সেবাযাত্রায় বিক্ষোভের মুখে নীতীশ কুমার |
মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমারের ‘সেবা যাত্রা’-য় স্থানীয় মানুষ পানি-বিজলি-সড়কের দাবিতে বিক্ষোভ দেখাতে গিয়ে তাঁর কনভয়ের কয়েকটি গাড়িতে ইট-পাটকেল ছুড়ল। তাতে মুখ্যমন্ত্রীর কোনও ক্ষতি হয়নি। এই ঘটনায় মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমারের ‘সুশাসন’ নিয়ে যেমন প্রশ্ন তুলতে শুরু করেছে বিরোধী দল আরজেডি, অন্য দিকে এ দিনের ঘটনায় তাঁর নিরাপত্তা নিয়েও একটি প্রশ্ন চিহ্ন উঠে এল।
আজ সেবা যাত্রায় মুখ্যমন্ত্রী বক্সার আসেন। তার আগে চৌসায় সকাল সাড়ে ৯টা নাগাদ মুখ্যমন্ত্রীর গাড়ির কনভয় পৌঁছয়। সেখানে মুখ্যমন্ত্রী ভূতত্ব বিভাগের একটি কাজ দেখতে যান। তখনও পর্যন্ত এমন ঘটনা যে ঘটতে পারে তা আঁচ করা যায়নি। তবে মুখ্যমন্ত্রীর রুটে গ্রামবাসীরা জমা হয়েছে এই খবর পেয়ে পুলিশ কর্তারা তাঁকে অন্য রাস্তা দিয়ে যাওয়ার জন্য অনুরোধ করেন। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রী সে প্রস্তাব খারিজ করে দেন। মুখ্যমন্ত্রী চৌসায় পৌঁছলে গ্রামের মানুষরা বিক্ষোভ দেখাতে থাকেন। স্থানীয় মানুষের অভিযোগ, দু’মাস ধরে এখানকার ট্রান্সফরমার খারাপ হয়ে আছে। ফলে বিদ্যুৎ নেই। পানীয় জল পাওয়া যাচ্ছে না। গ্রামের রাস্তা খারাপ। মুখ্যমন্ত্রী গ্রামবাসীদের দাবি খতিয়ে দেখে জেলাশাসককে অবিলম্বে ব্যবস্থা নিতে বলেন।
এরপর মুখ্যমন্ত্রীর গাড়ি চলে যাওয়ার পরে তাঁর কনভয়ের পিছনের দিকের কয়েকটি গাড়িতে হঠাৎই জমায়েত থেকে কয়েকটি ইট-পাটকেল ছোড়া হয়। তাতে পাঁচটি গাড়ির কাচ ভেঙে যায়। তার মধ্যে পুলিশের গাড়িও আছে। এই ঘটনায় কেউ আহত হননি। মুখ্যমন্ত্রীর এ দিনের সেবা যাত্রায় তাঁর সঙ্গী ছিলেন ডিজিপি অভয়ানন্দও। প্রশ্ন উঠেছে, মুখ্যমন্ত্রীর যাত্রা পথে এমন ঘটনা যে ঘটতে পারে তা নিয়ে কী পুলিশের কাছে আগাম খবর ছিল না? এক পুলিশকর্তা জানিয়েছেন, “এই ব্যাপারে তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।” এই ঘটনার ব্যাপারে ডিজিপি অভয়ানন্দ বলেন, “এটা এমন কোনও ঘটনা না। কিছু গ্রামের লোক জমায়েত হয়েছিল। মুখ্যমন্ত্রীর গাড়ি যাওয়ার সময় কিছু ঘটেনি। তাতে মুখ্যমন্ত্রীরও কোনও সমস্যা হয়নি।” স্থানীয় লোকজন কিছু গাড়ি ভাঙচুর করেছে বলে জানা গিয়েছে। এই প্রসঙ্গে ডিজি বলেন, “পিছনে কোনও গাড়িতে এমন হতে পারে।”
সম্প্রতি সেবা যাত্রায় বেরিয়ে নীতীশ কুমার বেশ কয়েকটি জানিয়ে মানুষের ক্ষোভের সামনে পড়েন। তা নিয়ে আরজেডি-র প্রধান লালু প্রসাদ যাদব বলেন, “নীতীশ কুমারের ধোকা বাজি ফাঁস হয়ে গেছে। লোকতন্ত্রে জন প্রতিনিধিদের মালিক জনতা। বিহারে নীতীশ কুমারের রাজত্বে জনতার উপরে তন্ত্রের অধিকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এখান বিহারে মালিক নীতীশ কুমার। সেখানে জনতার কোনও দাম নেই। এই ঘটনায় তা প্রমাণ হয়েছে। রাষ্ট্রীয় জনতা দল বিহারে লাগাতার আন্দোলনে যাবে।” তাঁর আরও বক্তব্য, “নীতীশ কুমার যে সব প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন তা তিনি রাখতে পারছেন না। ফলে মানুষের মধ্যে ক্ষোভ তৈরি হচ্ছে।” দলের সাংসদ ও সেক্রেটারি জেনারেল রামকৃপাল যাদব বলেন, “সাত বছর ধরে নীতীশ কুমার মানুষকে ধোঁকা দিয়ে যাচ্ছেন। কোটি কোটি টাকা খরচ করে সার্কিট হাউস ভাল করা হচ্ছে। অথচ ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছে দেওয়ার যে প্রতিশ্রুতি নীতীশ কুমার দিয়েছিলেন তা যে কথার কথা, তা বুঝতে পেরেই মানুষ বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন।”
জেডইউ নেতা ও একই গাড়িতে মুখ্যমন্ত্রীর সফরসঙ্গী শিবানন্দ তিওয়ারি ঘটনার কথা জানিয়ে বলেন, “একটি ঘটনা দিয়ে এই ভাবে বিচার করা ঠিক হবে না। মুখ্যমন্ত্রীর সামনে কোনও বিক্ষোভের ঘটনা ঘটেনি। তবে মুখ্যমন্ত্রী মানুষের ক্ষোভের কথা জানতে পেরে জেলা প্রশাসনকে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন।” বিজেপি নেতা ও রাজ্যের পশুপালন ও মৎস্য মন্ত্রী গিরিরাজ সিংহ বলেন, “আরজেডি-র সমর্থকরা এই কাজ করেছে। বিহার এবং মুখ্যমন্ত্রীর বদনাম করতেই এটা ঘটানো হয়েছে।” |