মিড-ডে মিল বন্ধ, বঞ্চিত পড়ুয়ারা
কোথাও রান্নাঘর নেই। কোথাও আবার অভিভাবকদের সঙ্গে স্কুল কর্তৃপক্ষের মতান্তর চলছে। এমনই নানা সমস্যায় বাঁকুড়া জেলার কয়েকটি স্কুলে মাসের পর মাস ধরে বন্ধ রয়েছে মিড-ডে মিল। ফলে স্কুলে রান্না করা খাবার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে পড়ুয়ারা। এ জন্য প্রশাসনের আধিকারিকদের বিরুদ্ধে উদাসীনতার অভিযোগ তুলেছেন কিছু স্কুল কর্তৃপক্ষ। যদিও প্রশাসনের দাবি, স্কুলগুলির সঙ্গে আলোচনা করে সমস্যা মেটানো হচ্ছে।
জেলা স্কুল পরিদর্শকের (মাধ্যমিক) দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, বাঁকুড়া শহরের প্রতাপবাগান কালীমেলা জুনিয়র উচ্চবিদ্যালয়, ওন্দা বালিকা উচ্চবিদ্যালয় ও রামসাগর উচ্চবালিকা বিদ্যালয়ে উপযুক্ত পরিকাঠামোর অভাবে এখনও মিড-ডে মিল চালু করা যায়নি। ওন্দার বহড়ামুড়ি জুনিয়র উচ্চবিদ্যালয় ও ইঁদপুরের শালডিহা বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ে নানা গোলমালে বন্ধ রয়েছে কেন্দ্রীয় সরকারের এই প্রকল্প। জেলা স্কুল পরিদর্শক (মাধ্যমিক) দেবপ্রসন্ন বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “দ্রুত সমস্যা মিটিয়ে ওই স্কুলগুলিতে পড়ুয়াদের রান্না করা খাবার দেওয়ার জন্য চিঠি দিয়েছি।”
বস্তুত সারা দেশেই প্রথম শ্রেণি থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ুয়াদের স্কুলে দুপুরে রান্না করা খাবার (মিড-ডে মিল) দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। কোনও অবস্থাতেই মিড-ডে মিল বন্ধ রাখা যাবে না। এ কথা জানিয়ে স্কুল শিক্ষা দফতরের এক আধিকারিক বলেন, “অধিকাংশ স্কুলে মিড-ডে মিল চললেও এখনও ওই পাঁচটি স্কুলে তা চালু করা যায়নি। এ ক্ষেত্রে স্থানীয়স্তরে প্রশাসন সামান্য উদ্যোগ নিলেই সমস্যাগুলি কাটিয়ে মিড-ডে মিল চালু করা যায়।”
কী ধরনের সমস্যা? বাঁকুড়ার প্রতাপবাগান কালীমেলা জুনিয়র উচ্চবিদ্যালয়, ওন্দা বালিকা উচ্চবিদ্যালয় ও রামসাগর উচ্চবালিকা বিদ্যালয়ে মিডডে মিল রান্না করার জায়গা নেই। স্কুলগুলির বক্তব্য, রান্না করার জায়গার অভাব রয়েছে। স্কুলের কোনও ঘরে উনুন জ্বালিয়ে রান্না করার ক্ষেত্রে বিপদের ঝুঁকি রয়েছে। কালীমেলা জুনিয়র উচ্চ বিদ্যালয়ে পঞ্চম থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত প্রায় ৮০ জন ছাত্রী রয়েছে। ওই স্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষিকা সোনালি চৌধুরী বলেন, “আমরা মিড-ডে মিল চালু করতে ইচ্ছুক। কিন্তু স্কুলে রান্নাঘর করার মতো জায়গা নেই। কী করব? সমস্যার কথা জেলা শিক্ষা দফতরকে জানিয়েছি।” রামসাগর উচ্চবালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা জয়ন্তী মিশ্র চট্টোপাধ্যায় বলেন, “মিড-ডে মিলের রান্নাঘর তৈরি করে দেওয়ার জন্য রামসাগর পঞ্চায়েতকে জানিয়েছিলাম। তাঁরা জানিয়েছেন, শীঘ্রই স্কুলে রান্নাঘর তৈরি করে দেবেন। আশাকরি গরমের ছুটির পরে এ বার ছাত্রীদের দুপুরে রান্না করা খাবার দিতে পারব।”
আবার রান্না করার ব্যবস্থা থাকা সত্ত্বেও ওন্দার বহড়ামুড়ি জুনিয়র উচ্চ বিদ্যালয়ে মিড-ডে মিল রান্না করা হয় না। কেন? প্রধান শিক্ষক চন্দন শীট বলেন, “মিড-ডে মিলের চালু করার পরে এ নিয়ে অভিভাবকদের একাংশের সঙ্গে কিছু সমস্যা হয়েছিল। তাই আপাতত স্কুলে মিড-ডে মিল বন্ধ রয়েছে।” তাঁর অভিযোগ, প্রশাসনের কাছে এ ব্যাপারে সাহায্য চাওয়া হয়েছে। কিন্তু এখনও মিড-ডে মিল চালু করা যায়নি। ওই স্কুলে রয়েছে প্রায় ১১১ জন ছাত্রছাত্রী রয়েছে। অভিভাবকদের মধ্যে কাশীনাথ ঘোষ, রহিত লাহা-র অভিযোগ, “মিড-ডে মিলে ছেলেমেয়েদের নিম্নমানের খাবার দেওয়া হচ্ছিল। আমরা এ নিয়ে প্রতিবাদ জানিয়ে ভাল মানের খাবার দেওয়ার দাবি জানিয়েছিলাম। উল্টে স্কুল কর্তৃপক্ষ মিড-ডে মিল বন্ধ করে দিলেন। আমরা ফের স্কুলে খাবার দেওয়ার দাবি জানাচ্ছি।” প্রায় একই রকম সমস্যার জেরে দীর্ঘদিন মিড-ডে মিল বন্ধ ছিল ওন্দা ব্লকেরই লোধনা মানখামার বিবেকানন্দ বিদ্যামন্দিরে। সম্প্রতি প্রশাসনের আধিকারিকরা ওই স্কুলে গিয়ে ফের মিড-ডে মিল চালু করেছেন। ওন্দার জয়েন্ট বিডিও গোলাম গৌসল আজমের আশ্বাস, “স্কুল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে এ নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। শীঘ্রই ওই স্কুলে মিড-ডে মিল চালু করা হবে।”
আবার শালডিহা বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ে মিড-ডে মিল নিয়ে বেনিয়মের অভিযোগ ওঠার পর থেকে মিড-ডে মিল বন্ধ রয়েছে। কারণ ওই ঘটনার পরে স্কুলের শিক্ষিকারা মিড-ডে মিলের দায়িত্ব নিতে রাজি নয়। ওই স্কুলের দায়িত্বে রয়েছেন ইঁদপুরের অবর বিদ্যালয় পরিদর্শক কালীপদ সিংহ মহাপাত্র। তিনি বলেন, “মিড-ডে মিল নিয়ে মাস খানেক আগে বেনিয়ম করার অভিযোগ ওঠে। এরপর থেকে মিড-ডে মিল বন্ধ রয়েছে। অন্য শিক্ষিকারাও দায়িত্ব নিতে চাইছিলেন না।” তাঁর আশ্বাস, “আলোচনার পরে স্কুলের শিক্ষিকারা মিড-ডে মিলের দায়িত্ব নিতে রাজি হয়েছেন। গরমের ছুটির পরে ওই স্কুলে ফের মিড-ডে মিল চালু হচ্ছে।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.