কেন্দ্রীয় প্রস্তাবে পিএফের পেনশন কমার আশঙ্কা |
প্রজ্ঞানন্দ চৌধুরী • কলকাতা |
প্রভিডেন্ট ফান্ডের পেনশনের পরিমাণ মাসে ন্যূনতম ১ হাজার টাকা করতে উদ্যোগী কেন্দ্রীয় সরকার। কিন্তু এর জন্য যে প্রস্তাব তারা দিয়েছে, তাতে পিএফের সিংহভাগ পেনশনভোগীরই পেনশনের পরিমাণ কমবে। প্রভিডেন্ট ফান্ড খাতে নিয়োগকর্তারা অতিরিক্ত টাকা দিতে অস্বীকার করায় এ বার কেন্দ্রীয় সরকার ওই প্রস্তাব নিয়েই এগোতে চাইছে। আজ শুক্রবারই চেন্নাইতে প্রস্তাবটি নিয়ে বৈঠকে বসবে পিএফের অছি পরিষদ।
পিএফের পেনশন কমপক্ষে ১ হাজার টাকা করতে হলে প্রতি বছর অতিরিক্ত ৫৩৯ কোটি টাকার প্রয়োজন। নিয়োগকর্তারা অতিরিক্ত টাকা দিতে অস্বীকার করার ফলে ন্যূনতম পেনশন ১ হাজার টাকা করার উদ্দেশে অর্থের সংস্থান করার জন্যই সাধারণ ভাবে পেনশন কমানোর প্রস্তাব দিয়েছে কেন্দ্র।
কেন্দ্রীয় সরকারের প্রস্তাব কার্যকর করতে হলে পিএফ সদস্যদের পেনশন হিসাব করার ফর্মুলাটাই পাল্টাতে হবে। এর ফলে পিএফ সদস্যরা অবসর নেওয়ার পর পেনশন বাবদ মাসে মাসে যে টাকা হাতে পান, তার পরিমাণ কমবে। উদাহরণ হিসাবে দেখা যাচ্ছে, যিনি ২০ বছর চাকরি করে অবসর নিচ্ছেন এবং যাঁর মূল বেতন ৬৫০০ টাকা, তিনি বর্তমানে ২০৪৩ টাকা পেনশন পাচ্ছেন। কিন্তু নতুন প্রস্তাব কার্যকর হলে তাঁর পেনশন ১৮৬ টাকা কমে দাঁড়াবে ১৮৫৭ টাকা।
প্রস্তাবটি কী? পি এফ সদস্যদের পেনশন হিসাব করার সময় চাকরি যত বছর হয়েছে, তার উপর বোনাস হিসাবে আরও দু’বছর যোগ করে পেনশনযোগ্য চাকরির সময়কাল হিসাব করা হয়। তবে ন্যূনতম ২০ বছর চাকরি করলে তবেই ওই বোনাস পাওয়া যায়। সে ক্ষেত্রে পেনশন হিসাব করার জন্য চাকরির মেয়াদ ধরা হবে ২২ বছর। কেন্দ্র প্রস্তাব দিয়েছে, বোনাস হিসাবে ওই দুই বছর আর যোগ করা হবে না। এর ফলে সাধারণ ভাবে অবসরপ্রাপ্ত সদস্যদের পেনশনের পরিমাণ কমে গিয়ে বাড়বে পেনশন তহবিলের পরিমাণ। যা থেকে ন্যূনতম ১ হাজার টাকা পেনশন দেওয়ার ব্যবস্থা করা যাবে।
এ দিকে, ২০০০ সালের পর গত ১২ বছর ধরে পিএফের পেনশন বাড়েনি। এই অবস্থায় পেনশনের পরিমাণ কমানোর ওই প্রস্তাব তাঁরা মানবেন না বলে জানিয়েছেন পিএফের অছি পরিষদের কর্মী প্রতিনিধিরা। এআইইউটিইউসি-র সাধারণ সম্পাদক শঙ্কর সাহা বলেন, “বর্তমানে স্বেচ্ছাবসর, ছাঁটাই, চুক্তির মাধ্যমে নিয়োগ ইত্যাদির জন্য অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ৫৮ বছর পর্যন্ত চাকরি করার সুযোগ ক্রমশ কমে যাচ্ছে। এই অবস্থায় ২ বছরের ওই বোনাস উঠে গেলে কর্মীরা বিশেষ ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। আমাদের দাবি, পিএফের মতো সামাজিক সুরক্ষা প্রকল্পের জন্য অতিরিক্ত ওই ৫৩৯ কোটি টাকা কেন্দ্রীয় সরকারকেই দিতে হবে।” কেন্দ্রীয় সরকারের ওই প্রস্তাবের তীব্র সমালোচনা করেন ভারতীয় মজদুর সভার সাধারণ সম্পাদক বৈজনাথ রায়। তাঁরা উভয়েই জানান, “অছি পরিষদের সভায় ওই প্রস্তাব উঠলে আমরা তীব্র বিরোধিতা করব।”
১৯৯৫ সালের ১৬ নভেম্বর পেনশন প্রকল্প চালু হয়। সে সময়ে বেশ কিছু কর্মী ইউনিয়ন পি এফে পেনশন প্রকল্প চালু করার বিরোধিতা করেছিল। প্রকল্পটিকে কর্মীদের কাছে আকৃষ্ট কররার জন্য যে-সব সুবিধার কথা সেই সময় কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে বলা হয়েছিল, তার মধ্যেই ২ বছরের ওই বোনাস দেওয়ার উল্লেখ ছিল।
প্রকল্প চালু হওয়ার পর ২০০০ সাল পর্যন্ত চার বার সংশোধন করে মোট ১৭.৪ শতাংশ বাড়ানো হয়েছিল পেনশনের পরিমাণ। তহবিলে ঘাটতি বাড়তে থাকায় তার পর আর হার সংশোধন করা হয়নি। বর্তমানে প্রকল্পের ঘাটতি ৩০ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে গিয়েছে। প্রকল্পের ঘাটতি কী ভাবে কমানো যায়, সে ব্যাপারে একটি বিশেষ কমিটও গঠন করে কেন্দ্র। কমিটির সুপারিশগুলি নিয়ে এখনও কোনও চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে আসতে পারেননি পি এফ কর্তৃপক্ষ বা কেন্দ্রীয় সরকার। ওই বিশেষ কমিটিরই অন্যতম সুপারিশ ন্যূনতম পেনশন ১ হাজার টাকা করা। |