সরকারি চেক ‘বাউন্স’ নিয়ে চাপানউতোর আমতায়
বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থাকে দেওয়া ক্ষুদ্র সেচ দফতরের চেক ‘বাউন্স’ করায় আটকে গেল নদী জলত্তোলন সেচ প্রকল্প (আরএলআই)-এ বৈদ্যুতিকরণের কাজ। বিষয়টি নিয়ে বিদ্যুৎ দফতর বণ্টন সংস্থা এবং ক্ষুদ্র সেচ দফতরের চাপান-উতোর চলছে।
যে প্রকল্পে বৈদ্যুতিকরণ হওয়ার কথা ছিল সেটি হল আমতা ১ ব্লকের অধীন ভোজান-২ নদী জলত্তোলন সেচ প্রকল্প। দামোদর থেকে পাম্প-এর সাহায্যে জল তুলে এই প্রকল্পে চাষ করা হয়। প্রকল্পটিতে বর্তমানে যে পাম্পহাউস রয়েছে সেটি চলে ডিজেলে। মোট ১৭৫ বিঘা জমিতে বছরভর সব্জি চাষ হয়। প্রায় ৩০০ চাষি এই প্রকল্পটির সুবিধা পান।
প্রকল্পটি ক্ষুদ্র সেচ দফতরের অধীনে থাকায় এখান থেকে জল নেওয়ার জন্য চাষিদের চাষের মরসুম শুরু হওয়ার আগেই ওই দফতরকে জলকর দিতে হয়। বিনিময়ে এটি চালানোর জন্য যে ডিজেল প্রয়োজন তার জোগান দেয় ক্ষুদ্র সেচ দফতর। চাষিদের অবশ্য বক্তব্য, প্রায়ই সরকারের দেওয়া ডিজেলে টান পড়ে। তখন তাঁরাই গাঁটের পয়সা খরচ করে অতিরিক্ত ডিজেল কিনে পাম্প চালাতে সাহায্য করেন। এই ভাবেই প্রকল্পটি চলে আসছে প্রায় তিরিশ বছর ধরে।
চাষিরা সেচ দফতরের কাছে আবেদন করেন যেন প্রকল্পটি বৈদ্যুতিকরণ হয়। চাষিদের যুক্তি, এটি বৈদ্যুতিকরণ হলে বিদ্যুতের বিল মেটাবে ক্ষুদ্র সেচ দফতর। এর ফলে ডিজেল না-পাওয়া গেলেও প্রকল্পটি চালু রাখা যাবে। বাড়তি ডিজেল কেনার জন্য চাষিদের গাঁটের কড়িও খরচ হবে না।
চাষিদের আবেদনের ভিত্তিতে ক্ষুদ্র সেচ দফতর প্রকল্পটি বৈদ্যুতিকরণ করার উদ্যোগ নেয়। এ বাবদ বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থার কাছে তারা ‘কোটেশনের’ নির্ধারিত ৩ লক্ষ ৮৪ হাজার টাকার চেক জমা দেয়। কিন্তু চেক ‘বাউন্স’ করায় বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থা বৈদ্যুতিকরণের কাজে আর হাত দেয়নি।
ক্ষুদ্র সেচ দফতর সূত্রের খবর, তারা এই টাকাটি দিয়েছিল কেন্দ্রীয় সরকারের ত্রয়োদশ অর্থ কমিশনের প্রাপ্য তহবিল থেকে। এই দফতর সূত্রের খবর, চেকে তারিখ লেখা ছিল চলতি বছরের ৩১ মার্চ। এর পরে চেকটি এই দফতর জমা করেছিল বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থার আমতা ১ গ্রুপ ইলেকট্রিক সাপ্লাই কার্যালয়ে ২ এপ্রিল। বন্টন সংস্থার হাওড়া ডিভিশন কার্যালয় থেকে চেকটি ব্যাঙ্কে জমা দেওয়া হলে এটি ‘বাউন্স’ করে।
ক্ষুদ্র সেচ দফতরের অধীন, এগ্রি-মেকানিক্যাল বিভাগের হাওড়া ডিভিশনের তরফ থেকে দাবি করা হয়, চেকে ৩১ মার্চ তারিখ লেখা থাকলেও এর পরবর্তী ৯ দিন পর্যন্ত টাকা তোলা যায়। এগ্রি-মেকানিক্যাল দফতরের হাওড়া ডিভিশনের নির্বাহী বাস্তুকার গৌতম বিশ্বাস বলেন, “আমরা ২ এপ্রিল বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থাকে চেক দিই। তাদের বলি চেক জমা দেওয়ার সাত দিনের মধ্যে টাকা তুলে নিতে। তারা আরও দেরি করে। তার ফলেই চেক বাউন্স করেছে।” অন্য দিকে, এই বক্তব্য মানতে নারাজ বিদ্যুৎ বন্টন সংস্থার হাওড়ার ডিভিশন এই ডিভিশনের পদস্থ আধিকারিকেরা জানান, চেক জমা পড়ার দু’দিনের মধ্যে তা ব্যাঙ্কে জমা দেওয়া হলেও সেটি ‘বাউন্স’ করে।
এ দিকে, ফের নতুন করে চেক দেওয়ার ক্ষেত্রে সমস্যায় পড়েছে ক্ষুদ্র সেচ দফতর। গৌতমবাবু বলেন, “নিয়মানুযায়ী চলতি আর্থিক বছরের বরাদ্দ করা ত্রয়োদশ অর্থ কমিশনের টাকা ৩১ মার্চ-এর মধ্যে আমরা খরচ করতে না-পারায় তা ফিরিয়ে নিয়েছে ত্রয়োদশ অর্থ কমিশন। আগামী অর্থ বছরে অর্থ কমিশনের কাছ থেকে ফের যাতে এই খাতে টাকা পাওয়া যায় সেই চেষ্টা করতে হবে।”
রসপুর এবং বালিচক এই দু’টি পঞ্চায়েত এলাকার চাষিরাই প্রকল্পটি থেকে চাষ করেন। ভোজান গ্রামের চাষি বংশী ভাণ্ডারী, বিশ্বনাথ ছাউলেরা বলেন, “আমরা হতাশ। ভেবেছিলাম প্রকল্পটিতে বৈদ্যুতিকরণ হয়ে যাবে। সেটা হল না। ফের ডিজেল কিনতে হবে।” তৃণমূল নেতা জয়ন্ত পোল্যে বলেন, “কয়েক বছর ধরে চাষিদের নিয়ে প্রকল্পটি যাতে বৈদ্যুতিকরণ হয় সেই চেষ্টা করেছিলাম। সব ভেস্তে গেল। কার গাফিলতিতে এটা হল সে বিষয়ে তদন্ত দাবি করছি।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.