মোদীকে তুষ্ট করে গডকড়ীর মেয়াদ
বাড়ানোর পথ পরিষ্কার করল সঙ্ঘ
কেই বলে ‘দিবে আর নিবে’।
সকালে সঞ্জয় জোশীর সঙ্গে সংঘাতে নরেন্দ্র মোদীর পাশে দাঁড়ালেন মোহন ভাগবত। আর সন্ধ্যা গড়াতে গড়াতে তার পরিবর্তে বিজেপি সভাপতির পদে তাঁর পছন্দের নিতিন গডকড়ীর জন্য আরও একটা মেয়াদ নিশ্চিত করে নিলেন। সেই লক্ষ্যে দলের সংবিধানে যে সংশোধন করা হয়, তাতে সম্মতি দেন মোদী। ফলে এ বার নির্বাচিত হলে ২০১৪ সালে লোকসভা ভোটের সময় দলীয় সভাপতি থাকবেন গডকড়ীই।
বিজেপি সভাপতি পদে গড়কড়ীর মেয়াদ তিন বছরের মেয়াদ ডিসেম্বরে শেষ হচ্ছে। এত দিন দলীয় সংবিধান অনুযায়ী কেউ লাগাতার দ্বিতীয় দফার জন্য সভাপতি পদে প্রার্থী হতে পারতেন না। কিন্তু আজ দলের সংবিধানে সংশোধন এনে দ্বিতীয় বারের জন্য কাউকে প্রার্থী হওয়ার অনুমোদন দেওয়া হল। সংশোধনটি প্রস্তাব করলেন প্রাক্তন সভাপতি রাজনাথ সিংহ। তাঁকে সমর্থন করলেন আর এক প্রাক্তন বেঙ্কাইয়া নায়ডু। তার পরে ধ্বনি ভোটে সেটি মঞ্জুর হয়ে গেল। তত ক্ষণে এতে সম্মতি দিয়েছেন মোদী।
কেন হঠাৎ তাঁদেরই ঘনিষ্ঠ সঞ্জয় জোশীকে ‘বলি’ দিয়ে মোদীকে তুষ্ট করলেন সঙ্ঘ প্রধান মোহন ভাগবত? আসলে এই মুহূর্তে বিজেপি কর্মীদের অধিকাংশই মোদীকে ভবিষ্যতে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দেখতে চাইছেন। শুধু কর্মীরাই নন, আজ ইয়েদুরাপ্পাও জানিয়েছেন, এই জাতীয় কর্মসমিতির বৈঠকেই মোদীকে প্রধানমন্ত্রীর পদে দলীয় প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা করা হোক। এই পরিস্থিতিতে সঞ্জয় জোশীর সঙ্গে মতান্তরের মতো ‘সামান্য’ বিষয়ে মোদীকে হাতছাড়া করতে চাইছেন না সঙ্ঘ নেতৃত্ব। তাই সঞ্জয়কেই ইস্তফা দিতে বলা হয়। বস্তুত, আরএসএসের হস্তক্ষেপে গত রাতেই জাতীয় কর্মসমিতি থেকে সঞ্জয়ের ইস্তফা আদায় করে নেন বিজেপি সভাপতি নিতিন গডকড়ী। মোদীকেও টেলিফোনে সে কথা জানিয়ে দেন তিনি। তার পরেই মুম্বই আসতে রাজি হন মোদী। গোটা ঘটনায় দলে আধিপত্য কায়েমে গুজরাতের মুখ্যমন্ত্রী আরও এক ধাপ এগোলেন বলেই মনে করা হচ্ছে।
জাতীয় কর্মসমিতির বৈঠকে বসুন্ধরা রাজে ও নরেন্দ্র মোদী। ছবি: পিটিআই
গুজরাত বিজেপিতে মোদীর প্রতিপক্ষ কেশুভাই পটেলকে উস্কে দেওয়া নিয়ে সঞ্জয় জোশীর সঙ্গে মোদীর বিবাদ। সম্প্রতি উত্তরপ্রদেশে সঞ্জয়কে দায়িত্ব দেওয়ায় তা ফের প্রকট হয়। কেশুভাই এখনও মোদীর বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে মন্তব্য করে চলেছেন। তাই মোদীর ধারণা, সঞ্জয়ও তাঁর বিরুদ্ধে সক্রিয়। তাই তাঁকে সরাতে বহু দিন ধরেই গডকড়ীকে চাপ দিচ্ছিলেন মোদী। দিল্লিতে গত কর্মসমিতির বৈঠকে যাননি। পাঁচ রাজ্যে বিধানসভা ভোটে প্রচারে বেরোননি। মুম্বইতেও আসবেন কি না, তা নিয়ে সংশয় জিইয়ে রাখেন। সঞ্জয় জোশীকে নিয়ে যখন সঙ্ঘ এবং দল কোনও সিদ্ধান্ত নিচ্ছে না, তখন গত রাতে মোদী গুজরাতের কোনও প্রতিনিধিকে মুম্বই না যাওয়ার নির্দেশ দেন। দলকে হুমকি দেন, প্রয়োজনে জাতীয় কর্মসমিতি ও পরিষদ থেকে তিনি নিজেই ইস্তফা দিয়ে দেবেন।
