পাকিস্তানের সাধারণ নাগরিক এবং ব্যবসায়ীদের ভিসা দেওয়ার ক্ষেত্রে উদার হতে রাজি হলেও পাক-সন্ত্রাসবাদীদের শাস্তির দাবিতে সরব হবে নয়াদিল্লি।
আগামিকাল থেকে দু’দিন ইসলামাবাদে স্বরাষ্ট্রসচিব স্তরের বৈঠক হবে। পি চিদম্বরম আশা করছেন, এই বৈঠকেই উদার ভিসা ব্যবস্থা চুক্তি সই হয়ে যাবে। কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা ইতিমধ্যেই চুক্তিতে অনুমোদন দিয়েছে। নতুন ব্যবস্থা চালু হলে দু’দেশই একে অন্যের নাগরিককে পর্যটন ভিসা দেবে। ব্যবসায়ীদের জন্যও আরও সহজে ভিসা দেওয়া হবে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক মনে করছে, নতুন ভিসা ব্যবস্থা দু’দেশের মধ্যে বাণিজ্যের উন্নতিতে সহায়ক হয়ে উঠবে। যা আগামিদিনে গুরুত্বপূর্ণ আস্থাবর্ধক পদক্ষেপ হিসেবে কাজ করবে।
২০০৮ সালের মুম্বই-হামলার পরে দু’দেশের মধ্যে সমস্ত আদানপ্রদান এবং আলোচনা বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। তার পরে গত বছর থিম্পুতে ফের সমস্ত স্তরে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক শুরু করার সিদ্ধান্ত হয়। সেই অনুযায়ী গত বছরের মার্চেই দিল্লিতে স্বরাষ্ট্রসচিবদের বৈঠক বসে। সেখানেই উদার ভিসা ব্যবস্থার বিষয়টি খতিয়ে দেখার সিদ্ধান্ত হয়েছিল। সে বিষয়ে আশানুরূপ অগ্রগতি হলেও, মুম্বই-হামলার মূল ষড়যন্ত্রকারী হাফিজ সইদের বিরুদ্ধে এখনও পাকিস্তান কোনও ব্যবস্থা নেয়নি বলে নয়াদিল্লির তরফে ফের অভিযোগ জানানো হবে। ইসলামাবাদ রওনা হওয়ার আগে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের এক শীর্ষকর্তা বলেন, “২৬/১১-র হামলায় জড়িত তিন সন্ত্রাসবাদীর কণ্ঠস্বরের নমুনা ভারতের হাতে তুলে দেওয়ার প্রতিশ্রুতিও পালন করেনি পাকিস্তান। জাকিউর রহমান লকভি, জারার শাহ ও আবুল আল কামা এখন পাকিস্তানের জেলে বন্দি। কিন্তু ইসলামাবাদ যুক্তি দিচ্ছে, ওই তিনজন নিজেদের কণ্ঠস্বরের নমুনা সাক্ষ্যপ্রমাণ হিসেবে দিতে অস্বীকার করছে।” আজ মন্ত্রকের তরফে এক বিবৃতিতেও বলা হয়েছে, পাক প্রেসিডেন্ট জারদারির সফরেই ভারতের প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ স্পষ্ট করে দেন, দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের অগ্রগতির জন্য পাকিস্তানকে জঙ্গিদমনে ব্যবস্থা নিতে হবে। মুম্বই সন্ত্রাসে জড়িতদের বিচার করতে হবে। এই সফরে এগুলোই ভারতের অগ্রাধিকার।
