সম্প্রতি ডোমকল মহকুমার চারটি ব্লকে দীর্ঘদিনের ব্লক সভাপতিদের পরিবর্তন করা হয়েছে। আর তা নিয়েই গোষ্ঠীদ্বন্দ ছড়িয়েছে তৃণমূলের অন্দরে। দলের কর্মীদের একাংশ ইতিমধ্যেই নতুন ব্লক সভাপতিদের বিরুদ্ধে পথে নেমে মিটিং-মিছিল শুরু করে দিয়েছেন। দলের নিচুতলার কর্মীদের অভিযোগ, “যাঁদের দৌরাত্ম্যে আমরা কংগ্রেস ছেড়ে এসেছিলাম তারাই আবার দলের নেতা হয়ে উঠেছেন। আর জন্মলগ্ন থেকে দলের সঙ্গে থাকা তৃণমূল নেতাদের ছেঁটে ফেলা হচ্ছে।” ফলে বিক্ষুব্ধ কর্মীরা দলের সভাপতি বদলের সিদ্ধান্ত মানতে নারাজ। তবে জেলা তৃণমূল নেতৃত্ব এ ব্যাপারে তেমন আমল দিচ্ছে না। তাদের সাফাই, এটা সাময়িক ক্ষোভ। গণতান্ত্রিক দলগুলিতে এমনটা হয়ে থাকে। পঞ্চায়েত নির্বাচন বা সংগঠনে এর কোনও প্রভাব পড়বে বলে মনে করছেন না তাঁরা।
বরাবরই ডোমকল কংগ্রেসের শক্ত ঘাঁটি। সিপিএমের সঙ্গে সঙ্গে সেয়ানে সেয়ানে লড়াই চলে তাদের। কিন্তু রাজ্যে তৃণমূল ক্ষমতায় আসার পর থেকে কংগ্রেস ও সিপিএমের একটা অংশ যোগ দিতে শুরু করেছে তৃণমূলে। ফলে দল এবং সাংগঠনে কিছু বদল ঘটাতে শুরু করেছে তাঁরা। ডোমকল মহকুমার চারটি ব্লকে পুরোনো সদস্যদের সরিয়ে নতুন সদস্যদের সভাপতি করা হয়েছে। আর এই নিয়েই দলের অন্দরমহলে তৈরি হয়েছে ক্ষোভ। রানিনগর-১ ও জলঙ্গি ব্লকে প্রকাশ্যে বিরোধিতা না হলেও ডোমকল ও রানিনগর-২ ব্লকে ওই সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করে মিটিং-মিছিল ও সই সংগ্রহের কাজ চলছে জোরকদমে। সোমবার ও বুধবার ডোমকলে ও রানিনগরে বৃহস্পতিবার বিক্ষোভ মিছিল হয়েছে। শুক্রবার চলেছে সই সংগ্রহ। ডোমকলে বহুদিনের সদস্য আমিরুল ইসলামকে সরিয়ে সদ্য কংগ্রেস ছেড়ে আসা জেলা পরিষদ সদস্য কমলেশ সেনগুপ্তকে সভাপতি করা হয়েছে। ইসলামপুরে স্বপন সরকারকে সরিয়ে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে ওই ব্লকের প্রাক্তন কংগ্রেস সভাপতি আমিনুল হাসানকে। জলঙ্গিতে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে বছর তিনেক আগে কংগ্রেস ছেড়ে আসা যুব নেতা মাসুম আহম্মেদকে। রানিনগর-২ ব্লকে রাবেয়া বিবিকে সরিয়ে সভাপতি করা হয়েছে রাব্বেল আলিকে। রাবেয়া বিবি জানিয়েছেন, রাব্বেল আলি কিছুদিন আগেও সিপিএমের সঙ্গে ছিল। তাঁর অভিযোগ, “ব্লক স্তরের কর্মীদের সম্পূর্ণ আড়ালে রেখেই উপরতলা থেকে সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে। এমনকী আগের দিন পর্যন্তও কিছুই জানা যাচ্ছে না। এতেই ক্ষুব্ধ হয়ে আন্দোলনে নেমেছেন কর্মীরা।” তবে রাব্বেল আলি ভিত্তিহীন বলে উড়িয়ে দিচ্ছেন অভিযোগ। তাঁর কথায়, “দিদির সঙ্গে কংগ্রেস ছেড়েছি। দলের জন্মলগ্ন থেকেই আমি তৃণমূল।” নতুন সভাপতিরাও বলছেন, এই অবস্থা সাময়িক। জেলা তৃণমূল কংগ্রেসের সভাপতি মহম্মদ আলি বলেন, “এই ঘটনায় দলের কোনও ক্ষতি হবেনা। সকলকে নিয়ে চলতে গেলে সকলকেই গুরুত্ব দিতে হবে। কংগ্রেস থেকে কয়েকজন গুরুত্বপূর্ণ নেতা আমাদের দলে এসেছেন। তাঁদের সম্মান দিতে কিছুটা বোঝাপড়া করতে হয়েছে। তবে কাউকে অসম্মান করা হয়নি।” |