তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে পাল্টা ‘চাপ’ দিতে এ বার রাষ্ট্রপতি পদের জন্য প্রণব মুখোপাধ্যায়ের নাম নিয়ে কংগ্রেস সভানেত্রী সনিয়া গাঁধীর দ্বারস্থ হতে চান রাজ্যের কংগ্রেস সাংসদরা।
কংগ্রেস এখনও রাষ্ট্রপতি পদে কারও নাম ঘোষণা না করলেও প্রণববাবুর নাম নিয়ে রাজধানীর রাজনীতিতে ‘গুঞ্জন’ চলছে। তার মধ্যেই একটি চ্যানেলে মমতা রাষ্ট্রপতির পদের দৌড়ে প্রণববাবুর নামই তোলেননি। মমতা বরং বলেছেন, লোকসভার স্পিকার মীরা কুমার, পশ্চিমবঙ্গের প্রাক্তন রাজ্যপাল গোপালকৃষ্ণ গাঁধী এবং প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি এ পি জে আব্দুল কালাম তাঁর পছন্দের প্রার্থী। বঙ্গবাসী হিসেবে বাংলার ‘ভূমিপুত্র’ প্রণববাবুকে সমর্থনের প্রসঙ্গ আসায় মমতা তাঁকে ‘বিশ্বপুত্র’ বলেও ‘কটাক্ষ’ করেছেন। রাজ্য কংগ্রেস বিষয়টি ভাল ভাবে নেয়নি। মমতার ওই মন্তব্যের প্রেক্ষিতে তাঁর উপর পাল্টা ‘চাপ’ দিতে (দলের একাংশের মতে, প্রণববাবুর প্রতি তাঁর ‘আনুগত্য’ দেখাতেও) প্রদেশ সভাপতি প্রদীপ ভট্টাচার্য রাজ্য থেকে নির্বাচিত সাংসদদের নিয়ে সনিয়ার দ্বারস্থ হতে চান বলে কংগ্রেস সূত্রের খবর। জুন মাসের আগেই তিনি কংগ্রেস সভানেত্রীর সঙ্গে দেখা করতে চান বলে বুধবার সাংসদদের জানিয়েছেন প্রদীপবাবু।
ঘটনাচক্রে, ৩ জুন রাজ্যের ছ’টি পুরসভার ভোট। দলীয় সাংসদরা ভোট প্রচারে ব্যস্ত। ফলে পুরভোটের আগে তাঁদের পক্ষে যে দিল্লি যাওয়া খানিকটা ‘অসুবিধা’র বলে প্রদীপবাবুকে জানিয়ে দিয়েছেন সাংসদদের একাংশ। প্রসঙ্গত, মঙ্গলবারই সংসদের অধিবেশন শেষ হয়েছে। অধিবেশন চলাকালীন সনিয়ার সঙ্গে দেখা করে প্রণববাবুর জন্য আর্জি জানানো অনেক ‘সুবিধাজনক’ ছিল বলেও সাংসদদের একাংশের অভিমত। এখন সনিয়া কবে সময় দেবেন, তা নিয়ে অনিশ্চয়তা রয়েছে। সাংসদদের মধ্যে দীপা দাশমুন্সি এদিন প্রদেশ দফতরে এসেছিলেন। প্রাথমিক ভাবে তাঁর সঙ্গে আলোচনার পর বিষয়টি নিয়ে প্রদীপবাবু ফোনে কথা বলেন বাকি সাংসদদের সঙ্গে। প্রদেশ সভাপতির (যিনি নিজেও রাজ্যসভার সাংসদ) সঙ্গে আলোচনার পরে দুই সাংসদ আবু হাসেম (ডালু) খান চৌধুরী ও অধীর চৌধুরী বলেন, “দল এখনও কারও নাম ঘোষণা করেনি ঠিকই। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গ থেকে কেউ কখনও প্রধানমন্ত্রী বা রাষ্ট্রপতি হননি। প্রণববাবুকে রাষ্ট্রপতি হিসেবে দেখতে চায় বাঙালি। রাজ্যের এই চাওয়াটাই সনিয়া’জিকে জানাব।” রাজ্য থেকে লোকসভায় প্রণববাবু-সহ মোট ছ’জন সাংসদ রয়েছেন। ডালুবাবু, অধীর ছাড়াও রয়েছেন মুর্শিদাবাদের মান্নান হোসেন, রায়গঞ্জের দীপা দাশমুন্সি এবং উত্তর মালদহ কেন্দ্রের মৌসম বেনজির নূর।
২০০৯-এর লোকসভা ভোটের আগে প্রণববাবু জানিয়েছিলেন, সেটিই তাঁর শেষ ভোটে লড়া। এরপর তিনি আর দাঁড়াতে চান না। তাঁর সেই ইচ্ছাকে ‘মর্যাদা’ দিতেও প্রণববাবুকে রাষ্ট্রপতি করা উচিত বলেই মনে করেন প্রদেশ কংগ্রেসের একাংশ।
মমতার পাশাপাশি তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রী তথা এআইএডিএমকে নেত্রী জয়ললিতা প্রণববাবুর ‘বিরোধিতা’য় ময়দানে নামায় কংগ্রেস শীর্ষ নেতৃত্ব খানিকটা ‘অস্বস্তিতে’। এই পরিস্থিতিতে সনিয়ার কাছে প্রণববাবুর নাম নিয়ে আর্জি জানানোর পাশাপাশি মমতাও যাতে প্রণববাবুকে সমর্থন করেন, সেই আবেদনও করছেন প্রদেশ নেতৃত্ব। প্রদীপবাবুর কথায়, “বাঙালি হিসেবে প্রণববাবুকে মমতা সমর্থন করুন, এটাই অনুরোধ।”
তবে এ দিনই সল্টলেকে ইন্দিরা ভবনের সামনে দলীয় অবস্থান-মঞ্চ থেকে কংগ্রেস নেতাদের একাংশ বলেছেন, রাষ্ট্রপতি পদে প্রণববাবুকে সমর্থন না-করার কথা বলে প্রকারান্তরে মমতা কংগ্রেসকে ‘ব্ল্যাকমেল’ করছেন। অরুণাভ ঘোষ, প্রদীপ ঘোষ মমতাকে ‘হুঁশিয়ারি’ও দিয়েছেন। দীপা বলেছেন, কেন্দ্রের থেকে এখনও আর্থিক প্যাকেজ না-পাওয়ার ‘বদলা’ নিতেই মমতা রাষ্ট্রপতি পদে প্রণববাবুকে সমর্থন করছেন না। |