|
|
|
|
প্রাথমিক তদন্তে বলছে পুলিশ |
চেনা কেউই খুন করেছে বাস্তুকারকে |
নিজস্ব সংবাদদাতা • শিলিগুড়ি |
নজরদারি চালিয়ে ছক কষে ‘পেশাদার খুনি’কে কাজে লাগিয়ে হিন্দুস্থান কনস্ট্রাকশন কর্পোরেশনের কালীঝোরা জলবিদ্যুৎ প্রকল্পের ইঞ্জিনিয়ার সন্দীপ সিংহকে (৩০) খুন করা হয়েছে বলে পুলিশের সন্দেহ। যে ভাবে খুব কাছ থেকে একটি গুলি করে সন্দীপবাবুকে হত্যা করা হয়েছে তাতেই পুলিশের ওই সন্দেহ জোরদার হয়েছে। ওই হত্যাকাণ্ডে নাইন এমএম পিস্তল ব্যবহার হয়েছে বলে পুলিশের ধারনা। রাজ্য পুলিশের উত্তরবঙ্গের আইজি সঞ্জয় সিংহ বলেছেন, “ওই উদ্বেগজনক ঘটনার তদন্তে নেমে কিছু তথ্য মেলেছে। সব দিকই খতিয়ে দেখা হচ্ছে। দ্রুত রহস্যের কিনারা করার চেষ্টা হচ্ছে।” পুলিশ সূত্রের খবর, সন্দীপবাবু সংস্থার বাস থেকে বাড়ির কাছের স্টপে নেমে মিনিট হেঁটে কোয়ার্টারে ঢুকতেন। তিনি একাই নামতেন। মঙ্গলবার রাত ৮টা নাগাদ বাস থেকে নামার মিনিট দেড়েকেই মধ্যেই একটি বাইক তাঁর খুব কাছে চলে আসে। তখনই বাইকের আরোহীদের কেউ গুলি করে পালায় বলে পুলিশের অনুমান। পুলিশের তদন্তকারী অফিসারদের কয়েকজন জানান, বাইক আরোহী দুজন থাকলে তাঁদের একজন সন্দীপবাবুর পূর্ব পরিচিত হওয়ার সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না। কারণ, সন্দীপবাবু চলন্ত অবস্থায় থাকলে বুকের ঠিক মাঝখানে ওই ভাবে গুলি করে পালানো সহজ নয়। সে ক্ষেত্রে পূর্ব পরিচিত কেউ বাইকটি চালাচ্ছিলেন এবং পেছনে আরোহী সেজে ‘পেশাদার খুনি’ বসে ছিল কি না সেই প্রশ্নেরও উত্তর খুঁজছে পুলিশ। জলপাইগুড়ির পুলিশ সুপার সুগত সেন বলেন, “ঘটনার তদন্তে নেমে অনেক তথ্যই মিলছে। সবই খতিয়ে দেখা হচ্ছে। বেশ কয়েকটি ব্যাপারে প্রশ্ন উঠেছে তার উত্তরও খোঁজা হচ্ছে।” শীঘ্রই রহস্যের কিনারা হবে বলে পুলিশ সুপারের আশা। ইতিমধ্যেই পুলিশ নিহতের ল্যাপটপ, কম্পিউটার এবং মোবাইল ফোন বাজেয়াপ্ত করেছে। তবে ঘটনায় জড়িতদের সম্পর্কে কোনও স্পষ্ট তথ্য পুলিশ সংগ্রহ করতে পারেনি কেন সেই প্রশ্নে ক্ষোভ প্রকাশ করেছে দার্জিলিং জেলা সিপিএম। আজ, বৃহস্পতিবার দলের মহিলা সমিতি ও যুব সংগঠনের সদস্যরা ভক্তিনগর থানায় স্মারকলিপি দিয়ে দুষ্কৃতীদের ধরার দাবি জানাবেন। সিপিএমের দার্জিলিং জেলার ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক জীবেশ সরকার বলেন, “কদিন আগেই শিলিগুড়ি লাগোয়া ভক্তিনগরে পেট্রোল পাম্পের কর্মীকে গুলি করে খুনের পরে টাকা লুঠ হয়েছে। ওই এলাকাতেই ফের খুনের ঘটনা ঘটল। দুষ্কৃতীরা এতটা বেপরোয়া খুনখারাপি করার সাহস পাচ্ছে কেন? পুলিশ-প্রশাসনের একাংশ কাজের কাজ করতে পারছেন না। মানুষ আতঙ্কে ভুগছেন। দ্রুত অভিযুক্তরা গ্রেফতার না হলে আন্দোলনে নামা হবে।” পুলিশ সূত্রের খবর, হত্যাকাণ্ডের আগে থেকেই দুষ্কৃতীরা এলাকায় কোথায় ঘাঁটি গেড়েছিল তা চিহ্নিত করার চেষ্টা হচ্ছে। ঘটনাস্থলের কাছেপিঠে একাধিক পানশালা, ‘ডান্স-বার’ও রয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, পানশালা লাগোয়া কিছু এলাকায় সন্ধ্যা হলেই মদ্যপদের হট্টগোল শুরু হয়। কিন্তু, পুলিশের একাংশের গা-ছাড়া মনোভাবের ফলেই দুষ্কৃতীরা বেপরোয়া হয়ে উঠছে কি না সেই প্রশ্নেও তদন্তের দাবি তুলেছেন ভুক্তভোগী বাসিন্দারা। জেলা পুলিশের এক কর্তা জানান, সব অভিযোগই খতিয়ে দেখা হবে। এদিকে, ওই ঘটনার প্রতিবাদে কালীঝোরায় জলবিদ্যুৎ প্রকল্পের কাজ বন্ধ রেখেছেন কর্মীরা। ফেডারেশন অব অল ইন্ডিয়ান হিন্দুস্থান কনস্ট্রাকশন এমপ্লয়িজ ইউনিয়নের সম্পাদক সুনীল সরকার বলেন, “একজনকে ইঞ্জিনিয়ারকে যেভাবে গুলি করে খুন করা হয়েছে তাতে কর্মীরা নিরাপত্তহীনতায় ভুগছেন। আমি বিষয়টি রাজ্য পুলিশের উত্তরবঙ্গের আইজি সহ বিভিন্ন জায়গায় জানিয়েছি।” |
|
|
|
|
|