|
|
|
|
বিদায়ী সহ-উপাচার্যকে নিয়ে জট |
ব্রাত্যর ‘পাল্টা’, ফাইল ফিরিয়ে কটাক্ষ আচার্যকে |
নিজস্ব সংবাদদাতা • কলকাতা |
তাল কাটল আবার!
রাজভবন আর উচ্চশিক্ষা দফতরের কাজের মধ্যে সমন্বয়ের অভাব লক্ষ করা গেল আরও এক বার। এ বার রাজ্যপালের ‘ভুল’ ধরতে তৎপর হলেন উচ্চশিক্ষা মন্ত্রী ব্রাত্য বসু।
কয়েক দিন আগে জটিলতা তৈরি হয়েছিল বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের অস্থায়ী উপাচার্য নিয়োগ নিয়ে। আর এ বার তালভঙ্গের মূলে আছে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ-উপাচার্য (শিক্ষা)-এর পদে ধ্রুবজ্যোতি চট্টোপাধ্যায়ের কার্যকাল শেষ হওয়ার বিষয়টি।
সহ-উপাচার্য (শিক্ষা)-এর পদে ধ্রুবজ্যোতিবাবুর চার বছরের মেয়াদ শেষ হয়ে যাচ্ছে আগামী ২ জুন। ওই পদে  পুরোদস্তুর কাউকে নিয়োগের আগে প্রচলিত বিধি অনুযায়ী উচ্চশিক্ষা দফতর আপাতত কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ-উপাচার্য (অর্থ) মমতা রায়কে বাড়তি দায়িত্ব দেওয়ার পক্ষপাতী। ওই দফতর সূত্রের খবর, এই মর্মে সুপারিশ করে উচ্চশিক্ষা মন্ত্রী ব্রাত্য বসুর তরফে ফাইল পাঠানো হয় রাজভবনে, রাজ্যপাল কথা আচার্য এম কে নারায়ণনের অনুমোদনের জন্য। মঙ্গলবার রাজভবন থেকে ফাইল পৌঁছয় উচ্চশিক্ষা দফতরে। ওই দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, ফাইলে আচার্য জানিয়েছেন, ধ্রুবজ্যোতিবাবুই আরও ছ’মাস দায়িত্ব পালন করুন।
সমস্যা দেখা দেয় তার পরেই। উচ্চশিক্ষা দফতর রাজ্যপালের এই সুপারিশ মানতে নারাজ। বুধবারেই ফের বিকাশ ভবন থেকে ওই ফাইল পাঠিয়ে দেওয়া হয় রাজভবনে। তাতে মমতা রায়কেই আপাতত কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ-উপাচার্য (শিক্ষা) পদের বাড়তি দায়িত্ব দেওয়ার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।
এবং এ বার তার সঙ্গে জুড়ে দেওয়া হয় একটু আইনি ব্যাখ্যা। রাজ্যপালের উদ্দেশে বলা হয়, আপনার জানা থাকার কথা, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনে এই ধরনের পরিস্থিতিতে সহ-উপাচার্য (অর্থ)-কে সহ-উপাচার্য (শিক্ষা)-এর দায়িত্ব পালন করতে বলার সংস্থান রয়েছে।
কয়েক দিন আগে বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের অস্থায়ী উপাচার্য হিসেবে নিয়োগের জন্য বিবেচনা করতে তিনটি নাম রাজ্যপালের কাছে পাঠিয়েছিল উচ্চশিক্ষা দফতর। তবে সে-ক্ষেত্রে প্রশাসনিক প্রক্রিয়ায় বড় ধরনের খামতি থেকে গিয়েছিল। উচ্চশিক্ষা সংসদের চেয়ারম্যান সুগত মারজিৎ নিজের প্যাডে তিনটি নাম প্রস্তাব করে পাঠান উচ্চশিক্ষা মন্ত্রীর কাছে। মন্ত্রী তাতে মন্তব্য লেখেন এবং সেই কাগজটিই ফাইলবন্দি হয়ে রাজভবনে চলে যায়। ওই ফাইল যখন রাজভবনে পৌঁছয়, রাজ্যপাল তখন কলকাতায় ছিলেন না। সচিবালয় মারফত বিষয়টি তাঁর কানে পৌঁছয়। তিনি কিছুটা ‘অসন্তুষ্ট’ হন বলেও সরকারি সূত্রের খবর। শেষ
পর্যন্ত ফাইলটি ফেরত নিতে হয় উচ্চশিক্ষা দফতরকে।
এ বার উচ্চশিক্ষা দফতর রাজ্যপালের সুপারিশ মেনে নেওয়ার পক্ষপাতী নয়। অনেকের ধারণা, বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের অস্থায়ী উপাচার্য নিয়োগ সংক্রান্ত ফাইল ফিরিয়ে নিতে বাধ্য হওয়ায় উচ্চশিক্ষা দফতর কলকাতার ক্ষেত্রে ‘পাল্টা বার্তা’ দিতে চাইছে। তারা বুঝিয়ে দিতে চায়, এই ক্ষেত্রে তারা যে-প্রস্তাব দিয়েছে, তা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন মেনেই। বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন সম্পর্কে ওয়াকিবহাল প্রবীণ শিক্ষকদের কেউ কেউ অবশ্য অন্য রকম একটা মতও দিয়েছেন। তাঁদের বক্তব্য, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুযায়ী সহ-উপাচার্য (অর্থ)-কে সাময়িক ভাবে সহ-উপাচার্য (শিক্ষা)-এর দায়িত্ব দেওয়া যেতে পারে। তবে যদি আচার্য তথা রাজ্যপাল তা জরুরি এবং উপযোগী মনে করেন তবেই। কিন্তু আলোচনার মাধ্যমে সমস্যা মেটানো হয়নি। তার বদলে যে-ভাবে ফাইল চালাচালি হচ্ছে, তাতে রাজভবনের সঙ্গে উচ্চশিক্ষা দফতরের সম্পর্ক আরও টানটান হতে পারে বলে আমলাদের একাংশের আশঙ্কা।
|
|
|
 |
|
|