আর্সেনিকের ঝুঁকি সত্ত্বেও নলকূপ বসানোর অনুমতি
রাজ্যের আর্সেনিক টাস্ক ফোর্স গোটা যাদবপুর অঞ্চলকে আর্সেনিক-ঝুঁকিপ্রবণ হিসেবে চিহ্নিত করেছে। তা সত্ত্বেও কলকাতা পুরসভা যাদবপুর বিধানসভা এলাকার ১০টি ওয়ার্ডে গভীর ও অগভীর নলকূপ বসানোর ঢালাও অনুমতি দিল। নিজের বিধানসভা এলাকায় জলসঙ্কট মেটানোর জন্য পুরসভার হস্তক্ষেপ চেয়ে বুধবার পুরভবনে গিয়েছিলেন যাদবপুরের বিধায়ক তথা বিদ্যুৎমন্ত্রী মণীশ গুপ্ত। সেখানে মেয়রের সঙ্গে বৈঠক করেন তিনি। ওই বৈঠকেই নলকূপ বসানোর চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘স্কুল অফ এনভায়রনমেন্টাল স্টাডিজ’ দক্ষিণ কলকাতা ও দক্ষিণ শহরতলির বিস্তীর্ণ অঞ্চলকে আগেই আর্সেনিকপ্রবণ বলে চিহ্নিত করেছে। আর্সেনিক টাস্ক ফোর্সও মনে করে, ওই এলাকা আর্সেনিক-ঝুঁকিপ্রবণ। কিন্তু মণীশবাবুর বক্তব্য, “যাদবপুরে আর্সেনিক নেই।” রাজ্যের আর্সেনিক টাস্ক ফোর্সের চেয়ারম্যান কুমারজ্যোতি নাথ অবশ্য মণীশবাবুর এই দাবি মানেননি। তিনি বলেন, “যাদবপুর তথা দক্ষিণ কলকাতা আর্সেনিকপ্রবণ এলাকা। সব নলকূপেই যে আর্সেনিক মিলবে, তার কোনও নিশ্চয়তা নেই। কিন্তু সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নিতে হবে।”
শুধু আর্সেনিক-দূষণের আশঙ্কাই নয়, ভূস্তরের জল লাগামছাড়া ভাবে ব্যবহারে প্রাকৃতিক ভারসাম্যও নষ্ট হচ্ছে বলে ভূ-বিজ্ঞানীরা বারংবার সতর্ক করেছেন। যাদবপুর বিধানসভা এলাকায় জলস্তর এত নীচে নেমে গিয়েছে যে, খুব সকালে কিংবা সন্ধ্যার পরে পাম্প চালিয়ে গভীর নলকূপের জল তুলতে হয় দক্ষিণ শহরতলির বহু জায়গায়। জলের জন্য ২০০ ফুট থেকে ৩০০ ফুট পর্যন্ত যেতে হয়। তা সত্ত্বেও পুরসভা ওই এলাকায় আরও নলকূপ বসানোর অনুমতি দিচ্ছে কী ভাবে? মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায় বলেন, “যত দিন পর্যন্ত ১০টি ওয়ার্ডের সর্বত্র গঙ্গার পরিস্রুত জলের সরবরাহ নিশ্চিত করা না যাচ্ছে, তত দিন নলকূপ থেকে জল তোলা ছাড়া উপায় নেই।”
বিদ্যুৎমন্ত্রী বলেন, “যাদবপুর এলাকার ১০টি ওয়ার্ডে পানীয় জলের যথেষ্ট সমস্যা রয়েছে। বেশ কিছু ওয়ার্ডে সমস্যা তীব্র। এ দিনের বৈঠকে ঠিক হয়েছে, এশীয় উন্নয়ন ব্যাঙ্ক, বিশ্ব ব্যাঙ্ক থেকে স্বল্প সুদে ঋণ নিয়ে আগামী দু’বছরের মধ্যে যাদবপুর এলাকায় জল-সমস্যার সমাধান করা হবে।” কলকাতার জল সরবরাহের উন্নতির প্রয়োজনে মুখ্যমন্ত্রীর অনুমতি নিয়ে তিনি দিল্লিতে যোজনা কমিশনের কাছেও টাকা চাইবেন। মন্ত্রী জানান, জলের চাহিদা মেটাতে অবিলম্বে ২০০ কোটি টাকা প্রয়োজন।
তবে শহরের কোন ওয়ার্ডে ভূস্তরে জলের পরিমাণ কেমন, তা অবশ্য পুর-কর্তৃপক্ষ জানেন না। মহানগরীর সংযোজিত সব এলাকাতেই লাগামছাড়া ভাবে বহুতল তৈরি হচ্ছে। সেগুলিতে জল সরবরাহের জন্য ভরসা গভীর নলকূপই। এই অবস্থায় পুরসভার কী করণীয়, তা ঠিক করতে এ দিন পুরভবনে পুর-কমিশনারের সঙ্গে বৈঠক করেন রাজ্য জল অনুসন্ধান দফতরের কর্তারা। সেখানে ঠিক হয়েছে, শহরের প্রতিটি ওয়ার্ডে জলস্তরের অবস্থা জানতে নতুন করে সমীক্ষা হবে। সেই কাজ শেষ হবে আগামী ১৫ জুন। সমীক্ষায় শুধু জলস্তরই মাপা হবে না, ভূগর্ভস্থ জলের রাসায়নিক উপাদান কী রয়েছে (যেমন আর্সেনিক, ফ্লুওরাইড), তা-ও দেখা হবে। যাতে সেই এলাকায় জল সরবরাহ ব্যবস্থার রূপরেখা পাওয়া যায়।
এর পাশাপাশি, যদি দেখা যায় কোনও ওয়ার্ডে জলতল বিপজ্জনক ভাবে নেমে গিয়েছে, তা হলে সেই ওয়ার্ডে নতুন বাড়ি তৈরির অনুমতি পুরসভা দেবে না। বৈঠকের পরে মেয়র পারিষদ (নলকূপ) তারক সিংহ বলেন, “শহরের জলতল নেমে যাওয়া নিয়ে নানা কথা উঠছে। তাই বাস্তব পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতেই হবে।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.