কর্মীদের তৎপরতায় রক্ষা এ যাত্রা
ফের অগ্নিকাণ্ড কৃষ্ণনগর সদর হাসপাতালে
ত ডিসেম্বরে কলকাতার আমরি হাসপাতালে অগ্নিকাণ্ডে মারা গিয়েছিলেন নব্বই জনের বেশি। তারপরে ছয় মাসও পুরো কাটেনি। কৃষ্ণনগর সদর হাসপাতালের শিশু বিভাগে এর মধ্যেই দু’বার অগ্নিকাণ্ড ঘটে গেল। মঙ্গলবার গভীর রাতে হাসপাতালের দোতলায় অসুস্থ নবজাতকের পরিষেবা কেন্দ্র বা এসএনসিইউ-এর পাশে অস্থায়ী ‘স্টেপ ডাউন’ ওয়ার্ডের একটি বাতানুকূল যন্ত্রে আগুন ধরে যায়। খুব দ্রুত পুরো ঘর ভরে যায় বিষাক্ত কালো ধোঁয়ায়। সেই সময় ওই ঘরের ১৩টি শয্যায় ৩২টি অসুস্থ শিশু ভর্তি ছিল। কর্তব্যরত চিকিৎসক ও নার্সরা দ্রুত তাদের বাইরে বের করে আনেন। পিছনের দরজা দিয়ে ১০টি অসুস্থ শিশুকে বের করে আনা হয়। পাশেই প্রসূতি বিভাগে ভর্তি ছিলেন ১৬৫ জন মহিলা। ছিল ১১৪টি সদ্যোজাতও। আগুন আর ধোঁয়ার হাত থেকে বাঁচতে সন্তান কোলে নিয়ে তাড়াহুড়ো করে সিঁড়ি দিয়ে নিচে নামতে গিয়ে প্রসূতিদের কয়েকজন আহত হয়েছেন। পরে দমকল এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। বিষয়টি নিয়ে উচ্চপর্যায়ের তদন্ত শুরু করেছে জেলা প্রশাসনও। মাস দুয়েক আগেও এই হাসপাতালের এসএনসিইউ বিভাগের ভেতরে একটি ওয়ার্মার-এ আগুন লেগে গিয়েছিল। এ বারে মতো সে বারও চিকিৎসক, নার্স ও হাসপাতাল কর্মীদের তৎপরতায় বড় একটি দুর্ঘটনার হাত থেকে অল্পের জন্য রক্ষা পায় সদ্যোজাত শিশুরা।
অগ্নিকাণ্ডে পুড়েছে শিশুদের চিকিৎসার যন্ত্রপাতিও। — নিজস্ব চিত্র।
রাত সওয়া তিনটে নাগাদ হাসপাতালের পুরো দোতলা জুড়েই ধোঁয়া ছড়িয়ে পড়তে শুরু করে। নিচে থেকে ছুটে আসেন প্রসূতিদের বাড়ির লোক। দোতলা থেকে নিচে নামার একটাই সিঁড়ি। আবার হাসপাতাল ভবনে ঢোকা-বের হওয়ারও একটাই রাস্তা। ফলে সিঁড়ি দিয়ে নামতে গিয়ে শুরু হয় ধাক্কাধাক্কি। বেশ কয়েক জন প্রসূতি তাঁদের সদ্যোজাত শিশুদের নিয়ে পড়েও যান। হাসপাতালের ভিতর থেকে বেরিয়ে এসে তাঁরা খোলা আকাশের নিচে দাঁড়িয়ে থাকেন। গোটা হাসপাতাল জুড়ে ব্যাপক হুড়োহুড়ি শুরু হয়ে যায়। এরই মধ্যে চলে আসে দমকল দফতর। তারাই আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। ছুটে আসেন জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক ও উপ-মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক। হাসপাতালের সুপার অবশ্য এদিন হাসপাতালে ছিলেন না। আগুন নেভার পরে চিকিৎসক ও নার্সরা একে একে সমস্ত শিশুদের ওয়ার্ডে নিয়ে আসেন। চালু হয় এসএনসিইউ ওয়ার্ড। আগুনে দুটি ওয়ার্মার ও একটি ফটোথেরাপি যন্ত্র নষ্ট হয়ে যায়। স্বাস্থ্য দফতরের মুখপাত্র অনীত বিশ্বাস বলেন, “প্রাথমিক ভাবে জানা যাচ্ছে বাতানুকূল যন্ত্রে আগুন লেগে এই অগ্নিকাণ্ড ঘটেছে। বিষয়টি আমরা পূর্ত দফতরকে জানিয়েছি। তারাই তদন্ত করে বের করবেন কেন ওই যন্ত্রে আগুন লেগেছিল। এবং ভবিষ্যতে যাতে এমন ঘটনা আর না ঘটে, সে ব্যবস্থাও তারা করবেন বলে আশা করছি।”
