দোকান থেকে ভাড়াটেদের জোর করে উচ্ছেদের অভিযোগে অভিযুক্ত ছিলেন তৃণমূলের স্থানীয় নেতা-সহ তিন জন। বাকি দু’জন ধরা পড়লেও সুশান্ত ঘোষ নামে ওই নেতা এখনও অধরা।
বৃহস্পতিবার বর্ধমান থানার আইসি দিলীপ গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, “আমরা সুশান্তবাবুকে গ্রেফতার করার চেষ্টা করছি। তা এখনও সম্ভব হয়নি।” অভিযোগকারীদের আশঙ্কা, সুশান্তবাবু যাতে জেলা জজ কোর্টে আগাম জামিনের আবেদন করতে পারেন, তার জন্য তাঁকে সময় দিচ্ছে পুলিশ। তবে জেলা পুলিশ সুপার সৈয়দ মহম্মদ হোসেন মির্জা এ ব্যাপারে মন্তব্য করতে চাননি। |
ঘটনার সূত্রপাত গত ১২ মে। বর্ধমান শহরে অনিতা সিনেমা লেনে ভাড়া ঘরে শাড়ির দোকান চালান কালনা গেটের রবীন্দ্রপল্লির বাসিন্দা মাধবী চৌধুরী ও তাঁর মেয়ে অর্পিতা। বিধবা মাধবীদেবীর অভিযোগ, ওই দিন বাড়িওয়ালার সঙ্গে তাঁদের বিবাদে নাক গলিয়ে সুশান্তবাবু দোকানের চাবি কেড়ে নেন। তাঁর সাঙ্গোপাঙ্গেরা তাঁদের সামাজিক ভাবে অপদস্থ করার হুমকিও দেন। কিন্তু বর্ধমান থানায় অভিযোগ জানাতে গেলে তাঁদের বলা হয়, সুশান্তবাবুর নাম বাদ না দিলে অভিযোগ নেওয়া হবে না। সকাল থেকে সন্ধ্যে পর্যন্ত বসে থাকার পরে ‘বাধ্য হয়ে’ তাঁরা নেতার নাম বাদ দিয়েই তাঁরা অভিযোগ করেন। পুলিশ একটি সাধারণ ডায়েরি নেয়। বর্ধমান থানার আইসি দিলীপ গঙ্গোপাধ্যায় অবশ্য দাবি করেন, “কেউ কারও নাম অভিযোগ থেকে বাদ দিতে চায়নি। ওঁদের সম্ভবত বুঝতে ভুল হয়েছে।”
ঘটনার ‘প্রতিকার’ না হওয়ায় সোমবার পুলিশ সুপারের সঙ্গেও দেখা করেন মা-মেয়ে। তিনি আইসি-কে ডেকে অবিলম্বে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেন। মা-মেয়ে থানায় গেলে পুলিশ আশ্বাস দেয়, অভিযুক্তদের ডেকে পাঠিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। কিন্তু দু’দিন পেরিয়ে গেলেও তেমন কিছু হয়নি। তাঁদের আইনজীবী থানায় ফোন করেন। এর পরে আইসি-র নির্দেশে মা-মেয়েকে থানায় ডেকে লিখিত অভিযোগ নেওয়া হয়। তাতে বাড়িওয়ালি পারুল বন্দ্যোপাধ্যায়, তাঁর স্বামী কেনারাম বন্দ্যোপাধ্যায় এবং সুশান্ত ঘোষ ওরফে ডিঙ্গু তাঁদের দোকান থেকে মেরে-ধরে বের করে চাবি কেড়ে নিয়েছেন বলে অভিযোগ জানানো হয়েছে।
কিন্তু অভিযোগ পেয়ে পুলিশ ‘রিসিভ কপি’ দিতে টালবাহানা করে বলেও অভিযোগ। যদিও থানা তা স্বীকার করেনি। মাধবীদেবীর মতে, ‘‘তৃণমূল নেতাকে বাঁচাতেই পুলিশ আমাদের নানা ভাবে হয়রান করছে।” পুলিশ অবশ্য তা উড়িয়ে দিয়েছে। সুশান্তবাবুর দাবি, “সিপিএমের আমলেই ওই দোকানটি বন্ধ করিয়ে দেওয়া হয়েছিল। পরে ফের মা-মেয়ে জোর করে সেটি খুলে বসেন। বাড়িকি শরিকি সম্পত্তি। এই নিয়ে গণ্ডগোলের আশঙ্কায় আমি আপাতত দোকান বন্ধ রাখতে বলেছি। আমার জায়গায় যে কেউ এটা করত। কে কোথায় আমার নামে অভিযোগ করেছে, তাতে কিছু যায়-আসে না!”
বুধবার রাতেই পারুলদেবী ও তাঁর স্বামী কেনারামবাবুকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। এ দিন আদালতে তোলা হলে তাঁরা জামিন পেয়ে গিয়েছেন। স্থানীয় আলমগঞ্জ কল্পতরু ময়দানের কাছে তাঁদের বাড়িতে গিয়ে কারও দেখা মেলেনি। বারবার চেষ্টা করেও মোবাইলে তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি। |