়াংবা ওরফে দিলীপ সিংহ নামে আর এক পিএলএ নেতা অস্ত্র সরবরাহের ব্যাপারটা তত্ত্বাবধান করতেন। অন্য দিকে হাতিয়ারের গুণমান যাচাই করতে কলকাতার উপকণ্ঠে ঘাঁটি গেড়েছিলেন মাওবাদী ‘অস্ত্র বিশেষজ্ঞ’ সদানালা রামকৃষ্ণ। উল্লেখ্য, উজানি অসমে মাওবাদী-ঘাঁটির অস্তিত্বের কথা অসমের মুখ্যমন্ত্রী তরুণ গগৈও স্বীকার করেছেন।
এই অস্ত্রভাণ্ডারের মূল উৎস কোথায়?
বিভিন্ন নিরাপত্তা সংস্থা সূত্রে জানা গিয়েছে, মূলত মায়ানমার থেকে ভারতীয় ভূখণ্ডে হাতিয়ার ঢোকায় উত্তর-পূর্বের জঙ্গিরা। মায়ানমারে নাগা-মণিপুরি জঙ্গিদের সঙ্গে চিনা স্টেট আর্মি, শান স্টেট আর্মি, ওয়া ও কাচিন সেনা অস্ত্রের কারবার চালায়। এ প্রসঙ্গে উঠে এসেছে ‘ইউনাইটেড ওয়ারফ্রন্ট আর্মি’ নামে এক অস্ত্র ব্যবসায়ী সংস্থার নামও, যার সদর চিনের ইউনান প্রদেশে। কিন্তু এই ‘সরবরাহ-সূত্রে’ সে ভাবে আঘাত হানা যাচ্ছে না কেন?
গোয়েন্দাদের একাংশের বক্তব্য: নাগা জঙ্গিদের মদত ছাড়া ডিমাপুরে অস্ত্র হস্তান্তর সম্ভব নয়। এনএসসিএন-আইএম গোষ্ঠীর অস্ত্রপাচারের মূল পাণ্ডা অ্যান্টনি শিমরেকে কাঠমান্ডুতে গ্রেফতার করেছে এনআইএ। কিন্তু এখন আইএমের সঙ্গে সরকারের শান্তি-আলোচনা চলছে বলেই নিরাপত্তাবাহিনী বেশি সক্রিয়তা দেখাতে পারছে না।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.