ঘটনার পরে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলেও আতঙ্ক কাটেনি প্রসূতিদের। অনেকেই আর হাসপাতালে ঢুকতে রাজি ছিলেন না। দীর্ঘ সময় ধরে তাঁদের বুঝিয়ে ভিতরে ঢোকান স্থানীয় কিছু যুবক। ঘন্টা দেড়েক পরে আবার যথারীতি চিকিৎসাও শুরু হয়। তবুও যেন প্রসূতিদের মন থেকে আতঙ্ক কাটছিল না। ওয়ার্ডের ভিতরে শিশুসন্তানকে কোলের ভেতরে জাপটে ধরে পুতুল ঘোষ বলেন, “হঠাৎ সকলে আগুন বলে চিৎকার শুরু করে। চোখ খুলতে দেখি চারদিকে কালো ধোঁয়া। কোনও রকমে বাচ্চাটাকে কোলে নিয়ে নিচে নামার চেষ্টা করি। সিঁড়িতে তখন প্রচুর ভিড়।” ডলি ঘোষ বলেন, “বাচ্চাটাকে যে শেষ পর্যন্ত বাঁচাতে পারব ভাবিনি।” কর্তব্যরত চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, বাচ্চাগুলোকে বের করতে আর একটু দেরি হলেই আগুনে না হোক, বিষাক্ত ধোঁয়ায় একাধিক বাচ্চার মৃত্যু হতে পারত।
কিন্তু কী ভাবে আগুন লাগল বাতানুকূল যন্ত্রে? হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, ১৫ দিন আগে স্টেপ ডাউন ওয়ার্ডে তিনটি বাতানুকূল যন্ত্র বসিয়ে দিয়েছিল পূর্ত দফতর (ইলেকট্রিক্যাল)। সাত দিন আগে যন্ত্রগুলি চালু করতে গিয়ে দেখা যায়, সেগুলি খারাপ। ঠাণ্ডা হাওয়ার পরিবর্তে গরম হাওয়া বের হচ্ছে। হাসপাতালের সুপার কাজল মণ্ডল বলেন, “আমরা সংশ্লিষ্ট দফতরকে যন্ত্র তিনটি বদলে দেওয়ার জন্য একাধিকবার চিঠি করেছি। কোনও ফল হয়নি। যদি বদলে দেওয়া হত তাহলে এমন দুর্ঘটনা ঘটত না।” যন্ত্রগুলি না পাল্টে তারা সোমবার সেগুলি চালু করে দিয়ে যায়। ওই ওয়ার্ডের কর্তব্যরত চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, যন্ত্রটি চালুর পর থেকে বিকট শব্দ করতে থাকায় তারা তা বন্ধ করে দেন। এবং মঙ্গলবার রাত সাড়ে ৮টার সময়ে অন্য একটি যন্ত্র চালু করেন। প্রায় ৭ ঘন্টা চলার পরে হঠাৎ আগুন ধরে যায় সেই যন্ত্রেই।
আগুনের জেরে সদ্যোজাত শিশু কোলে মায়েদের ঠাঁই গাছতলায়। সুদীপ ভট্টাচার্যের তোলা ছবি।
২০০৮ সালে চালু হয় এসএনসিইউ বিভাগ। সেই সময় থেকেই হাসপাতাল চত্বরে জরুরি ভিত্তিতে সব সময়ের জন্য এক জন ‘অন কল’ কর্মী রাখার কথা পূর্ত দফতরের। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের দাবি, রাতে তেমন কেউ থাকেন না। ফলে এদিন কাউকে না পেয়ে রীতিমত জীবনের ঝুঁকি নিয়ে এক জন নার্স হাসপাতালের মেইন সুইচ বন্ধ করে দেন। তবে ওই ঘটনার পরে উচ্চপর্যায়ের তদন্ত শুরু করেছে স্বাস্থ্য ও পূর্ত দফতর।
বুধবার দুপুরে হাসপাতালে আসেন সদ্যোজাত শিশু মৃত্যু কমানোর জন্য তৈরি বিশেষ টাস্ক ফোর্সের চেয়ারম্যান ত্রিদিব বন্দ্যোপাধ্যায় ও পূর্ত দফতরের (ইলেকট্রিক্যাল) চিফ ইঞ্জিনিয়ার অরুণকুমার ভদ্র। ত্রিদিববাবু বলেন, “প্রাথমিক ভাবে মনে হচ্ছে যে বাতানুকূল যন্ত্রগুলির গুণগত মান ভাল ছিল না। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বার বার বলা সত্ত্বেও কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। বিষয়টি তদন্ত করে দেখে দোষী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে বলেছি।” আর অরুণবাবু বলেন, “আমরা একটি সংস্থার মাধ্যমে যন্ত্রগুলি বসিয়েছিলাম। তাদের অবহেলা বা গাফিলতি রয়েছে দেখা যাচ্ছে। আমরা ওই সংস্থার বিরুদ্ধে কড়া আইনানুগ ব্যবস্থা নেব।” বিষয়টি নিয়ে উচ্চপর্যায়ের তদন্ত শুরু করেছে জেলা প্রশাসনও।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.