ইনফোসিসকে রাখার চেষ্টা চলবে, আশ্বাস পার্থর
রাজ্যের এসইজেড আইন বাতিল করলেন মমতা
রাজ্য সরকারের নিজস্ব বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল (এসইজেড) আইন বাতিল করে দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তবে তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থা ইনফোসিসের বিনিয়োগ ধরে রাখতে সরকার সর্বতো চেষ্টা করবে বলে আশ্বাস দিয়েছেন শিল্পমন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়। তাঁর কথায়, “মুখ্যমন্ত্রী আপনাদের চেয়ে তিনশো ভাগ বেশি উদ্বিগ্ন।”
গত বিধানসভা নির্বাচনের ইস্তেহারে তৃণমূলের ঘোষণা ছিল, তারা এসইজেডের বিরোধী। ক্ষমতায় আসার পরেও মুখ্যমন্ত্রী ও শিল্পমন্ত্রী বার বার তা ঘোষণা করেছেন। বুধবার রাজ্য মন্ত্রিসভার শিল্প ও পরিকাঠামো সংক্রান্ত সাব কমিটির বৈঠকে রাজ্যের এসইজেড-আইনটাই তুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। তবে শিল্পমন্ত্রী জানিয়েছেন, রাজ্যে এখন চালু থাকা এসইজেড প্রকল্পগুলোর ক্ষেত্রে নতুন সিদ্ধান্ত কার্যকর হবে না।
পশ্চিমবঙ্গের এসইজেড-আইন তৈরি হয়েছিল ২০০৩-এ, বাম জমানায়। মমতা তখন কেন্দ্রীয় রেলমন্ত্রী। পুরোপুরি রফতানিযোগ্য কোনও প্রকল্পকে মূলত জমি, স্ট্যাম্প ডিউটি-রেজিস্ট্রেশন ফি, ভ্যাট ও বিদ্যুতের ক্ষেত্রে ‘বিশেষ ছাড়’ দিতেই পূর্বতন সরকার আইনটি বানিয়েছিল। এর দু’বছর পরে, ২০০৫-এ কেন্দ্রীয় সরকার এসইজেড-নীতি তৈরি করে। নিয়ম অনুযায়ী, কোনও প্রকল্পকে ‘এসইজেড’ তকমা পেতে হলে সংশ্লিষ্ট রাজ্য সরকারের কাছে প্রস্তাব পেশ করতে হবে। রাজ্য তাতে সম্মতি জানিয়ে চূড়ান্ত ছাড়পত্রের জন্য সেটি দিল্লিকে পাঠাবে। কেন্দ্র অনুমোদন দিলে মিলবে ‘এসইজেড’ তকমা। এই ছাড়পত্রের অর্থ, সংশ্লিষ্ট সংস্থা রাজ্যের কাছ থেকে উক্ত সুবিধাগুলো ছাড়াও কেন্দ্রের থেকে আমদানি-রফতানি শুল্ক, উৎপাদন শুল্ক, বিক্রয় কর, পরিষেবা কর-সহ আরও কিছু ক্ষেত্রে সুবিধা পাবে।
মহাকরণে বুধবার। নিজস্ব চিত্র
নতুন সরকারের আমলে ইনফোসিস’কে ‘এসইজেড’ মর্যাদাদানের প্রশ্নেই রাজ্যের সঙ্গে সংস্থাটির মতপার্থক্যের সূচনা। সরকারি এক মুখপাত্র জানান, বাম আমলে নিউটাউনে তথ্যপ্রযুক্তি প্রকল্প গড়তে যখন জমি নেওয়ার কথা জানায় ইনফোসিস, আগের সরকার তাদের এসইজেড তকমা পেতে ‘সাহায্যের’ প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। নতুন সরকার তা করতে রাজি নয় বলেই সমস্যা দেখা দেয়। যার জেরে ইনফোসিস জানিয়ে দেয়, এসইজেডের সুবিধা না-পেলে তারা প্রকল্প থেকে সরে আসবে।
তা হলে কি পশ্চিমবঙ্গে আর ইনফোসিসের প্রকল্প হবে না?
