দুর্নীতি, মূল্যবৃদ্ধি-সহ বিভিন্ন কারণে কংগ্রেসের বিরুদ্ধে যে প্রতিষ্ঠান বিরোধী হাওয়া তৈরি হয়েছে, তাকে পুঁজি করে এগোনোর কৌশল আগেই নিয়েছিল বিজেপি। এ বার তেলের দাম বাড়ার ফলে আমআদমির যে ‘যন্ত্রণা বেড়েছে’, তাকে বড় হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করতে চলেছে তারা। জাতীয় কর্মসমিতির বৈঠকের শুরুতেই মনমোহন সিংহ সরকারকে একহাত নিয়ে তেলের
দাম বৃদ্ধির প্রতিবাদে ৩১ মে দেশজুড়ে বন্ধের ডাক দিলেন লালকৃষ্ণ আডবাণী।
আজ সকালেই আডবাণীকে দিয়ে এই ঘোষণা করানোর পিছনে দলের সুচিন্তিত কৌশলও রয়েছে। আডবাণী এই ঘোষণা করেছেন এনডিএ-র চেয়ারম্যান হিসেবে। বিজেপি চাইছে, এনডিএ-তে সামিল সব দল একজোট হয়ে এই প্রতিবাদে সরব হোক। শুধু তাই নয়, অ-কংগ্রেসি বাকি সব দলও এতে এগিয়ে আসুক। চার বাম দল এর মধ্যেই ৩১ তারিখকে প্রতিবাদ দিবস হিসেবে চিহ্নিত করে দেশ জুড়ে বিক্ষোভ-ধর্না-রাস্তা রোকোর ডাক দিয়েছে। তবে বিজেপি’র থেকে দূরত্ব বজায় রাখতে কোনও বন্ধ ডাকেনি তারা। যদিও সে দিন পশ্চিমবঙ্গ, ত্রিপুরা-সহ কোনও রাজ্য নেতৃত্ব বন্ধ ডাকতে চাইলে সিদ্ধান্তের ভার সংশ্লিষ্ট রাজ্যের উপরে ছাড়া হয়েছে। সিপিএমের সাধারণ সম্পাদক প্রকাশ কারাট জানিয়েছেন, আজই কেরলে ১২ ঘণ্টার বন্ধ হয়েছে। আজ সিপিএম নেতা নীলোৎপল বসুর নেতৃত্বে বামেরা সংসদের সামনে বিক্ষোভও দেখান।
পাশাপাশি রাস্তায় নেমে লাগাতার আন্দোলনেও নামবে বামেরা। যেমন পশ্চিমবঙ্গে সিটুর রাজ্য সভাপতি শ্যামল চক্রবর্তী আজ কলকাতায় বলেন, “বিভিন্ন জেলায় মোটরবাইকচালকেরা জেলাশাসকের অফিসের সামনে প্রতিবাদ জানাবেন। ২৮ মে তা হবে উত্তর ২৪ পরগনায়।” ডিওয়াইএফআই শনিবার বিকেল পাঁচটা থেকে ১৫ মিনিট রাস্তা অবরোধ করবে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রতিবাদকে কটাক্ষ করে শ্যামলবাবু বলেন, “আমার যেমন বেণী তেমনি রবে, চুল ভেজাব না! প্রতিবাদ করব। আবার মন্ত্রিসভাতেও থাকব!” এ দিন কলকাতায় বাম গণসংগঠনগুলির জমায়েতেও বিক্ষোভ দেখানো হয়।
