প্রতিবছর বন্যার জলে যে মালদহ হাবুডুবু খায়, সেই মালদহ জেলাজুড়ে তীব্র জল সঙ্কট দেখা দিয়েছে। প্রশাসনিক সূত্রের খবর, পানীয় জলের পাশাপাশি সেচের জলের অভাবে বিঘার পর বিঘার পাট নষ্ট হতে চলেছে। নষ্ট হচ্ছে সব্জির বাগান। বামনগোলা, হবিবপুর, গাজল, পুরাতন মালদহ থেকে শুরু করে রতুয়া, চাঁচল, হরিশ্চন্দ্রপুরে ভূগর্স্থ জলের স্তর নেমে যাওয়ায় এলাকার খাল-বিল, পুকুর নদীর জল শুকিয়ে যাওয়ায় ওই সমস্যা দেখা দিয়েছে। অকেজো হয়ে পড়েছে এক হাজারের ও বেশি টিউবওয়েল। এতে বহু গ্রামের মানুষকে কুয়ো, পুকুর, নদীর জল খেতে হচ্ছে। অথচ কয়েকমাসের মধ্যেই ফের গঙ্গা, মহানন্দা, ফুলহার, টাঙন, কালিন্দী নদীর জলস্ফীতিতে মালদহ জেলা ভাসবে। জেলার জল সঙ্কট মেটানোর পাশাপাশি আগাম বন্যা প্রতিরোধের জন্য জেলাপ্রশাসন জরুরি বৈঠক শুরু করেছে। অকেজো টিউবওয়েল সারাই করার জন্য জেলা প্রশাসনের তরফে রাজ্য সরকারের কাছে অর্থ সাহায্য চেয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছে। জেলাশাসক শ্রীমতি অর্চনা বলেছেন, “প্রচণ্ড গরমে জেলায় জল নিয়ে সমস্যা হচ্ছে। জলস্তর নেমে য়াওয়ায় প্রচুর টিউবওয়েল অকেজো হয়ে গিয়েছে। জলের সঙ্কট মেটাতে জেলার সমস্ত ব্লকের বিডিও ও জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতরের (পিএইচই) আধিকারিকদের সঙ্গে বৈঠক করা হয়েছে। নতুন টিউবওয়েল বসানোর পাশাপাশি পিএইচই-কে টিউবওয়েলগুলি দ্রুত মেরামত করার নিদের্শ দেওয়া হয়েছে। অতিরিক্ত টাকার জন্য রাজ্য সরকারকে চিঠি দেওয়া হয়েছে।” জল সঙ্কটের হাত থেকে রেহাই দিতে মালদহের কংগ্রেস সাংসদ মৌসম বেনজির নূর ও জেলাপরিষদের সভাধিপতি উজ্জ্বল চৌধুরী রাজ্যের জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতরের মন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করবেন। সভাধিপতি বলেন, “জেলায় ভয়াবহ জল সঙ্কট দেখা দিয়েছে। পানীয় জলের পাশাপাশি সেচের জলের অভাবে পাট নষ্ট হচ্ছে। টিউবওয়েল, কুয়োর জল শুকিয়ে যাওয়ায় বহু গ্রামের মানুষকে পুকুর-নদীর জল খেতে হচ্ছে। জেলার এই সমস্যা মেটাতে জনস্বাস্থ্য দফতরের মন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে অর্থ সাহায্য চাইব।” রাজ্য সরকার সাহায্য না করলে মালদহের মানুষকে জল সঙ্কটের হাত থেকে রক্ষা করা যাবে না বলে সভাপতি জানিয়েছেন। একইভাবে কংগ্রেস সাংসদ মৌসম বেনজির নূর বলেন, “আমার নির্বাচনী ক্ষেত্রে উত্তর মালদহতে সবচেয়ে বেশি জলকষ্ট দেখা দিয়েছে। যে সমস্ত এলাকা বন্যায় ভেসে যায়, সেখানে নদী পুকুর সব শুকিয়ে গিয়েছে। জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতরের মন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে সমস্যার কথা জানাব।” জেলা কৃষি দফতরের উপ অধিকর্তা সজল ঘোষ বলেন, “জেলায় এবার ২৬ হাজার হেক্টর জমিতে পাট চাষ হয়েছিল। বৃষ্টি ও জলের অভাবে পাটগাছের বৃদ্ধি কমে গিয়েছে। আগামী ৭-৮ দিনের মধ্যে যদি বৃষ্টি না হয় তবে সমস্ত জমির পাটগাছ নষ্ট হয়ে যাবে।” পিএইচই-র সুপারিন্টেন্ডিং ইঞ্জিনিয়ার নিতাইপদ ভাবক বলেন, “জলস্তর নেমে যাওয়ার জেলায় হাজারেরও বেশি টিউবওয়েল খারাপ। বিদ্যুৎ সংযোগ না মেলায় কাজ শেষ হওয়ার পরেও ৫০টি-র বেশি ডিপ টিউবওয়েল চালু করা যাচ্ছে না।” |