কেবলে পাথর ফেলে সিগন্যাল লাল, লুঠপাট ট্রেনে |
জঙ্গলের মধ্যে হঠাৎ দাঁড়িয়ে পড়েছিল ট্রেনটি। মঙ্গলবার রাত তখন প্রায় ১টা।
সিগন্যাল লাল দেখেই ট্রেন দাঁড় করিয়েছিলেন চালক। তখনই শুরু হয়ে গেল কামরায় ছিনতাই, লুঠপাট। পরে জানা গেল, সিগন্যাল লাল করে রাখাটা আদতে দুষ্কৃতীদেরই কাজ। পুলিশ জানিয়েছে, যে ‘কেবল’ দিয়ে সিগন্যাল পরিবর্তন করা হয়, তার উপর পাথর ফেলে রেখেছিল দুষ্কৃতীরা। এর ফলে কন্ট্রোল রুম থেকে সিগন্যাল পাল্টে সবুজ করা হলেও বাস্তবে তা কাজ করেনি।
ঘটনাটি ডাউন সরাইঘাট এক্সপ্রেসের। ঘটনাস্থল, ঝাড়খণ্ডের বারহাওড়ার কাছে মণিডাঙা স্টেশনে ঢোকার মুখে একটি জঙ্গল। রেল পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, মণিডাঙা স্টেশনের ‘আউটারে’ সিগন্যাল লাল দেখে একটা জঙ্গলের পাশে দাঁড়িয়ে পড়েছিলেন চালক। বুঝতে পারেননি, দুষ্কৃতীরা ডাকাতির মতলবে নিজেরাই সিগন্যাল লাল করে রেখেছিল। পরে মণিডাঙার স্টেশনমাস্টারও জানান, তাঁরা সিগন্যাল লাল করেননি। দুষ্কৃতীরাই ওই কাজ করেছে।
মঙ্গলবার রাতে প্রচণ্ড গরমে অধিকাংশ জানলাই খোলা রেখেছিলেন যাত্রীরা। দুষ্কৃতীরা ট্রেনের এস-৬, এস-৯ এবং আরও কয়েকটি কামরার জানলা দিয়ে যাত্রীদের ব্যাগ, গলার হার, কানের দুল ছিনিয়ে নিতে শুরু করে। সেই সঙ্গে শাবল জাতীয় কিছু দিয়ে দরজা ভাঙারও চেষ্টা করতে থাকে। আক্রান্ত যাত্রীদের চিৎকারে তত ক্ষণে ঘুম ভেঙে যায় অন্য যাত্রীদের। তাঁদেরই কেউ কেউ সাহস করে দরজা খুলে বাইরে নামার চেষ্টা করছিলেন। তখন কামরা থেকে কিছুটা দূরে সরে গিয়ে ইট ছুড়তে শুরু করে দুষ্কৃতীরা। এর মধ্যে ট্রেনচালক খবর দিয়েছিলেন কাছের স্টেশন মণিডাঙায়। সেখান থেকে আসা রেলকর্মী ও রেল পুলিশকে দেখতে পেয়ে জঙ্গলে গা ঢাকা দেয় দুষ্কৃতীরা। এর প্রায় এক ঘণ্টা পর ট্রেনটি হাওড়ার উদ্দেশে রওনা দেয়।
বুধবার সকালে ট্রেনটি হাওড়া স্টেশনে আসার পর তিন জন যাত্রী হাওড়া জিআরপিতে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। যাত্রীদের অভিযোগ, ওই সময় ট্রেনে কোনও রেল পুলিশ বা আরপিএফের দেখা মেলেনি। উত্তর ২৪ পরগনার খড়দহের বাসিন্দা জয়শ্রী হাজারিকা বলেন, “আমি জানলার দিকে মাথা করে শুয়ে ছিলাম। ওরা আমার ব্যাগটা জানলা দিয়ে টানাহ্যাঁচড়া করে ছিনিয়ে নেয়। ব্যাগে সোনার গয়না, মোবাইল, এটিএম কার্ড ছিল।” চেন্নাইয়ের বাসিন্দা এম ড্যানিয়েল নামে এক যাত্রী বলেন, “দুষ্কৃতীরা যে ভাবে দরজা ভাঙার চেষ্টা করছিল, মনে হচ্ছিল ওরা ঢুকতে পারলে আমাদের খুন করে ফেলবে।” হাওড়ার রেল পুলিশ সুপার মিলনকান্ত দাস বলেন, “যাত্রীদের অভিযোগ বারহাওড়া জিআরপিতে তদন্তের জন্য পাঠিয়ে দিয়েছি। আমাদের সীমানার জিআরপি থানাকেও তদন্তে সাহায্য করতে নির্দেশ দিয়েছি।” |