খাদের কিনারা থেকে অবশেষে আশার আলো দেখল টাকা। সকালের প্রতি ডলারে ৫৬.৩৮ টাকা থেকে দিনের শেষে তা ঘুরে দাঁড়াল ৫৫.৬৫ টাকায়। ভারতীয় রিজার্ভ ব্যাঙ্ক টাকাকে বাঁচাতে ব্যবস্থা নেবে, গভর্নর ডি সুব্বারাওয়ের এই আশ্বাসই ভরসা জোগায় বৈদেশিক মুদ্রার বাজারে। অর্থাৎ বুধবারের বাজার বন্ধের সময়ের দর ৫৫ থেকে টাকার দাম বেড়েছে ৩৫ পয়সা। পাশাপাশি, প্রায় দু’মাসে সবচেয়ে বেশি বেড়ে সেনসেক্স এ দিন ফের পৌঁছে গিয়েছে ১৬ হাজারের ঘরে। ২৭৪ পয়েন্ট বেড়ে তা বন্ধ হয় ১৬,২২২.৩০ পয়েন্টে। লগ্নিকারীদের ঝুলিতে একদিনেই ফিরে এসেছে ৬৮ হাজার কোটি টাকা।
পরপর ৭ দিনের লেনদেনে টাকার দাম পড়ার পর এ দিন তার শক্তি ফিরে পাওয়ার পিছনে যে-সব কারণ কাজ করেছে, তার মধ্যে রয়েছে:
•তেল আমদানিকারী সংস্থাগুলিকে সরাসরি ডলার বিক্রির ব্যাপারে সুব্বারাওয়ের ইঙ্গিত। সে ক্ষেত্রে বাজারে ডলারের চাহিদার উপর চাপ অনেকটাই কমবে বলে আশা সংশ্লিষ্ট মহলের। মুসৌরিতে শীর্ষ ব্যাঙ্কের পরিচালন পর্ষদের বৈঠক শেষে সুব্বারাওয়ের কথায়, “আমি এই সম্ভাবনা উড়িয়ে দিচ্ছি না। অতীতেও আমরা এই পথে হেঁটেছি।”
•কিছু রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের ডলার বিক্রি।
•রফতানিকারীদের বৈদেশিক মুদ্রার অ্যাকাউন্ট থেকে ডলার বিক্রি। প্রসঙ্গত টাকাকে টেনে তুলতে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক গত মাসেই দাওয়াই দিয়েছিল, রফতানিকারীদের বৈদেশিক মুদ্রার আয়ের ৫০ শতাংশ সরাসরি বাজারে বিক্রি করতে হবে।
•গ্রিসকে ইউরোপীয় ইউনিয়নেই ধরে রাখতে সেখানকার নেতাদের নয়া অঙ্গীকার। সে ক্ষেত্রে গ্রিসকে ত্রাণ বাবদ অর্থ জোগানোর প্রতিশ্রুতি পালনেও তারা কৃতসংকল্প। যা বেশ কয়েক মাস বাদে ডলারের তুলনায় ইউরোর দামকেও বাড়াতে সাহায্য করে। তার প্রভাবও পড়ে টাকার বাজারে।
অন্য দিকে শেয়ার বাজারে প্রাণ ফেরার পিছনে বিশেষজ্ঞরা মূল যে কয়েকটি কারণকে চিহ্নিত করেছেন, সেগুলি হল:
(১) পেট্রোলের মূল্যবৃদ্ধি। যার জন্য বিরোধী রাজনৈতিক দল এবং সাধারণ ক্রেতারা কেন্দ্রীয় সরকারকে দুষলেও বাজার কিন্তু খুশি। কারণ, এর থেকে বাজার সঙ্কেত পেয়েছে যে, তেল ক্ষেত্রে সংস্কার থেকে কেন্দ্র সম্ভবত পিছু হটবে না।
(২) এর পর কিছুটা নিয়ন্ত্রণ তুলে ডিজেল, রান্নার গ্যাসের দাম বাড়ানোতেও সরকার সায় দেবে বলে আশা করছে শিল্পমহল। আর, তা হলে বিদেশি লগ্নিকারী সংস্থাগুলিও ফের ভারতের বাজারে ফিরবে। ওএনজিসি, রিলায়্যান্সের মতো শেয়ারের হাত ধরেই এ দিন উঠতে থাকে সেনসেক্স।
(৩) টাকার ঘুরে দাঁড়ানো। যার ফলে ভারতীয় বাজারের উপর লগ্নিকারীদের আস্থা অনেকটাই ফিরে আসে।
এ দিন সেনসেক্সের অন্তর্গত ৩০টি শেয়ারের মধ্যে ২৪টির দরই বেড়েছে। গ্রিসের ইউরোপীয় ইউনিয়নে থেকে যাওয়ার সম্ভাবনা কিছুটা জোরালো হওয়ায় ইউরোপের বাজার চাঙ্গা থাকাটাও এ দিন উত্থানে ইন্ধন জুগিয়েছে। |