দলেরই এক ছাত্রনেতা ও এলাকার এক ব্যবসায়ীকে রাস্তায় ফেলে মারধরের অভিযোগ উঠল বর্ধমান শহর যুব তৃণমূল সভাপতি তথা ২৪ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর খোকন দাসের বিরুদ্ধে। ফলে, তৃণমূলে ঘরোয়া কোন্দলের ছায়া ফের প্রকাশ্যে চলে এসেছে।
বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ে টিএমসিপি পরিচালিত আইন ছাত্র সংসদের সাধারণ সম্পাদক কার্তিক ঘরামির মা, কাঞ্চননগরের বাসিন্দা কল্পনাদেবী বৃহস্পতিবার পুলিশ সুপার সৈয়দ মহম্মদ হোসেন মির্জার কাছে খোকনবাবু-সহ ১৪ জনের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ জানান। তবে রাত পর্যন্ত পুলিশ কাউকে গ্রেফতার করেনি। কার্তিককে বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে।
কার্তিকের অভিযোগ, “সকালে বাজারে যাওয়ার পথে খোকনবাবু লোকজন নিয়ে আমার উপরে চড়াও হন। আমায় মারতে মারতে মোটরবাইক থেকে ফেলে দেন। চশমা, মোবাইল, সোনার চেন কেড়ে নেওয়া হয়। ‘তোর পার্টি করা ঘুচিয়ে দেব’ বলে হুমকিও দেন।” কার্তিকের দাবি, কয়েক দিন আগে ওয়ার্ডের বেশ কিছু লোকজনকে নিয়ে তিনি খোকন দাসের বিরুদ্ধ গোষ্ঠীর মিছিলে যোগ দিয়েছিলেন। সেই ‘অপরাধে’ তাঁকে মারধর করা হয়েছে। তাঁর সঙ্গে স্থানীয় ব্যবসায়ী অসীম দেবনাথকেও মারধর করা হয়। হাসপাতালে শুয়ে অসীমবাবু অভিযোগ করেন, সকালে বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে গিয়ে খোকনবাবুরা তাঁকে মারধর করেছেন। |
খোকনবাবুর পাল্টা অভিযোগ, তাঁর ‘চরিত্রহনন’ করে লিফলেট ছাপিয়ে এলাকায় বিলির চক্রান্ত করছিলেন কার্তিক। তা জেনে ‘স্থানীয় মানুষ’ই খেপে উঠে তাঁকে পিটিয়েছেন। তাঁর দাবি, “আমি বা আমার ঘনিষ্ঠ কেউ এই ঘটনায় যুক্ত নই।” এ দিনই বর্ধমান থানায় খোকনবাবু পাল্টা অভিযোগ করেন, দীর্ঘদিন ধরেই কার্তিক-সহ ২৪ নম্বর ওয়ার্ডের কিছু বাসিন্দা তিনি, তাঁর পরিবার এবং স্থানীয় বিধায়ক তথা কারিগরি শিক্ষামন্ত্রী রবিরঞ্জন চট্টোপাধ্যায়ের ‘মানহানি’ করার চেষ্টা করে চলেছেন। সে জন্যই একটি প্রচারপত্র বাড়ি-বাড়ি বিলি করে কুৎসা ছড়ানোর পরিকল্পনা করা হয়েছিল। লিখিত অভিযোগের সঙ্গে ‘প্রচারপত্রে’র খসড়া প্রতিলিপিও তিনি বর্ধমান থানায় জমা দেন। তাঁর দাবি, ওই খসড়াটিই পরে লিফলেট আকারে ছাপিয়ে বিলি করার পরিকল্পনা নিয়েছিলেন কার্তিকরা।
খোকনবাবুর অভিযোগ: কার্তিকের সই থাকা ওই ‘খসড়া’য় দাবি করা হয়েছে, তিনি ‘সমান্তরাল প্রশাসন’ চালাচ্ছেন। কাউন্সিলর হয়ে মোটা টাকার বিনিময়ে এলাকার প্রায় ৬০ ভাগ জলাভূমি বুজিয়ে ফেলেছেন। এমনকী, সিপিএমের দুষ্কৃতীদের সাহায্য নিয়ে তৃণমূলের ‘প্রকৃত কর্মী’দের উপরে আক্রমণও চালাচ্ছেন। দামোদরের অবৈধ বালি খাদ থেকে কোটি-কোটি টাকা উপার্জন করছেন। কল্পনাদেবীর আবার পুলিশের বিরুদ্ধেও নালিশ রয়েছে। তাঁর অভিযোগ, আহত অবস্থায় তাঁর ছেলেকে প্রায় তিন ঘণ্টা থানায় বসিয়ে রাখা হয়েছিল। বারবার বলা সত্ত্বেও পুলিশ তাঁকে হাসপাতালে নিয়ে যায়নি। অভিযোগ দায়ের করা নিয়েও থানার সঙ্গে তাঁদের বচসা হয়। পরে তাঁরা পুলিশ সুপারের কাছে গিয়ে ১৪ জনের নামে অভিযোগ জানান। বর্ধমান থানার আইসি দিলীপ গঙ্গোপাধ্যায় অবশ্য দাবি করেন, “পুলিশ ওই ছাত্রনেতাকে উদ্ধার করেনি। তাই ওঁকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার দায়িত্বও আমাদের নয়।” |