এ দিন রাজ্যের এসইজেড-আইন বিলুপ্তির ঘোষণার পরে শিল্পমন্ত্রী বলেন, “এ নিয়ে আপনাদের চেয়ে মুখ্যমন্ত্রী তিনশো ভাগ বেশি উদ্বিগ্ন। তবে আমরা আদর্শচ্যুত হব না।” ইনফোসিস’কে এসইজেডের তকমা পেতে সাহায্য না-করার কথা জানালেও পার্থবাবুর দাবি: তথ্যপ্রযুক্তির ওই নামজাদা সংস্থাকে ধরে রাখতে রাজ্য সব রকম চেষ্টা করছে। “রাজ্যের তরফে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী আনন্দ শর্মার কাছে একটি প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। ওঁর সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী ও আমার কথাও হয়েছে। প্রস্তাবটি কেন্দ্র না-মানলেও আমরা ইনফোসিসের জন্য অন্য দরজা খোলা রাখছি। অনেক বিকল্প প্রস্তাব রয়েছে। ইনফোসিস-কর্তাদের বলেছি, কলকাতায় এসে কথা বলুন। আজও ওঁদের সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। নারায়ণমূর্তির সঙ্গেও যোগাযোগ রাখছি।” বলেন পার্থবাবু। রাজ্যের বিকল্প প্রস্তাবগুলো কী?
পার্থবাবুর জবাব, “এটা ‘ট্রেড সিক্রেট’। বলা যাবে না।” তবে এ দিন মন্ত্রিসভার সাব কমিটির বৈঠকে আরও কয়েকটি সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে তিনি জানিয়েছেন। যেমন, অনুমোদিত হয়েছে রাজ্যের নতুন তথ্যপ্রযুক্তি-নীতি। আইটি’র জন্য নতুন অনুদান-প্রকল্প তৈরি করে ১৫ দিনের মধ্যে প্রকাশ করা হবে। আইটিসি ইনফোটেক-কে রাজারহাটে ১৫ একর জমি দেওয়া হচ্ছে। কল্যাণীতে গড়ে তোলা হবে ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব ইনফর্মেশন টেকনোলজি (আইআইআইটি), যে প্রকল্পে সরকারের সঙ্গে যৌথ ভাবে থাকবে কোল ইন্ডিয়া এবং বেসরকারি সংস্থা জেএসডব্লিুউ ও রোলটা। সরকার অধিগৃহীত পাঁচটি চা-বাগানের পুনরুজ্জীবন উদ্যোগের কথা জানিয়ে পার্থবাবু বলেন, কাজটা যৌথ উদ্যোগে করার কথা ভাবা হয়েছে। সংস্থাগুলো বছরে ১৩ কোটি টাকা লোকসান করছে।
পাশাপাশি বিদ্যুৎমন্ত্রী মণীশ গুপ্ত এ দিন জানিয়েছেন, তাপবিদ্যুতের সঙ্গে অচিরাচরিত বিদ্যুতের উৎপাদন বাড়াতে বিশেষ নীতি গ্রহণ করা হয়েছে। তিনি দাবি করেছেন, এই প্রথম রাজ্যে অচিরাচরিত শক্তি সংক্রান্ত সুনির্দিষ্ট নীতি রূপায়িত হল। এতে কী থাকছে?
এ দিন বিদ্যুৎ মন্ত্রী আরও বলেন, পশ্চিমবঙ্গে অচিরাচরিত বিদ্যুতের উৎপাদন এখন ১৯৩ মেগাওয়াট। চলতি অর্থবর্ষের (২০১২-’১৩) মধ্যে তাকে অন্তত ২৬০ মেগাওয়াটে নিয়ে যাওয়ার লক্ষ্যমাত্রা ধার্য করা হয়েছে। কেন্দ্রের নিয়মানুসারে প্রতি রাজ্যে মোট বিদ্যুৎ উৎপাদনের চার ভাগ হতে হবে অচিরাচরিত। অন্যান্য রাজ্যের তুলনায় পশ্চিমবঙ্গ সেই অঙ্কে এখনও অনেকটাই পিছিয়ে রয়েছে। “সরকারি বিদ্যুৎ সংস্থাগুলো তো বটেই, সিইএসসি-র মতো বেসরকারি সংস্থাকেও এ বার এ দিকে বিশেষ নজর দিতে হবে।” এ দিন মন্তব্য করেছেন মণীশবাবু।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.