আশঙ্কা বর্ষায় ফের ভাসবে বেহালা
শেষ হয়নি পাম্পিং স্টেশনের কাজ, গত বোর্ডকে দুষলেন মেয়র
ভারী বৃষ্টি হলে এ বারও ভাসবে বেহালার বেশ কিছু এলাকা। এমন আশঙ্কা খোদ কলকাতার মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায়ের। তিনি নিজে ওই এলাকারই বাসিন্দা। তাঁর আশঙ্কার পিছনে বিগত বাম পুর-বোর্ডের অদূরদর্শিতাই প্রধান কারণ বলে দাবি মেয়রের। তাঁর অভিযোগ, “বাম বোর্ডের বেহিসেবি সিদ্ধান্তে একটা বড় পাম্পিং স্টেশনের কাজ নির্দিষ্ট সময়ে শেষ করা যায়নি। ওদের সেই ভুলের মাসুল এখনও দিতে হচ্ছে বেহালাবাসীকে।” যদিও এই অভিযোগ পুরোপুরি অস্বীকার করেছেন প্রাক্তন মেয়র বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য। তিনি বলেন, “আমি যত দিন মেয়র ছিলাম, তত দিন কেউ মুখ খোলেননি। নিজেদের ব্যর্থতা ঢাকতে এখন আমাদের ঘাড়ে দোষ চাপাচ্ছেন।”
কেন এই চাপান-উতোর?
পুরসভা সূত্রের খবর, বেহালা এলাকার জল নিকাশির মূল পথ হল বেগড় খাল ও মণি খাল। বৃষ্টির সময়ে মহেশতলা ও বেহালার বিস্তৃত অংশের জল মূলত ওই দু’টি খালপথেই বেরোয়। ভাটার সময়ে জমা জল বার হলেও জোয়ারে বেহালার বেশ কিছু এলাকা জলমগ্ন হয়ে থাকে। স্থানীয় বাসিন্দাদের সেই দুর্ভোগ থেকে রেহাই দিতে আক্রায় গঙ্গার ধারে উচ্চক্ষমতা সম্পন্ন একটি পাম্পিং স্টেশন গড়ার পরিকল্পনা নিয়েছিল পুরসভা। ঠিক হয়, কলকাতা পরিবেশ উন্নয়ন প্রকল্পে (কেইআইপি) কাজটি হবে। টেন্ডারের মাধ্যমে কাজের বরাত পায় একটি ইঞ্জিনিয়ারিং সংস্থা। ২০০৭ সালে তৎকালীন বাম পুরবোর্ডের আমলে পাম্পিং স্টেশন তৈরির কাজ শুরু হয়। তিন বছরের মধ্যে সেই কাজ শেষ করার কথা ছিল।
এখনও অসমাপ্ত এই পাম্পিং স্টেশনের কাজ। —ফাইল চিত্র
শোভনবাবুর অভিযোগ, “কাজ শুরু হয়ে যাওয়ার বছর দেড়েক পরে পুরোপুরি রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ওই ঠিকাদার সংস্থাকে বাতিল করে দেন প্রাক্তন মেয়র।” তিনি জানান, ওই ঠিকাদার সংস্থা প্রকল্পের কিছু কাজ করার দায়িত্ব (সাব কনট্রাক্ট) দিয়েছিল তৃণমূলের এক কাউন্সিলরকে। তা জানতে পেরেই প্রাক্তন মেয়র ওই ঠিকাদার সংস্থাকে বাতিল করে দেন বলে শোভনবাবুর অভিযোগ। আর তার জেরেই আটকে যায় প্রকল্পের কাজ। আবার নতুন করে টেন্ডার ডেকে কাজ শুরু করতে কেটে যায় এক বছরেরও বেশি সময়। শোভনবাবুর বক্তব্য, “২০১০ সালে যে কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল, এখনও তা হয়নি। পাম্পিং স্টেশনটি চালু হলে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে বেহালা এলাকার জমা জল বেরিয়ে যাবে।”
বর্ষায় বেহালায় জল জমা নিয়ে রীতিমতো আতঙ্কে থাকেন রবীন্দ্রনগর, পর্ণশ্রী পল্লি, অভয় বিদ্যালঙ্কার রোড, পাঠকপাড়া, হেমন্ত মুখার্জি রোড ও বিজি প্রেস এলাকার বাসিন্দারা। তাঁদের বক্তব্য, “বছর চারেক ধরে শুনে আসছি, আর জল জমবে না। আর বেশি বৃষ্টি হলেই ঘরে জল ঢুকে চরম ভোগান্তি হচ্ছে।” কলকাতার বর্তমান মেয়র বেহালার বাসিন্দা হওয়ায় তাঁরা আশায় আছেন এ বার কিছু একটা হবে। আর তাঁদের সেই আশাই মেয়রের কাছে রীতিমতো আতঙ্কের। প্রায় প্রতিদিনই আক্রায় ওই পাম্পিং স্টেশনের কাজ কতদূর হল, সেই খোঁজখবর নিচ্ছেন তিনি।
এ দিকে, তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা বর্তমান মেয়রের অভিযোগকে কোনও গুরুত্বই দিতে নারাজ প্রাক্তন মেয়র বিকাশরঞ্জনবাবু। তিনি বলেন, “ওই ঠিকাদার সংস্থার কাজের গুণমান ঠিক ছিল না। দেরিও হচ্ছিল। তাই তাদেরকে বাতিল করে নতুন ভাবে টেন্ডার করা হয়েছিল।”
প্রকল্পের কাজে তৃণমূলের কাউন্সিলরের সঙ্গে ওই ঠিকাদার সংস্থার যোগ থাকা কি বরাত বাতিল হওয়ার অন্যতম কারণ?
জবাবে বিকাশবাবু বলেন, “ওই কাউন্সিলরের সঙ্গে ওঁদের যোগ ছিল, তা জানতামই না। পরে অবশ্য ওই কাউন্সিলর আমার কাছে বরাত বাতিল না করার দাবি জানান।”
পুরসভা সূত্রের খবর, ২০০৯ সালে ওই ঠিকাদার সংস্থা প্রকল্পের প্রায় ৪০-৪৫ শতাংশ কাজ শেষ করেছিল। বছর খানেক পরে নতুন সংস্থা কাজ শুরু করে। ফলে কাজ শেষ হতে দেরি হচ্ছে। যদিও পুর সূত্রের খবর, প্রথম ঠিকাদার সংস্থার কাজের মান নিয়ে বিগত বোর্ডের আপত্তি থাকলেও পরবর্তী ঠিকাদার সংস্থা ওই নির্মাণের উপরেই বাকি কাজ করেছে। বেহালার একাধিক তৃণমূল কাউন্সিলরের বক্তব্য, “প্রথম ঠিকাদার সংস্থার তৈরি যন্ত্র নিয়েই দ্বিতীয় সংস্থা বসিয়েছে। সে ক্ষেত্রে প্রথম সংস্থাই কাজটা করলে এত দিনে বেহালায় জল জমার সমস্যা মিটে যেত।”
 
 
 


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.