প্রশ্ন ফাঁসের জের, চিন্তায় ই-গর্ভন্যান্সও |
শুধু অনলাইনে পরীক্ষার ভাবনা ডিজিসিএ-র |
প্রশ্ন ফাঁস, জাল লাইসেন্স - একের পর এক কেলেঙ্কারিতে জড়িয়ে পড়ছে ভারতীয় পাইলটদের নাম। কিছু দিন আগে জাল লাইসেন্স-কাণ্ডে বেশ কয়েক জন পাইলট গ্রেফতার হন। চাকরিও যায় বেশ কিছু পাইলটের। এ বার সামনে এসেছে পাইলটদের লাইসেন্স সংক্রান্ত লিখিত পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁসের ঘটনা। এই ধরনের ঘটনা আটকাতে কড়া অবস্থান নিতে চাইছে ডিরেক্টরেট জেনারেল অফ সিভিল অ্যাভিয়েশন (ডিজিসিএ)। ছাপানো প্রশ্নপত্রের বদলে সবক’টি পেপারের পরীক্ষাই শুধু অন লাইনে করার কথা ভাবা হচ্ছে।
বুধবার কলকাতায় সল্টলেকের একটি সেন্টারে অন-লাইনে কমার্শিয়াল পাইলট লাইসেন্স-এর পরীক্ষা দিলেন ২৪ জন পাইলট। পরীক্ষা পরিচালনা করতে কলকাতায় এসেছিলেন ডিজিসিএ-র ডিরেক্টর জেনারেল ভরত ভূষণ স্বয়ং। এ ভাবে সেন্টারে গিয়ে ডিজিসিএ’র সর্বময় কর্তা পরীক্ষা তদারকি করছেন, এমন ঘটনা নজিরবিহীন বলে মনে করছেন বিমান পরিবহণের সঙ্গে যুক্ত বিশেষজ্ঞরা। ভরত ভূষণ বুধবার বলেন, “আমরা কয়েক মাস আগে অন-লাইন পরীক্ষা চালু করেছি। শুধু একটি পেপার (কারিগরি বিষয় সংক্রান্ত) আলাদা করে হাতে লিখে দিতে হচ্ছে। মার্চ মাসে ওই পরীক্ষার প্রশ্নই ফাঁস হয়েছে। ঘটনার পরে আমি সিবিআই-কে পুরো বিষয়টি তদন্ত করার অনুরোধ করেছি। আগামী দিনে এই কারিগরি বিষয়ের পেপারটির পরীক্ষাও যাতে অন-লাইনে করা যায় সে বিষয়েও চিন্তা-ভাবনা চলছে।” গত মার্চ মাসে, অন্য এক দল পাইলট যখন এই লাইসেন্স পাওয়ার পরীক্ষা দিচ্ছিলেন, তখন সেই পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস হয় দিল্লির ডিজিসিএ-র দফতর থেকেই। সম্প্রতি ওই প্রশ্ন ফাঁসে জড়িত সন্দেহে দুই পাইলটকে গ্রেফতার করেছে সিবিআই। এক জন এয়ার ইন্ডিয়ার সহযোগী অ্যালায়েন্স এয়ারের পাইলট এস এস মলহোত্র। অন্য জন ইন্ডিগো-র সিদ্ধার্থ চৌধুরী। দু’জনকেই এ দিন জেলে পাঠানো হয়েছে। সিবিআই সূত্রের খবর, ডিজিসিএ-এর দফতর থেকে সাত লক্ষ টাকার বিনিময়ে ওই প্রশ্নপত্র বার করে এনেছিলেন ললিত জৈন নামে এক ব্যক্তি। তিনি এখন জেলে। সেই ব্যক্তির হাত ঘুরেই অভিযুক্ত ওই দুই পাইলট প্রশ্নপত্রটি পান। মোটা টাকার বিনিময়ে ই-মেল মারফত তা ছড়িয়ে দেওয়া হয় অন্য পরীক্ষার্থীদের কাছে। সিবিআই জেনেছে, ললিত আগেও জাল লাইসেন্স চক্রে জড়িত থাকার দায়ে পুলিশের হাতে ধরা পড়েছিলেন। ভরত ভূষণ এ দিন বলেন, “পরীক্ষার পরেই দেখা যায়, কয়েক জন ওই পেপারে ১০০ শতাংশ নম্বর পেয়েছেন। অথচ, অন্য পেপারে তাঁরা সে রকম মানের ফল করেননি। সন্দেহ হওয়ায় সঙ্গে সঙ্গে ওই পরীক্ষা বাতিল করে এপ্রিল মাসে ফের পরীক্ষা নেওয়া হয়।” এই প্রশ্নপত্র ফাঁসের সঙ্গে ডিজিসিএ’র কোন অফিসারেরা জড়িত তা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে বলে জানিয়েছে সিবিআই।
শুধু পরীক্ষা নয়, ডিজিসিএ’র সমস্ত কাজকর্ম-ই এ বার ই-গভর্ন্যান্স-এর মাধ্যমে হবে বলেও ভরত ভূষণ এ দিন জানিয়েছেন। তাঁর কথায়, “শুধু দেশের নয়, বিদেশের বহু বিমানসংস্থাকেও আমাদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখতে হয়। ভারতের আকাশ দিয়ে উড়ে যাওয়ার জন্য আমাদের অনুমতি নিতে হয় ওই সংস্থাগুলিকে। ই-গভর্ন্যান্স চালু হলে বিশ্বের যে কোনও প্রান্তে বসেই আমাদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখা যাবে।” এই সংক্রান্ত বিস্তারিত প্রজেক্ট রিপোর্ট তৈরি করে তিনি বিমান মন্ত্রকের কাছে পাঠিয়েছেন। শহরের এক হোটেলে বসে বুধবার ডিজিসিএ’র এই সর্বময় কর্তা বলেন, “মন্ত্রকের সবুজ সঙ্কেত পেলে ১৫০ কোটি টাকার এই প্রকল্পের জন্য গ্লোবাল টেন্ডার ডাকা হবে।” |