তেলের হিসেব নয় রাজনীতির অঙ্কে
কঠিন সিদ্ধান্তের এটাই সময়, বলছে সরকার
লোকসভা নির্বাচনের আগে হাতে রয়েছে দু’বছর। আপাতত তাই রাজনৈতিক বাধ্যবাধকতায় আর ‘স্থবির’ থাকতে চাইছে না কেন্দ্রীয় সরকার। বরং চটজলদি কিছু ‘কঠিন সিদ্ধান্ত’ নিতে চাইছেন মনমোহন সিংহেরা। সরকারের শীর্ষ সূত্রে বলা হচ্ছে, ভোটের লক্ষ্যে ‘জনমোহিনী’ রাজনীতির পথে পরের বছরের মাঝামাঝি সময় থেকে হাঁটলেও চলবে। কিন্তু বর্তমান সময়ের দাবি হল, দেশের অর্থনীতিকে মজবুত করার পাশাপাশি কিছু সংস্কার কর্মসূচিকেও এগিয়ে নিয়ে যাওয়া। নীতি নির্ধারণের ক্ষেত্রে সরকার ‘পঙ্গু’ হয়ে পড়েছে বলে সর্বত্র যে নেতিবাচক ধারণা তৈরি হয়েছে, তা কাটাতেও এই কঠিন হওয়াটা জরুরি। তাই এক ধাক্কায় তেলের দাম সাড়ে সাত টাকা বাড়িয়ে শরিক ও বিরোধীদের চাপের মুখে পড়লেও সরকার কিন্তু আংশিক দাম প্রত্যাহারের বার্তা এখনও দিতে নারাজ।
পেট্রোলিয়াম ও অর্থ মন্ত্রক সূত্রে যদিও বলা হচ্ছে যে, কয়েক দিনের মধ্যে পেট্রোলের দাম কিছুটা হলেও কমতে পারে। তবে তার কারণটা ‘রাজনৈতিক’ নয়। পুরোপুরি অর্থনৈতিক কারণে। কারণ, টাকার দাম আজ কিছুটা বেড়েছে। এবং আন্তর্জাতিক বাজারে আপাতত তেলের দাম আরও কমারই সম্ভাবনা। সরকারের বক্তব্য, এই ‘অর্থনৈতিক’ কারণে তেলের দাম কিছুটা কমানো যায় কি না, সে বিষয়ে তেল বিপণন সংস্থাগুলিই সিদ্ধান্ত নেবে। ইন্ডিয়ান অয়েলের চেয়ারম্যান আর এস বুটোলা বলেছেন, “সরকার এখনও দাম প্রত্যাহারের কোনও নির্দেশ দেয়নি। নিয়ম মতো ১ জুন তেল বিপণন সংস্থাগুলি ফের হিসেব-নিকেশে বসবে। তখন যদি দাম কমানোর পরিস্থিতি থাকে, তা হলে দাম কমবে।” এখানে কিন্তু একটি বিষয় খুব স্পষ্ট। তা হল, সরকার সরাসরি প্রত্যাহারের কোনও বার্তা দেয়নি। এমনকী, শরিকদের প্রবল চাপ সত্ত্বেও।
বিজেপি যে আমআদমির স্বার্থরক্ষায় এই মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদে ৩১ মে ভারত বন্ধের ডাক দিয়েছে, তার উল্টো দিকে কংগ্রেসকেও সরব হতে হয়েছে। তবে তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে কংগ্রেস কিন্তু তেলের দাম কমানোর দাবি তোলেনি। কংগ্রেস মুখপাত্র মণীশ তিওয়ারির বক্তব্য, “কংগ্রেস চায় সরকার একটা বিহিত করুক, যাতে সাধারণ মানুষকে সুরাহা দেওয়া যায়।” বিরোধীদের চাপে ফেলতে বরং অন্য কৌশল নিয়েছে কংগ্রেস। হাইকম্যান্ডের নির্দেশে কংগ্রেস শাসিত দুই রাজ্য কেরল ও উত্তরাখণ্ড বিক্রয়কর কাটছাঁট করে পেট্রোলের দাম যথাক্রমে ১.৬৩ এবং ১.৮৭ টাকা কমিয়েছে।