মোদীর এই চাপের মধ্যে হস্তক্ষেপ করেন মোহন ভাগবত।
কাল রাত থেকে যে নাটক চলছিল, আজ সকালে ফের তার যবনিকা ওঠে। এ দিন সকাল ১১টায় বৈঠক শুরুর কথা থাকলেও গডকড়ী অনেক দেরিতে এসে পৌঁছন। আসলে মোদীর সঙ্গে কথা বলে তাঁর মুম্বই আগমন সুনিশ্চিত করেই সভায় আসেন গডকড়ী। এসেই ঘোষণা করেন, “মোদী মুম্বইয়ের বৈঠকে আসছেন। সঞ্জয় জোশী নিজেই বিবাদের কেন্দ্র হতে চাননি। তাই ইস্তফা দিয়েছেন।” কিছু পরে মোদীও জানিয়ে দেন, তিনি মুম্বই আসছেন। তাৎপর্যপূর্ণ হল, বিজেপি জাতীয় কর্মসমিতির সদস্য না হওয়া সত্ত্বেও আজ সারাদিন এখানে ছিলেন আরএসএস নেতা সুরেশ সোনি। সোনিই এত দিন মোদীর সঙ্গে দৌত্য করছিলেন। মনে করা হচ্ছে, আজ তিনি সঙ্ঘের হয়েই পুরো ঘটনাপ্রবাহের প্রতি নজর রাখছিলেন।
বিজেপি সূত্রের মতে, মোদীর এই চাপের কাছে গডকড়ীদের মাথা নোয়ানো ছাড়া উপায় ছিল না। জাতীয় কর্মসমিতির সদস্যপদ এমন কিছু আহামরি নয়। এই পরিস্থিতিতে তাই সঞ্জয়কে ইস্তফা দিতে বলে মোদীকে বার্তা দিলেন গডকড়ী। আর সেই সূত্রে সভাপতি পদে তাঁর মেয়াদ বাড়ানোর রাস্তাও পরিষ্কার হল। এই বছর ডিসেম্বরে তিনি দ্বিতীয় বারের জন্য দলের সভাপতি পদে প্রার্থী হতে পারবেন। মোদীই এই মুহূর্তে জাতীয় স্তরে দলের সব থেকে আলোচিত নেতা। গোধরা পরবর্তী দাঙ্গার তদন্ত রিপোর্টে তিনি রেহাই পেয়েছেন। তবে এখনও বিভিন্ন স্তরে সেই মামলা চলছে। তার কোনও একটি মোদীর বিরুদ্ধে গেলে তিনি যদি ফের বিপাকে পড়েন, তখন গডকড়ী ভিন্ন কৌশল নিতে পারেন। কিন্তু আপাতত সভাপতি পদের মেয়াদ বাড়ানোর প্রক্রিয়া মসৃণ করতে মোদীর সঙ্গে ‘আপাত’ সমঝোতা করার বাধ্যবাধকতা ছিল গডকড়ীর।
দলের মধ্যে অবশ্য প্রশ্ন উঠছে, যে মোদী দেশে-বিদেশেও যথেষ্ট সমাদৃত, সঞ্জয় জোশীর মতো এক ব্যক্তিকে নিয়ে তিনি এত অসহিষ্ণু কেন? মোদী ঘনিষ্ঠ নেতারা অবশ্য বলছেন, বিষয়টি এখানে সঞ্জয় জোশী বা গডকড়ীর নয়। যে ব্যক্তি অনেক আগে থেকেই তাঁর বিরুদ্ধে সক্রিয়, শত আপত্তি জানানো সত্ত্বেও তাঁকে যদি দলে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব দেওয়া হয় এবং আরএসএস তাতে মদত দেয়, সেটি গুজরাতের মুখ্যমন্ত্রীর পক্ষে মানা সম্ভব নয়। তার মানে এই নয় যে, আরএসএসের সঙ্গে সংঘাতের পথে যাচ্ছেন মোদী। বরং গডকড়ীর মেয়াদ বৃদ্ধিতে সায় দিয়ে সমঝোতার বার্তাই ফিরিয়ে দিলেন তিনি।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.