অস্ত্র ছেড়ে ওঁরা সাতসকালে মাদুর পেতে বসছেন। কেউবা সুবজ ঘাসেই বসে পড়েছেন। চেনা খাকি পোশাকের বদলে বেশিরভাগেরই পরণে হাতাকাটা গেঞ্জি আর হাফপ্যান্ট। প্রশিক্ষকের দেখানো পদ্ধতি মেনে চলছে যোগাসান চর্চা। নানা ধরণের যোগব্যায় ছাড়া তাঁরা ধ্যানেও তাঁরা সময় দিচ্ছেন। ওঁরা সকলেই কোচবিহার জেলার পুলিশ কর্মী। রাজ্য পুলিশের ডিরেক্টর জেনারেল নপরাজিত মুখোপাধ্যায়ের নির্দেশে জেলার থানাগুলি ও পুলিশ লাইনের কর্মীদের এখন এমনই রুটিনে অভ্যস্ত করার চেষ্টা চলছে। জেলা পুলিশ সুপার প্রণব দাস বলেন, “পুলিশ কর্মীদের যোগাসন অভ্যাস-সহ কয়েকটি ব্যাপার নিয়ে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশ এসেছে। জেলার ১১টি থানার অধিকাংশেই তা শুরু হয়ে গিয়েছে। পুলিশ লাইনেও ইতিমধ্যে একটি যোগাসন শিবির করা হয়েছে।” পুলিশ সূত্রেই জানা গিয়েছে, গত ২৭ এপ্রিল রাজ্যের ডিজি’র স্বাক্ষরিত ওই নির্দেশ নামা বিভিন্ন জেলার পুলিশ সুপারদের পাঠানো হয়। চলতি মে মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে কোচবিহারে ওই নির্দেশ পৌঁছেছে। তারপরেই ১৬ মে জেলা পুলিশের বৈঠকে সমস্ত থানা, পুলিশ লাইনে যোগাসন শুরু করার নির্দেশ দেওয়া হয়। গত রবিবার পুলিশ লাইনে প্রথম যোগাসন শিবিরে ৮৪ জন পুলিশ কর্মী অংশ নেন। জেলার দিনহাটা, মাথাভাঙা, ঘোকসাডাঙা, শীতলখুচি, বক্সিরহাট, হলদিবাড়ি থানাতে শিবির শুরু হয়েছে। জেলার এসডিপিও সীতারাম সিংহ বলেন, “পুলিশ কর্মীরা উৎসাহিত বোধ করছেন। জেলার সর্বত্র পুরোপুরি শিবির দ্রুত শুরু হয়ে যাবে।” পুলিশ লাইনে রবিবার বা ছুটির দিনে যোগাসনের বন্দোবস্ত হয়েছে। থানাগুলিতে প্রতিদিন সকাল বেলা যোগাসন, ধ্যান করছেন পুলিশ কর্মীরা। সাধারণত রাতের ডিউটি যাঁদের থাকছে না তাঁরা পরের দিন সকালে শিবিরে অংশ নেবেন বলে ঠিক হয়েছে। দিনহাটা থানার সামনে ফাঁকা জমিতে মাদুর পেতে যোগাসনের শিবির করছেন পুলিশ কর্মীরা। বক্সীরহাটে আবার তেমন জায়গা নেই বলে লাগোয়া এক বাড়ির ছাদে ওই শিবির করা হচ্ছে। কোচবিহারের কোতয়ালি থানার পুলিশ কর্মীরা পুলিশ লাইনে যোগ দিচ্ছেন। প্রতিদিন সকাল ছয়টা থেকে শিবির শুরু হচ্ছে। রাতের ডিউটি নেই এমন পুলিশ কর্মীরা পালা করে শিবিরে অংশ নিচ্ছেন। গড়ে ৩০ মিনিট করে প্রতিটি শিবিরেই স্থানীয় যোগাসন প্রশিক্ষকের কাছে পুলিশ কর্মীরা প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন। পুলিশ কর্মীদের শারীরিক সুস্থতা ও মানসিক চাপ কমানোর ভাবনা মাথায় রেখেই যোগাসন, প্রাণায়াম, ধ্যানের অভ্যাস করা জরুরি বলে মনে করছেন পুলিশ কর্তারা। আগেও রাজ্যের বিভিন্ন জেলায় বিক্ষিপ্তভাবে ওই ব্যাপারে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। তবে কোচবিহার জেলায় এবারই প্রথম এই ধরণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি, ডিজির নির্দেশিকায় পুলিশ কর্মীদের কাউন্সিলিংয়ের জন্য মনোবিদের পরামর্শ নেওয়ার ব্যবস্থা করা, ভলিবল, দাবা, ক্যারাম প্রভৃতি খেলার চর্চা বাড়ানোর ব্যাপারেও জোর দেওয়া হয়েছে। পুলিশের এক কর্তা জানিয়েছেন, পুলিশের চাকরিতে নানা চাপ থাকে। তার পরে দীর্ঘ দিন ডিউটির জেরে শারীরিক ও মানসিক ধকল সহ্য করতে করতে অনেকেই অসুস্থ হয়ে পড়েন। মনোবিদের পরামর্শ, খেলাধূলোর মধ্যে নিয়োজিত থাকলে এই চাপ কাটানো সহজ হবে। শারীরিক এবং মানসিকভাবে সকলেই চাঙা থাকবেন। কোচবিহারে মনোবিদের কাউন্সিলিং আয়োজনের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। থানাগুলিতে খেলার কিছু সরঞ্জাম পাঠানো হয়েছে। ফুটবল, ক্রিকেট প্রতিযোগিতা আয়োজন করার কথাও ভাবা হচ্ছে। |