লস্কর-ই-তইবার প্রতিষ্ঠাতা হাফিজ সইদের পাশাপাশি ২৬/১১-র হামলায় জড়িত পাকিস্তানের দুই সেনা অফিসার, মেজর ইকবাল ও মেজর সমির আলিকে চিহ্নিত করার দাবিও জানাবে ভারত। ওই ঘটনায় জাতীয় তদন্ত সংস্থা (এনআইএ) যে চার্জশিট পেশ করেছে, তাতেও এই দু’জনের নাম রয়েছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের কর্তাদের বক্তব্য, হতে পারে এগুলো ওদের ছদ্মনাম। কিন্তু এদের চিহ্নিত করার দায়িত্ব পাকিস্তানেরই। এ নিয়ে বৈঠকে পাকিস্তানের তরফেও নানা প্রশ্ন উঠতে পারে বলে নয়াদিল্লি মনে করছে। তাই স্বরাষ্ট্রসচিব রাজকুমার সিংহের নেতৃত্বে ১২ সদস্যের প্রতিনিধি দলে এনআইএ এবং সিবিআই-এর প্রধানকেও রাখা হয়েছে। লস্কর-জঙ্গি ডেভিড হেডলি মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা এফবিআই ও এনআইএ-র কাছে ওই দুই পাক সেনা অফিসারের কথা বলেছিল। হেডলির স্বীকারোক্তি অনুযায়ী, হামলার লক্ষ্য চিহ্নিত করতে এই দু’জনই তাকে ভারতে পাঠিয়েছিল।
ব্যবসায়ীর ছদ্মবেশেই ভারতে এসেছিল হেডলি। তারপর থেকেই ব্যবসায়ীদের ভিসা দেওয়ার ক্ষেত্রেও কড়া মনোভাব নিয়েছিল ভারত। কিন্তু আস্থাবর্ধক পদক্ষেপের অঙ্গ হিসেবে এখন আবার তা শিথিল হচ্ছে। ব্যবসার পরিমাণের ভিত্তিতে ব্যবসায়ীদের দু’টি ভাগে ভাগ করা হবে। বড় ব্যবসায়ীদের ক্ষেত্রে এক বছরের জন্য ‘মাল্টিপল-এন্ট্রি’ ভিসা দেওয়া হবে। যাতে দশটি শহরে যাওয়ার অনুমতি মিলবে। তাঁদের স্থানীয় থানায় গিয়ে নাম নথিভুক্ত করাতেও হবে না। অপেক্ষাকৃত ছোট ব্যবসায়ীদের পাঁচটি শহরে যাওয়ার অনুমতি মিলবে। দল বেঁধে বেড়াতে আসা পাকিস্তানি নাগরিকদের জন্য এক মাসের পর্যটন ভিসা দেওয়া হবে। বয়স্ক ও শিশুদের জন্য ওয়াঘা ও আটারি সীমান্তে আসা মাত্র ভিসা দেওয়ার বন্দোবস্ত হবে। সাধারণ নাগরিকদের জন্যও এক ভিসায় তিনটির বদলে দশটি শহরে যাওয়ার অনুমতি দেওয়া হবে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক মনে করছে, পাকিস্তানের তরফে নতুন করে আপত্তি না উঠলে এই সফরেই চুক্তি সই না হওয়ার কোনও কারণ নেই। সে ক্ষেত্রে জুলাইয়ের শেষে দু’দেশের বিদেশমন্ত্রীর বৈঠকের পরেই নতুন ভিসা ব্যবস্থা চালু হয়ে যাবে।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক মনে করছে, পাকিস্তানের স্বরাষ্ট্রসচিব কে এম সিদ্দিকি আকবর সমঝোতা বিস্ফোরণের তদন্তের অগ্রগতি সম্পর্কে জানতে চাইবেন। কারণ ওই ঘটনায় পাকিস্তানি নাগরিকদেরও মৃত্যু হয়েছিল। সেই অনুযায়ী স্বামী অসীমানন্দ-সহ পাঁচজনের বিরুদ্ধে চার্জশিট পেশের কথা জানানো হবে। পাশাপাশি লাহৌর জেলে বন্দি ভারতীয় সর্বজিৎ সিংহের মুক্তির বিষয়েও পাকিস্তানের কাছে দরবার করবে ভারত। |