দেশ জুড়ে কংগ্রেসের বিরুদ্ধে বাড়তে থাকা অসন্তোষকে কাজে লাগিয়ে লোকসভা ভোটে ঘুরে দাঁড়াতে মরিয়া প্রধান বিরোধী দল বিজেপি। একই সঙ্গে কংগ্রেস বিরোধিতাকে কাজে লাগিয়ে দলের ছন্নছাড়া দশাও কাটাতে চাইছেন বিজেপি নেতৃত্ব।
মুম্বইয়ে আগামিকাল থেকে শুরু হতে চলা দু’দিনের জাতীয় কর্মসমিতির বৈঠকের আগে আজ বিজেপির শীর্ষ নেতারা বর্তমান রাজনৈতিক ও আর্থিক পরিস্থিতি পর্যালোচনা করেন। দলীয় নেতৃত্বের বক্তব্য, গোটা দেশে কংগ্রেস বিরোধিতার জমি প্রস্তুত। শিল্প ও কৃষি উৎপাদন, রফতানি, দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারীদের আস্থায়, আর্থিক বৃদ্ধিতে ভাটা পড়েছে। পাশাপাশি, টাকার অবাধ পতন, লাগামছাড়া মূল্যবৃদ্ধি এবং সাম্প্রতিকতম সংযোজন তেলের নজিরবিহীন দামবৃদ্ধিতে নাজেহাল আম-আদমি। এ ছাড়া দুর্নীতির লাগাতার অভিযোগ তো রয়েইছে। পরিস্থিতি এমন যে, গত কাল ইউপিএ-র তৃতীয় বর্ষপূর্তিতে ‘সাফল্য’ খুঁজতে হাতড়াতে হয়েছে মনমোহন সিংহ এবং সনিয়া গাঁধীকে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, করুণানিধির মতো শরিক নেতৃত্বও বর্ষপূর্তি উদ্যাপনে কংগ্রেসের পাশে এসে দাঁড়াননি।
এই পরিস্থিতিতে বিজেপি নেতৃত্ব মনে করছেন, দিল্লির তখ্ত দখল করতে হলে এই কংগ্রেস বিরোধিতার হাওয়াকে আরও তীব্র করে তুলতে হবে। তবে সেই সঙ্গেই নিজেদের ঘরকেও একজোট করতে হবে। পাশাপাশি, জোটের শক্তি বাড়াতে অ-কংগ্রেসি অন্য দলগুলিকে একজোট করে তাদের আন্দোলনের রাশও হাতে রাখতে হবে। দলের এক শীর্ষ নেতার কথায়, “কংগ্রেস দেশ জুড়ে দুর্বল হচ্ছে। কিন্তু বিজেপি সেই ভাবে শক্তিশালী হচ্ছে না। বিজেপিতে নেতৃত্বের সঙ্কট, নেতায়-নেতায় কোন্দল মিটিয়ে কংগ্রেস বিরোধিতার রথে সওয়ার হলেই সাফল্য আসবে।” আজ দলের শীর্ষ নেতাদের বৈঠকের পর বেঙ্কাইয়া নায়ডু বলেন, “দেশে আট বছর শাসন করার পরেও সব দিক থেকে ব্যর্থ মনমোহন সিংহ সরকার। তারা প্রতিশ্রুতিও পালন করেনি, আম-আদমির বিশ্বাসেও আঘাত দিয়েছে। এই সরকারের উপরে মমতারও কোনও ‘মমতা’ নেই, করুণানিধিরও কোনও ‘করুণা’ নেই!”
নিজেদের ‘লক্ষ্যপূরণের’ প্রস্তুতি শুরুও করে দিয়েছে বিজেপি। সভাপতি পদে নিতিন গডকড়ীর মেয়াদ বাড়াতে দলের সংবিধান সংশোধনের আনুষ্ঠানিক প্রক্রিয়া শুরুরও প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে কর্মসমিতির বৈঠকে। গডকড়ীর ব্যাপারে এখনও যাঁদের আপত্তি রয়েছে, তাঁদের ক্ষোভ কমানোরও চেষ্টা হচ্ছে। আবার, সঞ্জয় জোশীকে নিয়ে নরেন্দ্র মোদীর আপত্তির কথা মাথায় রেখে গডকড়ীও একটু সুর নরমের চেষ্টা করছেন। বিজেপি ও সঙ্ঘ নেতৃত্ব চেষ্টা করছেন, মুম্বইয়ের বৈঠকে যাতে মোদী আসেন। প্রসঙ্গত দিল্লিতে গত জাতীয় কর্মসমিতির বৈঠকে গুজরাতের মুখ্যমন্ত্রী আসেননি। যাঁকে নিয়ে মোদীর এত আপত্তি, সেই সঞ্জয় জোশী ইতিমধ্যেই মুম্বই পৌঁছেছেন। বিজেপি সূত্রের মতে, জোশীকে বড় কোনও দায়িত্ব দেওয়া হবে না গডকড়ী এমন একটা প্রতিশ্রুতি দিলে মোদী কাল না এলেও বৈঠকের শেষ দিনে মুম্বই আসতে পারেন। এক নেতার স্বীকারোক্তি, “বিজেপির সঙ্কটের ইতি নেই। ইয়েদুরাপ্পা ইতিমধ্যেই ঘোষণা করেছেন, তিনি মুম্বই আসবেন না। রাজস্থানের সঙ্কট আপাত ভাবে মিটলেও দ্বন্দ্বের চোরাস্রোত বইছে। আবার, যশবন্ত সিন্হাও আসছেন না। এই পরিস্থিতিতে মোদীকে নিয়ে আসার সব রকম চেষ্টা করা হচ্ছে।” |