দুনিয়াকে হাতের মুঠোয় এনে দিয়েছে টেলিভিশন। আর রিমোটের মাধ্যমে সেই টেলিভিশন তথা টিভির নিয়ন্ত্রণ হাতের মুঠোয় এনে দেওয়ার কৃতিত্ব যাঁর, রিমোটের সেই আবিষ্কর্তা ইউজিন পলি মারা গেলেন। বয়স হয়েছিল ৯৬ বছর। ১৯১৫ সালে ইলিনয়ে জন্মগ্রহণ করেন ইউজিন।
|
ইউজিন পলি |
টিভি দেখে না এমন লোক বিরল। আর টিভির এই জনপ্রিয়তার পিছনে সব থেকে বড় ভূমিকা রয়েছে রিমোট কন্ট্রোলের। বড় বড় অফিস থেকে টিভিকে একেবারে গৃহস্থের ঘরে নিয়ে এসেছিল এই দূরনিয়ন্ত্রণ যন্ত্র। চাকরি জীবনের একেবারে শুরুতে একটি কোম্পানিতে ক্যাটালগ বানাতেন ইউজিন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরে কমার্শিয়াল ইঞ্জিনিয়ারিং নিয়ে পড়াশোনা শুরু করেন তিনি। তখন সবে বাজারে এসেছে টেলিভিশন। মাত্র তিনটি চ্যানেল দেখানো হত। কিন্তু প্রতি বার উঠে গিয়ে চ্যানেল বদলানো ছিল ঝকমারি ব্যাপার। তখনই ইউজিনের মাথায় আসে, কেমন হত যদি বসে থেকেই নিজের ইচ্ছে মতো বদলানো যেত চ্যানেল।
যেমন ভাবা তেমনই কাজ। ১৯৫৫ সালে বাজারে এল অনেকটা বন্দুকের মতো দেখতে তারবিহীন ‘ফ্ল্যাশ -ম্যাটিক’। পৃথিবীর প্রথম টিভি রিমোট। আবিষ্কর্তা ইউজিন পলি।
সুস্থ জীবনযাপন করতে চিকিৎসকেরা যতই নিয়মিত হাঁটাচলার পরামর্শ দিক, রিমোট হাতে নিয়ে এক চ্যানেল থেকে অন্য চ্যানেলে পছন্দের অনুষ্ঠান দেখার আরাম খুব সহজে কেই বা ছাড়তে চায়? আর ইউজিনের এই রিমোটই জন্ম দিয়েছিল কোটি কোটি আরামপ্রিয় ‘কাউচ পোট্যাটো’-র।
জেনিথ টিভির সঙ্গে চুক্তির ভিত্তিতে এই ‘ফ্ল্যাশ -ম্যাটিক’ বিক্রি হত। এই রিমোটের মাধ্যমে বদলানো যেত চ্যানেল। কমানো বা বাড়ানো যেত শব্দও। এমনকী, বিজ্ঞাপন পছন্দ না হলে ‘মিউট’ করেও দেওয়া যেত। আর বিশেষ এই ধর্মটির জন্যই সব থেকে জনপ্রিয় হয়েছিল ‘ফ্ল্যাশ -ম্যাটিক’। তবে তখনকার হিসেবে দাম ছিল একটু বেশি। ১৪৯.৯৫ ডলার। এর কিছু ত্রুটিও ছিল। সূর্যের আলোয় বেশি ক্ষণ থাকলেই বিগড়ে যেত রিমোটটি। এই খামতি পূরণ করে ১৯৫৬ সালে আরও উন্নত রিমোট। এটির আবিষ্কর্তাও ইউজিন। আলট্রাসোনিক তরঙ্গের মাধ্যমে কাজ করত এটি। সহজে নষ্ট হত না। শুধু তাই নয়, নিয়ন্ত্রণ করা যেত টিভিতে দেখানো ছবির রংও। আশির দশক পর্যন্ত ইউজিনের আবিষ্কার করা প্রযুক্তিতেই তৈরি হত রিমোট। শুধু রিমোট কন্ট্রোল নয়, ডিভিডি-র প্রাথমিক কাঠামো তৈরির কৃতিত্বও রয়েছে তাঁর ঝুলিতে। ১৯৯৭ সালে প্রযুক্তির বিভিন্ন ক্ষেত্রে অসামান্য অবদানের জন্য এমি পুরস্কার পেয়েছিলেন ইউজিন। |