ইয়েমেন ক্রমে পাকিস্তানের ন্যায় জেহাদি ইসলামের ঘাঁটি হইয়া উঠিতেছে। তাহার প্রমাণ পাওয়া গেল রাজধানী সানায় জাতীয় দিবসের বর্ণময় উদ্যাপনের পূর্বাহ্ণে আল-কায়দার ফিদাইন হামলার ঘটনায়। প্রতিরক্ষা বাহিনীর কুচকাওয়াজের মহড়া চলিবার সময় এক জেহাদি ইয়েমেনি সৈন্যের উর্দি পরিয়া অকুস্থলে পৌঁছাইয়া নিজের কোমরবন্ধনীর সহিত আটকানো বিস্ফোরক ফাটাইয়া অন্তত ১০৫ জন সৈন্যের মৃত্যু ঘটাইতে সক্ষম হয়। স্বভাবতই এ ঘটনায় জাতীয় দিবসের উৎসবের মেজাজ শোকাচ্ছন্ন হইয়া উঠে। ৩৩ বছরের স্বৈরশাসক আলি আবদুল্লা সালেকে অপসারিত করিয়া গণ-আন্দোলনের মাধ্যমে গত ফেব্রুয়ারিতে ক্ষমতাসীন প্রেসিডেন্ট আব্দ-রাব্বু মনসুর হাদির এটাই ছিল প্রথম জাতীয় দিবসের অনুষ্ঠান। তিনি জেহাদি সন্ত্রাস নিশ্চিহ্ন করার অঙ্গীকার করিয়া দায় সারিয়াছেন।
১৯৯০ সালে উত্তর ও দক্ষিণ ইয়েমেন সংযুক্ত হওয়ার দিনটিকেই ইয়েমেনে জাতীয় দিবস রূপে উদ্যাপন করা হইয়া থাকে। দক্ষিণের উপর সাবেক উত্তরের আধিপত্য শিরোধার্য করিতে যাহারা অনিচ্ছুক ছিল, আল-কায়দার আঞ্চলিক সংগঠন আনসার-আল-শরিয়া তাহাদের লইয়াই জেহাদি ইসলামের সংগঠন গড়িয়া তোলে। সৌদি আরব সংলগ্ন এই দক্ষিণ আরবের তৈলসমৃদ্ধ মরুপ্রান্তরে মার্কিন রণনৈতিক স্বার্থও প্রথমাবধি পর্যাপ্ত শাখা বিস্তার করিয়াছে। স্বভাবতই রাজনৈতিক ইসলাম সারা বিশ্বেই মার্কিন তথা পশ্চিমী সভ্যতা-সংস্কৃতির সহিত যে তীব্র সংঘাতে অবতীর্ণ, ইয়েমেন তাহার একটি মহড়া-মঞ্চ হইয়া উঠিয়াছে। দক্ষিণ ইয়েমেনে ঘাঁটি-গাড়া জেহাদিদের বিরুদ্ধে উত্তরের শাসকরা প্রায়শ যে বোমারু হানা চালায়, তাহাদের প্রয়োজনীয় গোয়েন্দা সূত্র, তথ্য ইত্যাদি মার্কিন গুপ্তচররাই সরবরাহ করিয়া থাকে। সানা নগরীতে ফিদাইন হামলাকে তাই প্রতিশোধমূলক প্রত্যাঘাত আখ্যা দেওয়া যায়।
ইয়েমেন দীর্ঘ কাল ধরিয়াই মার্কিন ভূ-রাজনীতির স্বার্থ রক্ষা করিয়া চলিতে অভ্যস্ত। অথচ সেখানে মার্কিন সমর্থিত স্বৈরশাসককেই সম্প্রতি জনতার প্রত্যাখ্যানে দেশত্যাগী হইতে হইয়াছে। আল-কায়দার কোনও শাখা যেমন ইরাকে কোনও দিন ছিল না, তেমনই ইয়েমেনেও। ওই সব দেশে মার্কিন ও বহুজাতিক সামরিক অভিযান, দখলদারি এবং আধিপত্যকামিতাই ক্ষুব্ধ, অপমানিত জাতীয়তাবোধকে জেহাদি ইসলামের মধ্যে প্রতিকার ও সান্ত্বনা খুঁজিতে প্ররোচিত করিয়াছে। ওয়াশিংটন যদি আরবভূমির এই সব জনগোষ্ঠীকে নিজেদের মতো থাকিতে দিত, তবে আজ যে আমেরিকাবিরোধী তীব্র বিদ্বেষ আরব ভূখণ্ডে ব্যাপ্ত রহিয়াছে, তাহা হয়তো থাকিত না। কিন্তু প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর হইতেই তো ইসলামের ভুবনকে বানরের পিঠে-ভাগের মতো নিজেদের মধ্যে বণ্টন করিয়া লওয়ার পশ্চিমী প্রক্রিয়ার শুরু। এখন তাহার মূল্য চুকাইবার পালা চলিতেছে। |