মণি সুব্বা নেপালি নন, জানাল নেপাল |
নিজস্ব সংবাদদাতা • গুয়াহাটি |
নেপাল সরকার চিঠি দিয়ে জানিয়ে দিল, প্রাক্তন কংগ্রেস সাংসদ তথা ‘লটারি সম্রাট’ মণিকুমার সুব্বা মোটেই নেপালি নাগরিক নন। নাগরিক মণিরাজ লিম্বু। দীর্ঘদিন ধরেই কংগ্রেসের তিন বারের সাংসদ মণিকুমার সুব্বার নাম, বয়স ও নাগরিকত্ব নিয়ে বিতর্ক চলছে। তিন বার লোকসভা ভোটে জেতার পরে ২০০৯ সালে তিনি হেরে যান। ২০০৯ সালের অক্টোবর মাসে সুপ্রিম কোর্টে সিবিআই জানায়, সুব্বা ভারতীয় নন। নেপাল সরকারের এই চিঠির পর সিবিআইকে কিছুটা পিছু হঠতে হল বলে মনে করছে সুব্বার আইনজীবী।
সিবিআই তদন্তে প্রকাশ, ১৯৯৮ সালের লোকসভা নিবার্চনের তথ্য অনুযায়ী সুব্বার জন্ম সাল ১৯৫০। ১৯৯৯ সালে তাঁর জন্মসাল দেওয়া ছিল ১৯৫৮। গত ২০০৪ লোকসভা নির্বাচনে সুব্বা তাঁর বয়স ৫৪ বছর বলে এফিডেভিটে জানান। ২০০৮ সালে তিনি জানিয়েছিলেন, তাঁর বয়স ৫১। পাসপোর্ট অনুযায়ী সুব্বার জন্ম ১৯৫১ সালে। কখনও বলেছেন তাঁর তেজপুরে জন্ম, কখনও শিলিগুড়িতে, কখনও বা দার্জিলিং। সুপ্রিম কোর্টে দেওয়া হলফনামা অনুযায়ী, ১৯৭২ সালে তিনসুকিয়ার গাঁধী বিদ্যালয় থেকে অষ্টম শ্রেণী পাশ করেন তিনি। কিন্তু সিবিআই তদন্তে নেমে দেখে স্কুলটি চালুই হয় ১৯৭৩ সালে।
নেপাল সরকার প্রথমবার চিঠিতে জানিয়েছিল: মণিরাজ লিম্বু পূর্ব নেপালের তাপেলজুং জেলার তামারখোলা গ্রাম পঞ্চায়েত-এর সোমাংখু গ্রামের বাসিন্দা। ১৯৭৯ সাল পর্যন্ত ভারতের ভোটার তালিকায় সুব্বার নাম ছিল না। ১৯৮৫, ১৯৯৩ ও ১৯৯৭ সালে ছিল। প্রমাণ অনুযায়ী, ১৯৭৮-৭৯ সালে লখিমপুরে প্রথম জমি কেনেন সুব্বা। ২০০৮ সালের এপ্রিল মাসে সিবিআই সুপ্রিম কোর্টকে জানায়, নির্বাচন কমিশনে দাখিল করা সুব্বার জন্ম ও অন্যান্য সব পরিচয়পত্র জাল। তবে তারপরেও ২০০৯ সালে লোকসভা ভোটে টিকিট পান তিনি!
২০০৯ সালের জুলাইয়ে সিবিআই সুপ্রিম কোর্টে নতুনভাবে রিপোর্ট পেশ করে। তাতে বলা হয়, সুব্বার জমা দেওয়া জন্মের শংসাপত্র জাল। এ ছাড়া নির্বাচন-সহ নানা সময়ে সুব্বার জমা দেওয়া নানা হলফনামায় জন্মের তারিখ ও স্থান ভিন্ন ভিন্ন। সুপ্রিম কোর্টে জমা দেওয়া একটি হলফনামায় সুব্বা জানান, তাঁর জন্মস্থান দার্জিলিং-এর দাদগ্রাম। অন্য একটি হলফনামায় রয়েছে, তিনি শিলিগুড়িতে ফণীন্দ্রনাথ সরকারের বাড়িতে জন্মেছেন। সিবিআই সাফ জানায়, তদন্তে দেখা গিয়েছে ১৯৫৮ সালের আগে বা পরে, ওই নামের কারও বাড়িতে সুব্বার জন্ম হয়নি। মণিকুমারের নামে ৪৬৮, ৪২০, ৪৭১ ধারায় মামলা রুজু করে সিবিআই। আদালত নেপালের হত্যা মামলার ব্যাপারে ও মণিরাজ লিম্বুর বিষয়ে জানাতে চেয়ে নেপাল সুপ্রিম কোর্টের কাছে রিপোর্ট চেয়ে চিঠি পাঠায়।
নেপালের বিদেশ মন্ত্রক গুয়াহাটির স্পেশ্যাল জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটকে জবাবি চিঠি পাঠিয়ে জানায়, মণিকুমার সুব্বা ও মণিরাজ লিম্বু পৃথক ব্যক্তি। লিম্বু নেপালের অপরাধী। একটি হত্যা মামলায় লিম্বুর যাবজ্জীবন হয়েছিল। তবে নেপাল সুপ্রিম কোর্টের ফুল বেঞ্চের রায়ে ১৯৮২ সালে ছাড়া পায় মণিরাজ। চিঠিতে জানানো হয়, মণিকুমার সুব্বার নামে নেপালে কোনও জমি নেই। |