পিছু ছাড়ছে না গৃহনির্মাণে ‘দুর্নীতি’ বিতর্ক
চুরি হয়ে গিয়েছে ৫৪০টি বড় বড় লোহার পাইপ। এই পাইপ চুরি কাণ্ড এ বারের নলহাটি পুরসভা নির্বাচনে অন্যতম বড় ‘হাতিয়ার’। বিরোধীরা সেই ‘হাতিয়ার’ নিয়েই তৃণমূল পরিচালিত পুরসভার বিরুদ্ধে সরগরম হয়েছে। এই পাইপ চুরির ঘটনাটি ঘটেছে পুরসভার ১৪ নম্বর ওয়ার্ডেই। পাইপ চুরি কাণ্ডটি পুরভোটে প্রভাব ফেলতে পারে বলে রাজনৈতিক মহলের ধারণা।
১৪ নম্বর ওয়ার্ড মূলত জগধারী গ্রামকে নিয়েই। রানিগঞ্জ-মোরগ্রাম ৬০ নম্বর জাতীয় সড়কের দু’ধারে রয়েছে নলহাটি পুরসভার অভ্যর্থনাজ্ঞাপক বোর্ড। ব্রাক্ষ্মণী নদীর সেতু পেরিয়ে রাস্তার দু’ধারে পড়ে থাকা জঞ্জালের স্তূপ ১৪ নম্বর ওয়ার্ডের অবস্থার খানিকটা যেন প্রতীকী ইঙ্গিত দেয়। পুরকর্তৃপক্ষের দাবি, জগধারী গ্রাম সংলগ্ন জাতীয় সড়কের ধার থেকেই পুরসভার পানীয় জল প্রকল্পের পাইপ চুরির ঘটনাটি ঘটেছে। যদিও বিরোধীদের দাবি, ৫৪০টি লোহার পাইপ চুরি করতে কমপক্ষে ৯ ঘণ্টা সময় লাগার কথা। ফলে রাস্তার ধার থেকে সর্বসমক্ষে ওই লোহার পাইপগুলি কী ভাবে চুরি হয়ে গেল, সে বিষয়ে নিজেদের সংশয়ের কথা জানিয়েছেন বিরোধীরা।
বোতল, বালতি নিয়ে লাইনে খুদেরাও। ছবি: সব্যসাচী ইসলাম।
পুরসভার প্রাক্তন উপপুরপ্রধান, ২ নম্বর ওয়ার্ডের এ বারের কংগ্রেস প্রার্থী প্রকাশপ্রসাদ জানান, দলের পক্ষ থেকে তথ্য জানার অধিকার আইনে (আরটিআই) ওই পাইপ চুরির বিষয়ে পুরসভার কাছে বেশ কয়েকটি তথ্য জানতে চাওয়া হয়েছিল। তাঁর দাবি, “যে সমস্ত তথ্য আমরা জানতে চেয়েছিলাম তার একটিও পুরপ্রধান দিতে পারেননি। তাই পাইপ চুরির বিষয়টি আমাদের কাছে পুরোপুরি ধোঁয়াশাপূর্ণ। আমরা চাই এ বিষয়ে সঠিক ভাবে তদন্ত করা হোক।” ১৪ নম্বর ওয়ার্ডেই বাড়ি বিগত পুরবোর্ডের উপপুরপ্রধান অশোক ঘোষের। এই ওয়ার্ডের তৃণমূল প্রার্থী অশোকবাবু অবশ্য বলেন, “এলাকায় পাইপ লাইনের কাজের জন্য ওই পাইপগুলি রাখা ছিল। কোনও পাহারার ব্যবস্থা করা হয়নি। এ ভাবে পাইপগুলি চুরি হয়ে যাবে তা বুঝতে পারিনি।” তাঁর দাবি, “রাতের অন্ধকারে ট্রাকে পাইপগুলি বোঝাই করে পালাবার সময় এলাকার কিছু বাসিন্দা বাধা দিয়েছিলেন। কিন্তু কিছু করতে পারেননি। সেই রাতেই চুরির বিষয়ে পুলিশকে খবর দেওয়া হয়েছিল।”
অন্য দিকে, ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে বস্তি উন্নয়ন প্রকল্প ঘিরে ভূরি ভূরি বঞ্চনার অভিযোগ বিগত তৃণমূল চালিত পুরবোর্ডের পিছু ছাড়ছে না। ১৪ নম্বর ওয়ার্ডও তার ব্যতিক্রম নয়। এখানেও বাসিন্দাদের মধ্যে বস্তি উন্নয়ন প্রকল্পে গৃহহীনদের বাড়ি তৈরির প্রকল্প নিয়ে বিস্তর ক্ষোভ রয়েছে। অভিযোগ, মঠপুকুর পাড়ার বাসিন্দা ওষুধ ব্যবসায়ী সন্তোষ দাসের স্ত্রীর (যিনি অঙ্গনওয়াড়িকর্মী) নামে ওই প্রকল্পে বাড়ি বরাদ্দ হয়েছে। ওই পাড়ার এক শিক্ষক পরিবারকেও কাউন্সিলর একলাখি প্রকল্পে ঘর বানিয়ে দিয়েছেন বলে অভিযোগ গৃহহীন যুবক দুলাল মহলদারের। যদিও অভিযোগ অস্বীকার করেছেন কাউন্সিলর অশোকবাবু।