দলের শীর্ষ নেতারা বলেন, রাজনৈতিক ভাবে যেটুকু না বললেই নয়, এখন তাঁরা সেটুকুই বলছেন। সরাসরি তেলের দাম কমানোর কথা না বলে ‘বিহিত ব্যবস্থা’র যে দাবি তোলা হচ্ছে, তা-ও কৌশলগত। কারণ, টাকার দাম বাড়লে তা স্বাভাবিক নিয়মেই হবে। কংগ্রেস নেতৃত্বের বক্তব্য, ২২ মে ইউপিএ-র বর্ষপূর্তি অনুষ্ঠানেই প্রধানমন্ত্রী জানিয়েছিলেন, এখন কিছু কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে হবে। মনে রাখতে হবে, সনিয়া গাঁধী এবং শরিকদের পাশে নিয়েই প্রধানমন্ত্রী ওই কথা বলেছিলেন। ফলে প্রসঙ্গটি আপাত ভাবে ‘অপ্রীতিকর’ হলেও দেশের অর্থনীতিকে বৃদ্ধির পথে ফেরাতে সরকারের এই প্রয়াসের পাশে দল রয়েছে।
কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার এক শীর্ষ নেতা জানালেন, পেট্রোলের মূল্যবৃদ্ধি ছিল প্রথম পদক্ষেপ। এর পর নতুন টেলিকম নীতি প্রবর্তন করা হবে, যার মাধ্যমে ‘ইউনিফর্ম লাইসেন্সিং’ প্রথা চালু করে বাজারের আস্থা অর্জন করতে চাইছে সরকার। তা ছাড়া সংসদের আসন্ন বাদল অধিবেশনে পেনশন, ব্যাঙ্ক, বিমা বিল পাশ করাতে চাইবে সরকার। সেই সঙ্গে খুচরো ব্যবসায় প্রত্যক্ষ বিদেশি লগ্নিতে অনুমোদন দেওয়ার চেষ্টাও হবে। ওই নেতার কথায়, এই ব্যাপারে সিদ্ধান্ত এখন নেওয়া না গেলে পরে তা আরও কঠিন হবে। বরং এখনই এই সিদ্ধান্ত কার্যকর হলে লোকসভা ভোটের আগে তার ফল মিলতে পারে। চাষিরা যদি উপকৃত হন, সাধারণ মানুষ কম দামে খাদ্যসামগ্রী পান, তা হলে তার প্রভাব পড়বে ভোটে। তবে এ-ও ঠিক যে, এই ধরনের সমস্ত কর্মসূচিই যে সরকার রূপায়ণ করতে পারবে, তা হয়তো নয়। কিন্তু কিছু বিষয়ে সফল হলেই বাজার ঘুরবে বলে সরকার ও কংগ্রেস আশাবাদী।
প্রশ্ন হল, শরিকদের আপত্তি উপেক্ষা করে সরকার কি কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে পারবে? সলমন খুরশিদের কথায়, “সমাজবাদী পার্টি নেতা মুলায়ম সিংহ যে ভাবে ইউপিএ-র বর্ষপূর্তি অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছেন, তা রাজনৈতিক স্থায়িত্বের প্রশ্নে ইতিবাচক ঘটনা। সংস্কারের বিষয়গুলিতে শরিকদের বুঝিয়েই পদক্ষেপ করবে সরকার।” দলের এক বর্ষীয়ান নেতার কথায়, আসলে কঠিন সিদ্ধান্ত নেওয়া ছাড়া সরকারের যে উপায় নেই, তা শরিকরাও বুঝতে পারছেন। তাই প্রকাশ্যে কেন্দ্র তথা কংগ্রেসের সমালোচনা করলেও কেউই সমর্থন তুলে নিয়ে অস্থিরতা বাড়াতে চাইবেন বলে মনে করা হচ্ছে না। বরং কাল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছেন, তিনি প্রতিবাদ করবেন। কিন্তু সমর্থন প্রত্যাহার করবেন না।
তবে এ সব অবশ্যই কংগ্রেস তথা সরকারের ‘ইচ্ছে’র কথা। অতীতে এমন প্রত্যয় প্রধানমন্ত্রী বারবার দেখালেও রাজনৈতিক বাধ্যবাধকতায় তাঁকে এক পা এগিয়ে দু’পা পিছোতে হয়েছে। যেমন, পেট্রেলের দাম বিনিয়ন্ত্রণ করা সত্ত্বেও উত্তরপ্রদেশ-সহ পাঁচ রাজ্যে ভোটের সময় সরকারই তেলের দাম বাড়াতে দেয়নি। যার পুঞ্জীভূত ধাক্কা এ বার আছড়ে পড়েছে। ফলে মনমোহন কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে চাইলেও শেষমেশ তা কতটা করে উঠতে পারেন, এখন সেটাও দেখার।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.