স্তর কমেছে, জলার জল ভরসা গ্রামে
ভোর রাতে জল ‘জেগে’ ওঠে কুঁয়োয়। দিনের আলো ফোটার আগে কুঁয়ো থেকে এক বালতি খাবার জল সংগ্রহে হুড়োহুড়ি পড়ে যায় গ্রামের মহিলাদের মধ্যে। বালি মেশা জল কাপড়ে ছেঁকে নিয়ে খেতে হয় তাঁদের। রাজস্থান কিংবা উত্তরপ্রদেশের কোনও শুখা অঞ্চল নয়, এ ছবি দক্ষিণ দিনাজপুরের তপন ব্লকের মালঞ্চা এলাকার পাহাড়পুরের। জলস্তর প্রায় ৮০ ফুট নিচে নেমে যাওয়ায় নলকূপগুলি অকেজো হয়ে পড়েছে। গোটা গ্রামে দুটি কুঁয়ো, আর একটি মাত্র পুকুর প্রায় শুকিয়ে যাওয়া। সেই পুকুরের ঘোলা জলই ব্যবহার করতে হচ্ছে পাহাড়পুর গ্রামের মানুষকে। জলকষ্টে বিপন্ন এলাকার গবাদি পশু। পাশাপাশি একটানা তীব্র দাবদাহ চলতে থাকায় দক্ষিণ দিনাজপুরের তপন ব্লক জুড়ে চলছে জল সংকট। তার মধ্যে মালঞ্চা গ্রাম পঞ্চায়েতের পাহাড়পুরের মত সন্ধ্যাপুকুর, ডাং মালঞ্চা, অর্জুনপুর, অভিরামপুর, হরিবংশীপুর, কাউলি সহ আশপাশের বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে দেখা দিয়েছে পানীয় জলের আকাল। এদিন বালুরঘাটে তাপমাত্রা প্রায় ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসে ঘোরাফেরা করে। দুপুর ১ টা নাগাদ বালুরঘাটে এক পশলা বৃষ্টিতে গরম আরও বাড়িয়ে দেয়। অন্যত্র বৃষ্টির ছিঁটেফোঁটা ছিল না। জেলার খরাপ্রবণ অঞ্চল বলে পরিচিত তপনের ওই এলাকায় সেচ পাম্পও কাজ করছে না। প্রায় ১২০ ঘর আদিবাসী সম্প্রদায়ের মানুষের বাস পাহাড়পুর গ্রামে। এলাকার প্রবীণ ব্রজেন্দ্রনাথ বর্মন বলেন, “জলের অভাবে চাষবাদ বন্ধ হয়ে গিয়েছে। গ্রামে কাজকর্ম নেই। পানীয় জলের চিন্তায় রাতের ঘুম ছুটে গিয়েছে।”
বালুরঘাটের একটি পুকুর থেকে পানীয় জল সংগ্রহ। ছবি: অমিত মোহান্ত।
এলাকার গৃহবধূ যামিনীবালা বর্মন বলেন, “বেলা বাড়তেই কুঁয়োয় জল থাকে না। ভোর রাতে কুঁয়োতে জল জেগে উঠতেই লাইন পড়ে যায়। তাতে পরিস্কার জল মেলে কই?” গৃহবধূ তুলসী বর্মন জানান, গতবছর দুটি গভীর নলকূপ বসানো হলেও ঠিকমত জল ওঠে না। তাই ভরসা একমাত্র ওই পুকুরের জল। গবাদি পশুর সঙ্গে মানুষের স্নান, কাপড় কাচা থেকে রান্না যাবতীয় গৃহস্থালীর কাজ চলতে থাকায় পেটের রোগ দেখা দিচ্ছে। জেলাশাসক দুর্গাদাস গোস্বামী বলেন, “গত শনিবার তপনে জেলাপরিষদের সভাধিপতি, কর্মাধ্যক্ষ, পঞ্চায়েত প্রতিনিধিদের নিয়ে বৈঠক করে জরুরি ভিত্তিতে নলকূপ সংস্কারের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এই খাতে গ্রাম পঞ্চায়েতের হাতে তৃতীয় এবং ত্রয়োদশ আর্থিক কমিশনের টাকা রয়েছে. তবে এলাকা গুলিতে ৭৫ থেকে ৮০ ফিট জলস্তর নীচে নেমে গিয়েছে বলে পিএইচই সমীক্ষা রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে।” এদিন পাহাড়পুরে গিয়ে দেখা যায়, এলাকায় পানীয় জলের জন্য হাহাকার উঠেছে। নলকূপ মেরামতির কোনও উদ্যোগ দেখা যায়নি। এলাকার আরএসপি প্রধান ওসমান গণি বলেন, “নলকূপ সংস্কারের উদ্যোগ চলছে। তবে জলস্তর নীচে নেমে যাওয়ায় সমস্যা দেখা দিয়েছে। তীব্র দাবদাহ থেকে স্বস্তি পেতে ওই একটি মাত্র পুকুরের নীল হয়ে যাওয়া নোংরা জলেই কচিকাচা থেকে ছেলে, বউদের স্নানের একমাত্র ভরসা।” এদিন দেখা যায়, কচিকাচারা পুকুরে গা ডুবিয়ে রয়েছে বালতি করে পুকুর থেকে জল নেওয়া চলছে। পাশেই বালুরঘাটের আরএসপির প্রাক্তন সাংসদ রণেন বর্মনের গ্রাম হরিবংশীপুরে গিয়ে দেখা যায়, অকেজো হয়ে রয়েছে পিএইচইর পানীয় জল প্রকল্প। প্রাক্তন সাংসদ রণেনবাবু বলেন, “মেশিন থেকে পাইপ লাইনের মাধ্যমে এক সময় গ্রামগুলিতে পানীয় জল সরবরাহের চেষ্টা হয়েছিল। কিন্তু পাইপ লাইনে গণ্ডগোলের কারণে প্রকল্পটি অকেজো হয়ে পড়ে।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.