দেওয়াল লিখন, পোস্টার বা ফ্লেক্স টাঙাতে বাধা দিচ্ছে তৃণমূল। বাধা দেওয়া হচ্ছে বাড়ি বাড়ি প্রচারেও। ২১ ও ৩২ নম্বর ওয়ার্ডে তাদের কর্মী-সমর্থকদের এমন বাধা দেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ তুলল সিপিএম। এর মধ্যে ২১ নম্বর ওয়ার্ডে সিপিএমের প্রার্থী প্রাক্তন বিধায়ক বিপ্রেন্দু চক্রবর্তী।
বুধবার সন্ধ্যায় দুর্গাপুরে সিটি সেন্টারে দলীয় কার্যালয়ে ডাকা সাংবাদিক সম্মেলনে সিপিএম নেতারা তৃণমূলের বিরুদ্ধে বাধা দেওয়ার অভিযোগ আনেন। মনোনয়ন পত্র দাখিলের সময় থেকেই কখনও সিপিএম কখনও বা কংগ্রেসের তরফ থেকে তৃণমূলের বিরুদ্ধে হুমকি দেওয়া, প্রচারে বাধা দেওয়ার অভিযোগ তোলা হয়েছে। ২২ নম্বর ওয়ার্ডের কংগ্রেস প্রার্থী সৌরিন দাসকে মনোনয়ন প্রত্যাহার করার জন্য হুমকি দেওয়া হয় বলে অভিযোগ। পরে তাঁর সমর্থনে লাগানো একাধিক ফ্লেক্স ছিঁড়ে দেয় দুষ্কৃতীরা। ১৮ মে ২৫ নম্বর ওয়ার্ডের কংগ্রেস প্রার্থী বিকাশ রায় অভিযোগ করেন, পাশের ওয়ার্ডের তৃণমূল প্রার্থী দীপু লাহার নেতৃত্বে তৃণমূলের লোকজন তাঁকে, তাঁর ভাই ও ছেলেকে মারধর করে। কংগ্রেসের মতোই সিপিএমও তৃণমূলের বিরুদ্ধে প্রচারে বাধা দেওয়া ও হুমকির অভিযোগ তুলেছে। ৯ মে ৩২ নম্বর ওয়ার্ডের সিপিএম প্রার্থী লক্ষ্মীমণি হাঁসদার বাড়িতে গিয়ে তৃণমূল কর্মী-সমর্থকেরা তাঁকে ও তাঁর মাকে হুমকি দেয় বলে অভিযোগ। সিপিএমের অভিযোগ, এই ওয়ার্ডে প্রার্থীর সমর্থনে দেওয়াল লিখতে বাধা দেওয়া হচ্ছে। এমনকি দলীয় পতাকা, পোস্টার, ফ্লেক্স লাগাতেও দেওয়া হচ্ছে না।
২১ নম্বর ওয়ার্ডের সিপিএম প্রার্থী বিপ্রেন্দুবাবুর অভিযোগ, প্রার্থীপদ ঘোষণার পরে এলাকায় দেওয়াল লিখতে গিয়েছিলেন তাঁর অনুগামীরা। কিন্তু স্থানীয় তৃণমূল কর্মী-সমর্থকরা তা করতে দেননি। এর পরে ১৮ মে রাত ৮টা নাগাদ সারদাপল্লির দলীয় কার্যালয়ে কর্মী-সমর্থকেরা পুরভোটের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করছিলেন। সেই সময়ে হঠাৎ তৃণমূলের ১৫-২০ জন সেখানে গিয়ে সিপিএম কর্মী-সমর্থকদের কার্যালয় থেকে বেরিয়ে যেতে বলে। অভিযোগ, কার্যালয়টি চিরদিনের জন্য বন্ধ করে দেওয়ার কথাও বলা হয়। বিপ্রেন্দুবাবুর কথায়, “জোর করে, ভয় দেখিয়ে তৃণমূল আধিপত্য কায়েম করতে চাইছে। গণতন্ত্রের পক্ষে তা মোটেও সুখকর নয়।” তাঁর দাবি, নির্বাচনের আর মাত্র দিন দশেক বাকি। অথচ ওয়ার্ডে দেওয়াল লিখন, পোস্টার বা ফ্লেক্স লাগানোর কাজ করা যায়নি। বিপ্রেন্দুবাবুর অভিযোগ, “লাগাতার হুমকির মুখে সরে আসতে বাধ্য হচ্ছেন আমাদের কর্মী-সমর্থকরা। আমরা চাই না, এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে এলাকার শান্তিশৃঙ্খলা বিঘ্নিত হোক। তাই বাড়ি বাড়ি গিয়ে প্রচার চালানোর চেষ্টা করছি।” কিন্তু সে কাজ করতে গিয়েও সমস্যায় পড়তে হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন তিনি। তাঁর কথায়, “তৃণমূলের ভয়ে মানুষজন সিঁটিয়ে থাকছেন। স্বতঃস্ফূর্ত সাড়া মিলছে না।”
ভোটে জিতে ক্ষমতায় এলে বিপ্রেন্দুবাবুকে মেয়র করা হতে পারে, এমন ইঙ্গিত আগেই দিয়েছেন সিপিএমের জেলা সম্পাদক অমল হালদার। তাঁর ওয়ার্ডেই ‘ঠিক ভাবে’ প্রচার করতে না পারায় চিন্তায় পড়েছে সিপিএম। অমলবাবুর দাবি, “জোর করে গণতান্ত্রিক পরিবেশ নষ্ট করার চক্রান্ত চলছে। এটা খুবই দুশ্চিন্তার।” তৃণমূল নেতৃত্ব অবশ্য সিপিএমের তোলা অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছে। দলের জেলা (শিল্পাঞ্চল) সভাপতি অপূর্ব মুখোপাধ্যায় বলেন, “বাম জমানার ৩৪ বছরে মানুষের কণ্ঠরোধ করে রাখা হয়েছিল। আজ যদি বাড়ির মালিকেরা তার প্রতিবাদে সিপিএমকে দেওয়াল লিখতে অনুমতি না দেন, তার দায় আমরা নেব কেন?” |