বিজেপি-ও ‘সুযোগ’টি হাতছাড়া করতে নারাজ। লোকসভা নির্বাচনকে মাথায় রেখে তারা এখন থেকেই মূল্যবৃদ্ধি, দুর্নীতির বিরুদ্ধে আন্দোলন সংগঠিত করে কংগ্রেস বিরোধিতার রাশটিকে শক্ত করতে চাইছে। জাতীয় কর্মসমিতির বৈঠকের শুরুতেই দলের সেই কৌশলটি স্পষ্ট করে দেন দলের সভাপতি নিতিন গডকড়ী। তিনি আজ দলের কাছে নতুন স্লোগান দিয়ে বলেন, “কংগ্রেস সমস্যা তৈরি করে, আর বিজেপি তা সমাধান করবে। বিজেপিকেই কংগ্রেসের কাছে বিকল্প করে তুলতে হবে। তার জন্য অ-কংগ্রেসি সব দলের কাছেই পৌঁছতে হবে।”
এর জন্য তিনি দলকে তিনটি ‘মন্ত্র’ও দেন: এনডিএ-র বিস্তার, বিজেপির দশ শতাংশ ভোট বৃদ্ধি আর গরিব, উপেক্ষিত, দলিত, আদিবাসীর পাশাপাশি সংখ্যালঘুদের কাছেও পৌঁছনো। গডকড়ী অবশ্য বলেন, “এর জন্য শুধু কংগ্রেসের নেতিবাচক দিকগুলিই তুলে ধরলে হবে না। বিজেপিশাসিত রাজ্যগুলির সাফল্য ও অটলবিহারী বাজপেয়ী জমানার মডেলকেও প্রচারের অঙ্গ হিসেবে রাখতে হবে।”
গডকড়ী জানেন, সবার আগে বিজেপিকে সংগঠিত হতে হবে। আজ বৈঠক শুরুর আগেই তাই নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে তিনি মতভেদ ‘মিটিয়ে’ নেন। শেষবেলায় মোদীও যোগ দিয়েছেন বৈঠকে। এবং মনমোহন সিংহকে আক্রমণ করে তেলের বর্ধিত দাম প্রত্যাহারের দাবি করেছেন। ইয়েদুরাপ্পা না এলেও বসুন্ধরা রাজে এসেছেন। ইয়েদুরাপ্পাকে কাল আনার চেষ্টা চলছে। গডকড়ীর মতে, বিজেপি যখন একজোট হবে, একমাত্র তখনই কংগ্রেসের বিকল্প হিসেবে শক্তিশালী, যোগ্য নেতৃত্ব তুলে ধরার সুযোগ আসবে। দলীয় সভাপতির আবেদন, “আমাদের কাছে সুযোগও রয়েছে, চ্যালেঞ্জও রয়েছে। কিন্তু মানুষের আশা-আকাঙ্ক্ষা পূরণের জন্য আমাদের সংগঠিত হতে হবে।”
বিজেপি নেতৃত্ব জানেন, এই কাজ যথেষ্ট কঠিন। গত কয়েকটি বিধানসভা ভোটে দল আশানুরূপ ফল করতে পারেনি। ফলে লোকসভায় ভাল ফল করতে গেলে অনেক বেশি পরিশ্রম করতে হবে। বিশেষ করে উত্তরপ্রদেশের মতো বড় রাজ্যে ভরাডুবির পর সেই সম্ভাবনা এই মুহূর্তে অনেকটাই ক্ষীণ।
কিন্তু কর্মসমিতির বৈঠকে উত্তরপ্রদেশের হারের কারণ পর্যালোচনা করে গডকড়ী আশা প্রকাশ করেন, “সে রাজ্যে বিজেপির জনভিত্তি রয়েছে। ঠিকমতো চেষ্টা করলে লোকসভা ভোটে মানুষের আস্থা ফিরে পাওয়া সম্ভব।” বিশেষ করে রাহুল গাঁধী, অখিলেশ সিংহ যাদবের মতো তরুণ মুখকে পাল্লা দিতে যুবকদের মধ্যেও বিজেপির জনপ্রিয়তা বাড়ানোর কাজে হাত দিয়েছেন গডকড়ী।
|
সহ-প্রতিবেদন: প্রেমাংশু চৌধুরী |