পঞ্চায়েত আমলে ও ২০০২-০৭ পর্যন্ত ১৪ নম্বর ওয়ার্ড সিপিএমের দখলে ছিল। ২০০৭ সালে ‘ভাতুদা’র (তৃণমূলের বিদায়ী উপপুরপ্রধান অশোক ঘোষ) হারে সিপিএম প্রার্থী।
এলাকার রাস্তাঘাটের মান নিয়েও যথেষ্ট ক্ষোভ আছে। মঠপুকুর পাড়া যাওয়ার রাস্তাটি সংকীর্ণ। মাত্র দেড়-দু’ বছর আগে তৈরি হওয়া এই রাস্তা জায়গায় জায়গায় ভেঙে গিয়েছে। গাড়ি চালক অষ্টম হালদার বলেন, “ট্রাক্টর চললে তো রাস্তা ভাঙবেই।” কংগ্রেসপ্রার্থী দেবাশিস দাসের অভিযোগ, “এলাকায় একটি কমিউনিটি হল তৈরি হলেও সেখানে যাতায়াতের জন্য কোনও রাস্তা নেই। সেখানে এলাকার রাজমিস্ত্রিদের কাঠের পাটাতন, বাঁশ ও অন্যান্য সরঞ্জাম রাখা হচ্ছে।” অন্য দিকে, ওয়ার্ডের সিপিএম প্রার্থী জয়ন্ত চট্টোপাধ্যায়েরও অভিযোগ, “কাউন্সিলর কেবল নিজের পাড়ায় ঢালাই রাস্তার কাজ করালেন। যদিও সেই কাজও তিনি শেষ করতে পারেননি! বাকি ধূলফেলা পাড়া, নদীপাড় এলাকার পালপাড়ার মতো অন্যান্য এলাকার রাস্তাঘাট সংস্কারের অভাবে বেহাল হয়েই পড়ে রইল।”
পাশাপাশি পানীয় জল নিয়ে অন্যান্য ওয়ার্ডের মতোই সমান ক্ষোভ ১৪ নম্বর ওয়ার্ডেও। নদীপাড়ের বাসিন্দা সত্য ফুলমালি, অন্তু ফুলমালি, হৈমা দাসদের অভিযোগ, “এলাকায় এমনিতেই মাত্র ১টা নলকূপ। ট্যাপের সংযোগও একটাই। পানীয় জলের ব্যবস্থা আমাদের এলাকায় পর্যাপ্ত নয়।” এ ছাড়া এলাকায় নিকাশি নালা না থাকা, বিদ্যুৎ সংযোগ না দেওয়া নিয়েও ক্ষোভ রয়েছে। সেই সঙ্গে ব্রাক্ষ্মণী নদীর পাড় বাঁধানোর বিষয়ে পুরসভা কোনও উদ্যোগী নেয়নি বলে বাসিন্দাদের অভিযোগ। এই ওয়ার্ডে তফসিলি সম্প্রদায়ভুক্ত মানুষজনই সংখ্যাগরিষ্ঠ। তাই রাজনৈতিক মহলের অভিমত তফসিলি ভোট এই ওয়ার্ডে নির্ণায়ক ভূমিকা নেবে।

নজরে নলহাটি
ওয়ার্ড ১৪
• নদীপাড় বাঁধানো হয়নি। জাতীয় সড়কের ধারে জঞ্জাল জমে থাকে।
• জমি বিতর্কে জগধারী এলাকায় রেলসেতু নির্মাণের কাজ বন্ধ।
• পালপাড়ায় নিকাশি নালা তৈরি হয়নি।

এলাকায় কোনও উন্নয়নমূলক কাজ হয়নি।
সব ক্ষেত্রে ফাঁকফোঁকর রয়েছে। দলীয় কর্মীদের মুনাফা
কামানোর সুযোগ করে দেওয়া হয়েছে।
দেবাশিস দাস,

৩৩টি বাড়ি নির্মাণ করে দিয়েছি। জল, বিদ্যুৎ সংযোগ,
রাস্তা সংস্কারের ব্যবস্থা করেছি। নদী পাড় বাঁধানোর
জন্য সংশ্লিষ্ট দফতরে চেষ্টা চালিয়েছি।
অশোক ঘোষ,



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.