অর্পিতা মজুমদার • দুর্গাপুর |
মাথার উপরে গনগন করছে সূর্য। বাতাসে আগুনের হলকা।
আবহাওয়া অফিস বলছে, ‘তাপপ্রবাহ’। দুর্গাপুরের দেওয়াল বলছে ‘ভোট’।
পাঁচ রবছর পরে শহর দখলের লড়াই। অতএব গরমে চাঁদি ফাটুক, সানস্ট্রোকই হোক, রেহাই নেই। প্রার্থী থেকে কর্মী সবাইকেই ছুটতে হচ্ছে দোরে-দোরে। কিন্তু লড়াই তো এখনও চালাতে হবে বেশ কিছু দিন। কী করে নিজেকে রাখা যাবে তাজা?
নিদান একটাই, দিনের রুটিনে আনতে হবে বদল। তা হলেই ‘কেল্লা ফতে’। নির্বাচনের কাজও চলবে জোর কদমে, কমবে না চেহারার জেল্লাও।
চিকিৎসকরা বলছেন, ঘুম থেকে উঠে পড়তে হবে ভোর-ভোর। একটু ‘ফ্রি হ্যান্ড’ বা প্রাণায়াম করে নিতে হবে শুরুতেই। এর পরে গ্রিন-টি, সঙ্গে টোস্ট, বিস্কুট বা হালকা খাবার। দিব্যি বেরিয়ে পড়ুন প্রচারের কাজে। ঘণ্টাখানেক পরপর নুন-চিনির জল, ডাবের জল বা গ্লুকোজের জল খেতে ভুললে চলবে না। মাঝে এক বার সময় বের করে হালকা খাবার খেয়ে নেওয়া জরুরি। খালিপেটে থাকা যাবে না মোটেও। |
২ নম্বর জাতীয় সড়কে বিক্ষোভ। বুধবার সকালে তোলা নিজস্ব চিত্র। |
দুপুরের মেনুতে শাক, শুক্তো, পাতলা ডাল, পাঁচমিশেলি তরকারি, পাতলা মাছের ঝোল। ‘রেড মিট’ অর্থাৎ কিনা পাঁঠার মাংসের ঝোল কিংবা চর্বিযুক্ত বড় মাছ একদম বারণ। ডিম শরীর গরম করে, অতএব কম খান। যথাসম্ভব তেলেভাজা খাবার এড়িয়ে চলুন। পোড়ানো, বেকড অথবা সিদ্ধ খাবার খাওয়া বরং ভাল। খাওয়ার পরে সম্ভব হলে আধঘণ্টা গড়িয়ে নেওয়া ভাল। বিশেষ করে প্রার্থীদের। মাথা ঠান্ডা থাকবে, ভাল কাজ করবে!
দুর্গাপুর মহকুমা হাসপাতালের চিকিৎসক শর্মিষ্ঠা দাস জানাচ্ছেন, সূর্যরশ্মির ক্ষতিকর প্রভাব থেকে বাঁচতে বিশেষ সতর্কতা নেওয়া উচিত। রোদে প্রচারে বেরোলে প্রার্থী ও তাঁর অনুগামীদের ফুলহাতা জামা পরা চাই, মাথায় থাকতে হবে টুপি। তবে সিল্ক, মোটা সুতো, ভয়েল, পলিয়েস্টারের রঙিন পোশাক এড়িয়ে চলা উচিত। স্লিভলেস পোশাক এড়িয়ে চলতে হবে মহিলাদের। মাখতে হবে সানস্ক্রিন লোশনও। রোদ থেকে ফিরেই জল খাওয়া মানা। খেতে হবে একটু জিরিয়ে নিয়ে। অতিরিক্ত রাত জাগা বারণ। অতিরিক্ত দুধ-চা, কফি, মদ এড়িয়ে চলতে হবে।
দুর্গাপুরের আর এক চিকিৎসক দেবপ্রসাদ ঘটকের মতে, “ঢিলেঢালা সাদা বা হালকা রঙের পোশাক পড়তে হবে। প্রচুর জল খেতে হবে। বাড়াতে হবে মেনুতে শাক-সব্জির পরিমাণ। সকালে বেরোনোর আগে একগ্লাস ছাতুর সরবত কাজে দেবে।” তিনি আরও জানান, সুস্থ থাকতে নিয়মিত টক দই, শসা, তরমুজ, লাউ, পেঁপে, উচ্ছে খেতে হবে। রোদচশমা ব্যবহার করতে হবে। স্নানের সময় অডিকোলন ব্যবহার করলে তরতাজা লাগবে। সময় পেলে বারবার স্নানও করতে হবে।
এ তো গেল ডাক্তারদের কথা। নেতা-কর্মীরা কী ভাবছেন?
সিপিএমের প্রাক্তন বিধায়ক তথা প্রাক্তন মেয়র পারিষদ বিপ্রেন্দু চক্রবর্তী জানান, শরীর নিয়ে এত ভাবার সময় তাঁর নেই। তবে নিয়ম করে জল খান তিনি। হালকা খাবারই তাঁর বরাবর পছন্দ। একটু-আধটু শরীরচর্চাও করেন। বিধায়ক তথা তৃণমূলের ‘মেয়র পদপ্রার্থী’ অপূর্ব মুখোপাধ্যায়ের অনুগামীদের মতে, ‘মানুষের কাজ’ নিয়ে সর্বদা ব্যস্ত থাকলেও শরীরের দিকেও খেয়াল রাখেন তাঁদের ‘দাদা’। বরাবর সাদা পোশাকই তাঁর পছন্দের। প্রাক্তন কাউন্সিলর তথা কংগ্রেস প্রার্থী বংশীবদন কর্মকার জানান, রোদ চশমা, সাদা টুপি পরেই প্রচারে বেরোনোর চেষ্টা করছেন। রাস্তায় তেষ্টা পেলে কাছেপিঠের বাড়িতে ঢুকে নির্দ্বিধায় জল চেয়ে নিচ্ছেন। গলাও ভিজছে, নেতাকে কাছে পেয়ে ভোটারের মনও!
রোদের কথা মিটল। ভোটের উত্তাপ সামাল দেওয়ার ফর্মুলা আপাতত অজানা... |